হজরত ফাতেমা (সা.আ.) এর উপাধি এবং উপনাম সমূহ

হজরত মোহাম্মাদ (সা.) এর নব্যুয়ত লাভের পাঁচ বছর পর উম্মুল মোমেনীন হয়রত খাদিজার গৃহ আলোকিত করে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নারী হজরত ফাতেমা যাহরা (সা.আ.) ২০শে জামাদিউস সানি পৃথিবীতে আগমন করেন।

হজরত ফাতেমা (সা.আ.) এর উপাধি এবং উপনাম সমূহ

এস, এ, এ

হজরত মোহাম্মাদ (সা.) এর নব্যুয়ত লাভের পাঁচ বছর পর উম্মুল মোমেনীন হয়রত খাদিজার গৃহ আলোকিত করে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নারী হজরত ফাতেমা যাহরা (সা.আ.) ২০শে জামাদিউস সানি পৃথিবীতে আগমন করেন।হযরত ফাতেমা (সা.আ.) ছিলেন মানুষের ব্যক্তি কিংবা সমাজ জীবন সর্বক্ষেত্রেই অনুকরণীয় আদর্শ ও দৃষ্টান্ত। তিনি ছিলেন একজন আদর্শ মাতা, একজন আদর্শ স্ত্রী বা গৃহিনী এবং একজন আদর্শ সমাজ-সেবিকা। কিন্তু রাসুল (সা.) এর কতিপয় সাহাবি তাঁর জিবনকে দূর্বিসহ করে তুলে। রাসুল (সা.) এর ওফাতের পরে তাঁর দরজায় আগুন জালিয়ে দেয় এবং জ্বলন্ত দরজায় লাথি মেরে তার উপরে ফেলে দেয়। যার ফলে দরজার লোহার কাটি দ্বারা তার পাঁজরের হাড় ভেঙ্গে যায়। আর বিভিন্ন শারিরিক এবং মানসিক কষ্ট নিয়ে রাসুল (সা.) এর দুলালি, হজরত আলি (আ.)এর স্ত্রী এবং বেহেস্তের যুবকদের সর্দারের মাতা হজরত ফাতেমা যাহরা (সা.) ৩ রা জামাদিউস সানি,অ্ন্যমতে ১৩ই জামাদিউল আওয়াল শাহাদত বরণ করেন।

অথচ তিনি ছিলেন এমন এক মহামানবী যার তুলনা কেবল তিনি নিজেই। অতুলনীয় এই নারী কেবল নারী জাতিরই শ্রেষ্ঠ আদর্শ নন, একইসঙ্গে তিনি গোটা মানব জাতিরই শীর্ষস্থানীয় আদর্শ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বিশ্বের অনেকেই এই মহীয়সী নারীর পবিত্র জীবন ও আদর্শ সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না। 

হযরত ফাতেমা (সা) এর মর্যাদা ছিল অনেক উর্ধ্বে। স্বয়ং নবীজী (সা.) ফাতেমাকে সম্মান করতেন। জন্মের পর থেকেই নবীজী তাঁর এই কন্যার সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করে বিশ্বে নারীর মূল্যবোধ এবং তাঁদের অবস্থান যে কতোটা মর্যাদাসম্পন্ন তা বাস্তবে দেখিয়ে গেছেন।

বিভিন্ন গ্রন্থ সমূহে হজরত ফাতেমা (সা.আ.) এর উপাধি এবং উপনাম সমূহ বর্ণিত হয়েছে। হজরত ফাতেমা (সা.আ.) উপাধি সমূহ হচ্ছে নিন্মরূপ:

১- সৈয়দা: ভদ্রমহিলা, নেত্রি।

২-আনিসাতুন হুর: জান্নাতি হুর।

৩- নূরয়িা: সত্যের আলোকবর্তিকা।

৪- হানিয়া: যত্নশীল নারি।

৫- উযরা: কুমারী।

৬- কারিমা: সম্মানিত।

৭- রাহিমা: করুণাময়ী।

৮- শহিদা: শহিদ।

৯- আফিফা: সতী।

১০- কানেআ: স্বল্প তুষ্ট বা প্রত্যাশাকারিণি।

১১- রাশিদা: পরিপূর্ণ নারি।

১২- শারিফা: সম্ভ্রান্ত।

১৩- হাবিবা: মমতাময়ি বা স্নেহময়ি।

১৪- মোহাররামা: মাননীয়।

১৫- সাবেরা: ধৈর্যশিল।

১৬- সালিমা: অপাপবিদ্ধ বা নিষ্পাপ।

১৭- মোকাররামা: মহৎ ও মাননীয়।

১৮- সাফিয়া: সমাদৃতা।

১৯- আলেমা: প্রজ্ঞাবান নারি।

২০- আলিমা: জ্ঞানি নারি।

২১- মাসুমা: নিষ্পাপ নারি।

২২- মাগসুবা: যার অধিকার হরণ করা হয়েছে।

২৩- মাযলুমা: নির্যাতিতা।

২৪- মায়মুনা: ভাগ্যবতি।

২৫- মানসুরা: ঐশি সাহায্য প্রাপ্ত নারি।

২৬- মোহতাসেমা: সম্মানিতা।

২৭- জামিলা: প্রশংসনীয় নারি।

২৮- জালিলা: মহীয়ান।

২৯- মোআযযামা: শ্রদ্ধেয়া।

৩০- হামেলাতুল বালভা বেগায়রি সেকওয়া:সহনশিল ও

৩১- হালিফাতুল ইবাদ ওয়াত তাকওয়া:

৩২- হাবিবাতুল্লাহ: আল্লাহর পছন্দনিয় নারি।

৩৩- বিনতুস সাফওয়া: সমাদৃত কন্যা।

৩৪- রুকনুল হুদা: হেদায়াতের রুকুন।

৩৫- আয়াতুন নাবুওয়া: নবুওয়াতের নিদর্শন।

৩৬- সাফিয়াতুল উসাত: গুনাহকারিদের বা অনুতপ্তদের শেফাআতকারি।

৩৭- উম্মুল খাইর: অনুগ্রহকারীদের মাতা।

৩৮- তোফফাহাতুল জান্নাত: বেহেস্তের আপেল।

৩৯- মোতাহহেরা: মার্জিতা।

৪০- সাইয়েদাতুন নেসা: নারি নেত্রি।

৪১- বিনতুল মোস্তোফা: হজরত মোহাম্মাদ (সা.)এর কন্যা।

৪২- সাফওয়াতুর রাব্বুহা: আল্লাহর নির্বাচিতা নারি।

৪৩- মোওতেনুল হেদায়াত: হেদায়াতের কেন্দ্রবিন্দু।

৪৪- কুররাতুল আয়নুল মোস্তোফা: রাসুল (সা.)এর চোখের জ্যেতি।

৪৫- বাযয়াতুল মোস্তোফা: রাসুল (সা.) এর দেহের অংশ।

৪৬- মাহজাতুল মোস্তোফা: রাসুল (সা.) এর হৃদয়ের অন্তরের শেষ রক্ত বিন্দু।

৪৭- বাকিয়াতুল মোস্তোফা: রাসুল (সা.)এর উত্তসূরি।

৪৮- হাকিমা: প্রজ্ঞাবান নারি।

৪৯- ফাহিমা: বুদ্ধিমতি।

৫০- আকিলা: প্রজ্ঞাময়ী।

৫১- মাহযুনা: দু:খপীড়িতা।

৫২- মাকরুবা: মর্মপীড়িতা।

৫৩- আলিলা: পীড়িতা।

৫৪- আবেদা: ইবাদতকারিণি।

৫৫- যাহেদা: আত্মসংযমি নারি।

৫৬- কাওয়ামা: জাগরি।

৫৭- বাকিয়া: ক্রন্দনকারিণি।

৫৮- বাকিয়াতুন নাবুওয়া: নবুওয়াতের উত্তসূরি।

৫৯- সাওয়ামা: যে নারি অধিক রোজা রাখে।

৬০- আতুফা: স্নেহশিল।

৬১- রাউফা: করুণাময়ি।

৬২- হান্নানা: সমানুভবী, সমব্যথী।

৬৩- বেররা: হিতকারী নারি।

৬৪- শাফিক্বা: সহানুভূতিশীল নারি।

৬৫- এনানা: পিড়িতা।

৬৬- ওয়ালেদাতুস সিবতাইন: রাসুল (সা.) এর দুই নাতির মা।

৬৭- দোহাতুন নাবি: নবির বংশ।

৬৮- নুরুস সামাভি: আকাশ পথের রশ্মি।

৬৯- যোওজাতুল ওয়াসি: রাসুল (সা.) এর ওয়াসির স্ত্রী।

৭০- বাদরুত তামাম: পূর্ণিমার চাঁদ।

৭১- গোররাতুল গাররা।

৭২- দোররাতুল বাইযা: উজ্জ্বল মণি।

৭৩- রুহে আবিহা: হজরত মোহাম্মাদ (সা.) এর অন্তর বা রূহ।

৭৪- ওয়াসেতাতু কাল্লাদাতুল উজুদ: অস্তিত্বের মাঝে মাধ্যেম স্বরূপ।

৭৫- দোরাতুল বাহরুশ শারাফ ওয়াল জুদ: সাগরসমতুল্য মহত্ব এবং বদান্যতা।

৭৬- ওয়ালিউল্লাহ: আল্লাহর ওয়ালি।

৭৭- সেররুল্লাহ: আল্লাহর রহস্য।

৭৮- আমিনাতুল ওয়াহি: ওহির আমানতদার।

৭৯- আয়নুল্লাহ: ঐশিদৃষ্টি।

৮০- মাকিনাতুন ফি আলামিস সামা: স্বর্গীয় পদমর্যাদার অধিকারিণি।

৮১- জামালুল আবা: পিতার সৌন্দর্য।

৮২- শারাফুল আবনা: সন্তানদের গর্ব।

৮৩- দোররাতুল বাহরিল ইলমে ওয়াল কামাল: প্রজ্ঞা এবং পরিপূর্ণতার সাগরের মূল্যবান পাথর।

৮৪- জোহারাতুল ইজ্জা ওয়াল জালাল: মর্যাদাপূর্ণ এবং সম্মানিত মূলবান পাথর।

৮৫- মাজমুআতিল মাসেরিল ইল্লিয়া: সর্বত্তোম স্মৃতির কেন্দ্র বা কারণ।

৮৬- মেশকাতে নূরুল্লাহ: আল্লাহর নূরের চেরাগদান।

৮৭- যোজ্জাজা: বাতিদানের কাঁচ।

৮৮- কাবাতুল আমালে লেআহলিল হাজ্জাতি: অভাবগ্রস্তদের কাবা।

৮৯- লাইলাতুল কদর: লাইলাতুল কদর  (ভাগ্য নির্ধারণের রাত্রি)।

৯০- লাইলাতুল মোবারাকা: বরকতময় রাত্রি।

৯১- ইবনাতু মান সাল্লাত বিহিল মালায়েকা: মালায়েকারা যার পিছনে নামাজ পড়েছে তাঁর কন্যা।

৯২- কারারু কালবে উম্মেহা আল মোআযযামা: মাতার অন্তরের সান্ত্বনা।

৯৩- আলিয়াতুল মাহল: উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন।

৯৪- সেররিল আযামা: মহিমার রহস্য।

৯৫- মাকসুরাতিল যালাআ: পাঁজর ভাঙ্গা।

৯৬- রাযিযাস সাদর: যার বক্ষকে বারবার আঘাতের মাধ্যেমে ভাঙ্গা হয়েছে।

৯৭- মাগসুবাতুল হাক:যা প্রাপ্য অধিকারকে হরণ করা হয়েছে।

৯৮- খাফিয়াল কাবর: যার কবরকে গোপন রাখা হয়েছে।

৯৯- মাজহুলাতুল কাদর:অজানা ভাগ্য।

১০০- মুমতাহিনা: যাকে পরিক্ষা করা হয়েছে।

১০১- আল মাযলুমু যোওজুহা: যার স্বামি হচ্ছে অত্যাচারিত।

১০২- আল মাকতুলু ওয়ালাদুহা: যার সন্তানকে হত্যা করা হয়েছে।

১০৩- কাউসার:অধিক সন্তানের অধিকারি।

১০৪- হানিয়া: মমতাময়ি।

 

হজরত ফাতেমা (সা.আ.) এর উপনাম সমূহ:

১- উম্মুল হাসান।

২- উম্মুল হুসাইন।

৩- উম্মুল মোহসিন।

৪- উম্মুল আয়েম্মা।

৫- উম্মুস সিবতাইন।

৬- উম্মুল কিতাব।

৭- উম্মুল আযহার।

৮- উম্মুল মুমিনিন।

৯- উম্মুল আখইয়ার।

১০- উম্মুল আসমা।

১১- উম্মে আবিহা।

সূত্র:

১- আল মানাকেব, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩৫৭।

২- ফাতেমাতুয যাহরা বাহজাতে কালবে মুস্তোফা, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ২০৩।

৩- আল লোমআতুল বায়যা, পৃষ্ঠা ৫০।

৪- নোখবাতুল বায়ান ফি তিফসিলে সাইয়েদাতিন নেসওয়ান, পৃষ্ঠা ৮৬।

৫- মিযানুল এতেদাল, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ২৩৪।

৬- এহকাকুল হাক্ব, খন্ড ৯, পৃষ্ঠা ১৫২।

 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন