ইমাম হুসাইন (আ.)-এর জীবনী-১০ম পর্ব
ইমাম হুসাইন (আ.)-এর জীবনী-১০ম পর্ব
লেখক: মো. মুনীর হোসেন খান
আমরা যদি আমীরে মুয়াবিয়ার নিজস্ব চিন্তাপ্রসূত যাবতীয় কার্যকলাপ উল্লেখ করি,তাহলে আমাদেরকে অবশ্যই একটা স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনা করতে হবে। তবে পূর্ববর্তী সংখ্যায় আমরা তাঁর ধর্মবহির্ভূত কার্যকলাপের কয়েকটি চিত্র তুলে ধরেছিলাম এবং এ সংখ্যায়ও তাঁর আরো কয়েকটি কর্মকাণ্ডের চিত্র সংক্ষেপে তুলে ধরব। তাঁর সবচেয়ে জঘন্য ভুল পদক্ষেপ ছিল তদীয় পুত্র ফাসিক ইয়াযীদকে যুবরাজ ঘোষণা এবং খেলাফতের জন্য মনোনয়ন দান-যার বিরুদ্ধে ইমাম হুসাইন (আ.) রুখে দাঁড়িয়েছিলেন এবং কারবালায় শহীদ হয়েছিলেন সেই ঐতিহাসিক ভুল পদক্ষেপের বিশ্লেষণ করার জন্য একটি সহায়ক ভূমিকার অবতারণা করা প্রয়োজন। এতৎসংক্রান্ত বিস্তারিত জানতে হলে আল্লামা আমিনী প্রণীত আল গাদীর গ্রন্থ (১০ম খণ্ড) এবং অন্যান্য প্রসিদ্ধ ইতিহাস ও হাদীস গ্রন্থ অধ্যয়ন করা প্রয়োজন। এখানে আমীরে মুয়াবিয়ার কয়েকটি ভুল পদক্ষেপ ও বিদআতের কথা উল্লেখ করা হলো:
১. সফরে নামায কসর না করে পুরো নামায আদায় করার প্রচলন;১
২. ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের নামাযের আগে আযান প্রবর্তন;২
৩. একই সময় দুই বোনকে একত্রে বিবাহ করা বৈধ হবার ফতোয়া প্রদান;৩
৪. হুজর ইবনে আদী,রুশাইদ হাজারী,আমর ইবনে হামিক খুযাঈ এবং মহানবী (সা.)-এর কতিপয় সাহাবীকে হত্যা,যে ব্যাপারে বহু মুসলিম মনীষী তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন;৪
৫. মহানবী (সা.)-এর সুন্নাত ও পরবর্তী খলীফাদের কর্মপদ্ধতির বিপরীতে দুই ঈদের নামায পড়ার আগে খুতবা প্রদান;৫
৬. আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর প্রতি ভক্তি ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করার কারণে হিজায,ইরাক ও মিশরের অনেক অধিবাসীর নাগরিক ভাতা বন্ধ করা এবং শামের অধিবাসী ও নিজের ঘনিষ্ঠ অনুচর এবং নিজ সেনাবাহিনীর অধিনায়ক ও কর্মকর্তাদেরকে বিনা হিসাবে বাইতুল মাল থেকে অর্থ ও সম্পদ প্রদান;৬
৭. বাজেটের ঘাটতি পূরণ এবং নিজের বল্গাহীন ব্যয় মেটানোর জন্য জনগণের সম্পদ জব্দ ও বাজেয়াপ্তকরণ ও বলপূর্বক গ্রহণ;৭
৮. ইসলামের সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে রেশম নির্মিত বস্ত্র পরিধান,স্বর্ণ ও রৌপ্য নির্মিত পাত্র এবং স্বর্ণ ও মণিমুক্তা খচিত অলংকার ব্যবহার;৮
৯. আবু হুরাইরা,সামুরা ইবনে জুন্দুব ও মুগীরাহ্ ইবনে শো’বার মতো বেতনভোগী ও পোষ্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে হযরত আলী ও আহলে বাইতের নিন্দায় এবং নিজের,আবু সুফিয়ান,বনি উমাইয়্যাহ্ এবং অন্যান্য ব্যক্তির প্রশংসায় হাদীস তৈরি (জাল) করা;৯
১০. মসজিদে জুমার নামাযের খুতবায়,ঈদের নামাযের খুতবায় এবং বিভিন্ন সভা-সমাবেশে অশালীন ভাষায় হযরত আলী (আ.)-এর নিন্দা করার নির্দেশ দান;১০
১১. আবদুল্লাহ্ ইবনে হাশিম মিরকাল,আদী ইবনে হাতিম তাঈ,সা’সাআহ ইবনে সাওহান,আবদুল্লাহ্ ইবনে খলীফা তাঈ প্রমুখ ব্যক্তিদের মতো হযরত আলী (আ.)-এর অনুসারীদেরকে নির্বাসন দান,হুমকি ও ভীতি প্রদর্শন,তাদের সহায়-সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণ এবং হযরত আলী ও মহানবী (সা.)-এর আহলে বাইতের অনুসরণ ও সমর্থন করার অপরাধে তাদের বসতবাড়ি ও ক্ষেত-খামার ধ্বংসকরণ,এমনকি আদালতে তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হতো না এবং নাগরিক ভাতা ও অধিকার সম্বলিত নথি থেকে তাদের নাম বাদ দেয়া হয়েছিল। সরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহে তাদের নিয়োগ দান করা হতো না এবং তাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব প্রদান করা হতো না। অর্থাৎ তাদেরকে সর্বোতভাবে সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছিল।১১
ইয়াযীদকে পরবর্তী খলীফা হিসাবে মনোনয়ন দান
যে কারণে আমীরে মুয়াবিয়া ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর প্রতি এতসব কর্মকাণ্ড চালিয়েছিলেন এবং ইমাম হুসাইন এবং তাঁর সঙ্গী-সাথীরা যা রোধ করার জন্য কারবালায় শাহাদাত বরণ করেছিলেন এখন তা আলোচনা করব।
ভয়ানক অপরাধ ও লাম্পট্যের প্রতীক এ ইয়াযীদ-যাকে মুয়াবিয়া মুসলমানদের ওপর কর্তৃত্বশীল করেছিলেন তাকে ভালোভাবে চেনা এবং সেই সাথে কারবালায় হুসাইনী বিপ্লবের গভীরতা উপলব্ধি করার জন্য সংক্ষেপে ইয়াযীদের জীবনের কিছু দিক তুলে ধরা প্রয়োজন।
ইয়াযীদ হিজরতের ২৫ অথবা ২৬তম বর্ষে জন্মগ্রহণ করে। তার মায়ের নাম মাইসূন বিনতে বাজদাল কালবী। জন্মগ্রহণ করার পর ইয়াযীদ বনি কালব গোত্রে নিজ মায়ের আত্মীয়-স্বজন এবং মাতুলদের মাঝে প্রতিপালিত হতে থাকে। বনি কালব গোত্রের আবাসস্থল ছিল বৃহত্তর শামের পল্লী অঞ্চলে। এ গোত্রটি সদ্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার আগে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী ছিল। তাদের মধ্যে কুকুর প্রতিপালন ও কুকুর নিয়ে খেলা এবং মদ্যপান ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল। আর ইয়াযীদও শৈশব থেকে এ দু’টি বিষয়ে তীব্রভাবে আসক্ত হয়ে পড়েছিল। আলায়েলীর ভাষায় ইয়াযীদ আসলে বিশুদ্ধ খ্রিস্টীয় ভাবধারা ও পরিবেশের মধ্যে প্রতিপালিত হয়েছে।১২
ইয়াযীদের মুখমণ্ডল শ্যাম বর্ণের ছিল। তার মুখে বসন্তের দাগ ছিল। সে ছিল স্থূল দেহের অধিকারী ও ঘনচুল বিশিষ্ট। স্বভাব-চরিত্রের দিক থেকে সে ছিল পিতা ও পিতামহের মতো বিশ্বাসঘাতক,কপট ও লম্পট। আলী আল কিন্দী বলেন : “পিতা মুয়াবিয়ার মতোই ইয়াযীদ ছিল নিষ্ঠুর প্রকৃতির। সে ছিল বিশ্বাসঘাতক। যদিও সে রাজনৈতিক কূটচাল ও ধূর্তামির ক্ষেত্রে মুয়াবিয়ার সমকক্ষ ছিল না,কিন্তু তার অস্তিত্বের মাঝে দয়া-মায়া ও ন্যায়পরায়ণতার বিন্দুমাত্র চিহ্ন বিদ্যমান ছিল না। সে জনগণের রক্ত ঝরিয়ে মজা পেত। হত্যা ও নির্যাতন করার মাঝে সে আনন্দ লাভ করত। তার ঘনিষ্ট সহচর ছিল কুকুর ও বানর। আর ওয়ালীদ ইবনে উতবাহ্ (মদীনার শাসনকর্তা) ইয়াযীদের প্রতি বাইয়াত করার জন্য ইমাম হুসাইন (আ.)-কে চাপ দিলে ইমাম এর উত্তরে বলেছিলেন :
إنّ يزيد بن معاوية رجل فاسق شارب للخمر و قاتل النّفس المحرّمة، معلن بالفسق و الفجور و مثلي لا يُبايع مثله
“নিঃসন্দেহে ইয়াযীদ ইবনে মুয়াবিয়া ফাসিক,সম্মানিত প্রাণের হত্যাকারী,প্রকাশ্যে দুর্নীতেতে লিপ্ত। তাই আমার মতো ব্যক্তি তার মতো ব্যক্তির বাইয়াত করতে পারে না।”১৩
শিকারে অভ্যস্ত
ইয়াযীদ দারুণভাবে শিকারে আসক্ত ছিল। সে তার অধিকাংশ সময় এ কাজে ব্যয় করত। তারিখে ফাখরীর বর্ণনামতে ইয়াযীদ তীব্রভাবে শিকারে আসক্ত ছিল। আর এটি ছিল তার অন্যতম ক্রীড়া ও আমোদ-প্রমোদ। সে তার শিকারী কুকুরগুলোর গলায় ও পায়ে সোনার জিনিস পরিয়ে দিত এবং স্বর্ণখচিত কাপড় দিয়ে ঐ কুকুরগুলোকে আবৃত করত। সে প্রতিটি কুকুরের জন্য একজন করে দাস নিযুক্ত করেছিল।১৪
ইয়াযীদের বানরপ্রীতি
সকল ঐতিহাসিক লিখেছেন,বানর পোষার ব্যাপারে ইয়াযীদের তীব্র আগ্রহ ছিল। তার একটা বিশেষ বানর ছিল যার নাম রেখেছিল ‘আবু কাইস’। সে যখনই মদপান করত তখনই মদপাত্রের অবশিষ্ট অংশ ঐ বানরটিকে পান করাত এবং বলত : “এ হচ্ছে বনি ইসরাইলের এক গণ্যমান্য ব্যক্তি যে পাপের কারণে বানরে রূপান্তরিত হয়েছে।”কখনো কখনো সে ঐ বানরটিকে তার বুনো গাধার ওপর চড়িয়ে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় সেটিকে অংশগ্রহণ করাত। একবার ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় বানরটিকে অংশগ্রহণ করালে প্রবল ঝড়ো বাতাসের ধাক্কায় অশ্ব পৃষ্ঠ থেকে পড়ে তা মরে যায়। এতে ইয়াযীদ খুব মর্মাহত হলো। তার নির্দেশে ঐ বানরটিকে কাফন পড়িয়ে দাফন করা হয়। আর সে নিজেও ঐ বানরটির জন্য শোক প্রকাশ করে শোকগাথা রচনা করেছিল এবং শামের অধিবাসীরা তার নির্দেশে তাকে দলে দলে সান্ত্বনা জানাতে এসেছিল।
ইয়াযীদ সব সময় মাতাল থাকত
এ বিষয়টি ইতিহাস ও রেওয়ায়েতসমূহে নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত যে,ইয়াযীদের অন্যতম প্রধান চারিত্রিক দোষ হচ্ছে তার সার্বক্ষণিক মাতাল থাকা। মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপানই তার মৃত্যুর কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বর্ণিত আছে যে,কোন ব্যক্তিই স্বাভাবিক অবস্থায় ইয়াযীদের সাক্ষাৎ পায় নি। যখনই কেউ তাকে দেখেছে,তখন তাকে মাতাল অবস্থায় দেখেছে। ইমাম হুসাইন (আ.)-এর শাহাদাতের পর আবদুল্লাহ্ ইবনে হানযালাহ্ শামে গিয়েছিলেন এবং মদীনায় ফিরে এসে তিনি বনি উমাইয়্যার খিলাফত ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন। তখন তিনি মদীনার জনগণকে বলেছিলেন :
و الله ما خرجنا على يزيد حتّى خفنا أن نرمى بالحجارة من السّماء إنّه رجل ينكح الأمهات و البنات و الأخوات و يشرب الخمر و يدع الصّلاة، و الله لو لم يكن معي أحد من النّاس لأبليت لله فيه بلاء حسنا...
“মহান আল্লাহর শপথ,আকাশ থেকে আমাদের ওপর প্রস্তর বর্ষণের আশংকা না করা পর্যন্ত আমরা ইয়াযীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করি নি। কারণ সে এমন এক লম্পট ব্যক্তি যে মা,কন্যা ও ভগ্নির সাথে ব্যভিচার করে,মদ্যপান করে এবং নামায ত্যাগ করে। মহান আল্লাহর শপথ,জনগণের মধ্য থেকে আমার সাথে যদি কেউ না-ও থাকে তাহলে আমি একাই মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে এ আসমানী পরীক্ষা হাসিমুখে বরণ করে নেব এবং একাই ইয়াযীদের বিরুদ্ধে লড়াই করব।”১৫
আবদুল্লাহর সঙ্গী-সাথীরাও বলতেন :
قدمنا من عند رجل ليس له دين يشرب الخمر و يعزف بالطّنابير و يلعب بالكلاب
“আমরা এমন এক লোকের কাছ থেকে আসছি যার কোন ধর্ম নেই,সে মদ্যপান করে,তাম্বুরা বাজায় (গান বাদ্য করে) এবং কুকুর নিয়ে খেলা করে।”
মুনযির বিন যুবাইর ইয়াযীদের ব্যাপারে বলেছেন :
و الله إنّه ليشرب الخمر، والله إنّه ليسكر حتّى يدع الصّلاة
“মহান আল্লাহর শপথ,সে মদ্যপান করে;মহান আল্লাহর শপথ,সে নিঃসন্দেহে এতটা মাতাল থাকে যে,নামাযও ত্যাগ করে।”১৬
আবু উমর ইবনে হাফ্স ইয়াযীদের ব্যাপারে বলেছেন :
و الله رأيت يزيد بن معاوية يترك الصّلاة مسكرا
“আল্লাহর শপথ,আমি ইয়াযীদ ইবনে মুয়াবিয়াকে মাতাল অবস্থায় নামায ত্যাগ করতে দেখেছি।”১৭
এ কুফরী কবিতাটিও ইয়াযীদ কর্তৃক রচিত যাতে মদকে সূর্যের সাথে তুলনা করা হয়েছে। সে মদের প্রশংসা করে এ কবিতায় বলেছে :
شميسة كرم برجها قعر دنّها و مشرقها السّاقي و مغربُها فمي
إذا أنزلت من دنّها في زجاجة حكت نفرا بين الحطيم و زمزم
فإن حرمت يوما على دين أحمد فخذها على دين المسيح بن مريم
“আমার সূর্য দ্রাক্ষা হতে;আর সৌর পথের চিহ্ন হচ্ছে মদ পাত্রের তলানী। এর উদয়স্থল হচ্ছে সাকী (মদ পরিবেশনকারী) এবং এর অস্তস্থল হচ্ছে আমার ঠোঁট। যখন পাত্র থেকে পেয়ালায় মদ ঢালা হয় তখন এর কলকল ধ্বনি ও ফেনার উঠানামা যেন ঐ সব হাজীদের কলরব সদৃশ যারা হাতীম (পবিত্র কাবার প্রাচীর) ও যমযম কূপের মাঝখানে প্রার্থনায় রত। যদি কোন দিন আহমাদের ধর্মে মদ হারাম হয়ে থাকে,তাহলে মাসীহ্ ইবনে মারিয়ামের ধর্মের ভিত্তিতে মদ্যপান কর।”১৮
আল্লামা মাসউদী মুরুজুয্ যাহাব গ্রন্থে (২য় খণ্ড,পৃ. ৯৫) বলেছেন : “আর ইয়াযীদকে ‘মদ্যপ ইয়াযীদ’বলা হতো।”
আগানী গ্রন্থে আবুল ফারাজ ইস্পাহানী বলেন : “ইয়াযীদের সঙ্গীদের মধ্যে খ্রিস্টান কবি আখতালও ছিল,যে সর্বক্ষণ ইয়াযীদকে সঙ্গ দিত। ইয়াযীদ ও আখতাল একসাথে মদ্যপান করত এবং গান-বাদ্য শুনত। আর যখন ইয়াযীদ কোন সফরে বের হতো তখন সে আখতালকে নিজের সাথে নিয়ে যেত। ইয়াযীদের মৃত্যুর পরে আবদুল মালেক ইবনে মারওয়ান যখন খলীফা হয় তখন সে এই আখতালকে নিজের কাছে ডেকে পাঠায় এবং সেও তার (খলীফার) ঘনিষ্ঠ সহচর ও সভাসদে পরিণত হয়েছিল যে,সে বিনা অনুমতিতে আবদুল মালেকের দরবারে প্রবেশ করত। সে খায নির্মিত আলখাল্লা পরিধান করত এবং গলায় থাকত সোনার হার। তার দাঁড়ি বেয়ে মদ টপটপ করে ঝরতে থাকত।”১৯
ইয়াযীদের কণ্ঠে কুফরী উক্তি
আল্লামা মাসউদী মুরুজুয্ যাহাব গ্রন্থে (২য় খণ্ড,পৃ,৯৫) লিখেছেন : “আবদুল্লাহ্ ইবনে যুবাইর যখন মক্কায় ইয়াযীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন তখন ইয়াযীদ তাঁকে দমন করার জন্য একটি সেনাবাহিনী মক্কায় প্রেরণ করে এবং তার উদ্দেশ্যে নিম্নোক্ত দু’টি পঙ্ক্তি রচনা করে :
أدع إلهك في السّماء فإنّني أدعو عليك رجال عكّ و أشعرا
“তুমি তোমার উপাস্যকে ডাক যিনি আসমানে আছেন। আর আমি ডাকি তোমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আক ও আশআর গোত্রের যোদ্ধাদের।”
ইমাম হুসাইন (আ.)-এর শাহাদাতের পর ইবনে যুবাইরের কাব্যে ইয়াযীদ থেকে উদ্ধৃত নিম্নোক্ত পঙ্ক্তিগুলো খ্যাতি লাভ করেছে। ইয়াযীদ এসব পঙ্ক্তিতে বলেছে :
ليت أشياخي ببدر شهدوا جزع الخزرج من وقع الأسل
لأهلّوا و استهلّوا فرحا ثمّ قالوا يا يزيد لا تشل
قد قتلنا القدّ من أشياخهم و عدلناه ببدر فاعتدل
لعبت هاشم بالملك فلا خبر جاء و لا وحي نزل
لست من خندف إن لم أنتقم من بني أحمد ما كان فعل
“বদর প্রান্তরে নিহত আমার পূর্ব পুরুষরা যদি দেখতে পেত
মস্তকসমূহ দেহচ্যুত হচ্ছে দেখে খাযরাজ গোত্রের শোক ও বিলাপ,
তাহলে তারা আনন্দে ফেটে পড়ত।
এরপর তারা বলত : হে ইয়াযীদ! পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ো না।
আমরা তাদের পূর্বপুরুষদের বংশধর বৎ বৃক্ষকে (হুসাইন) বধ করেছি।
আমরা বদর যুদ্ধের প্রতিশোধ গ্রহণ করেছি,তাই এ প্রতিশোধ গ্রহণ হয়েছে ন্যায়সংগত!!
বনি হাশিম রাজ-রাজত্ব নিয়ে করেছে খেলা
না (অদৃশ্য জগত থেকে) এসেছে কোন বার্তা,না অবতীর্ণ হয়েছে কোন ওহী
যদি আমি না নেই প্রতিশোধ আহমাদের বংশধরদের থেকে
তার কৃতকর্মের জন্য,তাহলে তো আমি নই খান্দাফের বংশধর।”
(চলবে)
তথ্যসূত্র :
১. আল গাদীর,১০ম খণ্ড,পৃ. ১৯০।
২. আল গাদীর,১০ম খণ্ড,পৃ. ১৯১।
৩. আল গাদীর,১০ম খণ্ড,পৃ. ১৯৯;আদ দুররুল মানসুর,২য় খণ্ড,পৃ. ১৩৭।
৪. সাইয়্যেদ হাশিম রাসূলী মাহাল্লাতী প্রণীত ইমাম হাসান (আ.)-এর জীবনী,২য় খণ্ড।
৫. আল গাদীর,১০ম খণ্ড,পৃ. ২১১।
৬. হায়াতুল ইমাম আল হুসাইন,২য় খণ্ড,১২৮-১৩৩।
৭. প্রাগুক্ত,পৃ. ১২৮-১৩৩।
৮. আল গাদীর,১০ম খণ্ড,পৃ. ৩১৫;হায়াতুল ইমাম আল হুসাইন,২য় খণ্ড,পৃ. ১৪৪।
৯. যিন্দাগানীয়ে ইমাম হাসান,২য় খণ্ড,পৃ. ১৭৮-১৮২;বাকির শরীফ প্রণীত হায়াতুল ইমাম আল হুসাইন (আ.),২য় খণ্ড,পৃ. ১৫৪-১৫৮।
১০. সাইয়্যেদ হাশিম রাসূলী মাহাল্লাতী প্রণীত যিন্দাগানীয়ে ইমাম হাসান,৭ম অধ্যায়।
১১. প্রাগুক্ত।
১২. হায়াতুল ইমাম আল হুসাইন,২য় খণ্ড,পৃ. ১৮০।
১৩. হাশিম মারূফ প্রণীত সীরাতুল আয়িম্মাতিল ইসনাই আশার (১২ ইমামের সীরাত),পৃ. ৪১;হায়াতুল ইমাম আল হুসাইন,২য় খণ্ড,পৃ. ২৫৫।
১৪. তারীখে ফাখরীর অনুবাদ,পৃ. ৭২।
১৫.তারীখে ইবনে আসাকির,৭ম খণ্ড,পৃ. ৩৭২;আল্লামা সুয়ূতী প্রণীত তারিখুল খোলাফা,পৃ. ৮১।
১৬. আল বেদায়াহ্ ওয়ান নেহায়াহ্,৮ম খণ্ড,পৃ. ২১৬;ইবনে আসীর প্রণীত আল কামিল ফিত তারিখ,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ৪৫।
১৭. আল বেদায়াহ্ ওয়ান নেহায়াহ্,৮ম খণ্ড,পৃ. ২১৬;ইবনে আসীর প্রণীত আল কামিল ফিত তারীখ,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ৪৫।
১৮. তাতিম্মাতুল মুনতাহা,পৃ. ৪৩।
১৯. আগানী,৭ম খণ্ড,পৃ,১৭০।
(সূত্র: জ্যোতি পত্রিকা)
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন