মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা প্রচণ্ড হুমকির মুখে
মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা প্রচণ্ড হুমকির মুখে
তেলআবিব ও রিয়াদ ঐক্যবদ্ধভাবে এ অঞ্চলে ইরানের প্রভাব ঠেকানোর চেষ্টা করছে। ইসরাইলের ন্যাশনাল নিউজ ওয়েব সাইটের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলের একটি উচ্চপদস্থ প্রতিনিধি দল কয়েক সপ্তাহ আগে সৌদি আরব সফর করেছে। ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের পরমাণু সমঝোতা হওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ক্রমবর্ধমান প্রভাব বিস্তারে ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে দখলদার ইসরাইল ও সৌদি আরব।
ইসরাইলের যুদ্ধমন্ত্রী মুশে ইয়ালোন গত ফেব্রুয়ারিতে মিউনিখে অনুষ্ঠিত নিরাপত্তা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বলেছিলেন, ইসরাইল বর্তমানে পারস্য উপসাগরীয় আরব দেশ বিশেষ করে সৌদি আরবের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সৌদি আরব এবং দখলদার ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও সহযোগিতা আরব দেশগুলোর নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠেছে যদিও সৌদি কর্মকর্তারা ইসরাইলের সঙ্গে সহযোগিতার পক্ষে নানা যুক্তি দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন।
সৌদি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফ তিউনিশিয়ায় অনুষ্ঠিত আরব লীগের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে বলেছেন, আমরা ভেতরে ও বাইরে থেকে নানান ধরণের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন যার চূড়ান্ত লক্ষ্য আরব সরকারগুলোর ক্ষমতা নড়বড়ে করে দেয়া ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করা। তিনি বিরাজমান এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার আহবান জানিয়ে বলেছেন, আরব সরকারগুলোর কাঁধে এখন অনেক বড় দায়িত্ব রয়েছে।
বাস্তবতা হচ্ছে, সৌদি সরকার আরব জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্মক পদক্ষেপ নিয়েছে এবং এমনকি তারা আরব জাতীয়তাবাদেও বিশ্বাসী নয়। সম্প্রতি এর বড় উদাহরণ হচ্ছে লেবাননের সেনাবাহিনীকে দেয়া অর্থ সাহায্য বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আয যুবায়ের কিছুদিন আগে সিএনএন টিভি চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাতকারে লেবাননের হিজবুল্লাহকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ইরানই হিজবুল্লাহকে তৈরি করেছে।
সৌদি কর্মকর্তারা বলছেন, কথিত আরব সমাজ থেকে লেবাননের বেরিয়ে যাওয়ার জবাব হিসেবে বৈরুতের বিরুদ্ধে এ অবস্থান নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া, লেবানন ইরান ইস্যুতে প্রতিটি ক্ষেত্রে সৌদি নীতির বিরোধিতা করছে-এটাও সৌদি আরবের ক্ষোভের অন্যতম কারণ। রাজতন্ত্র শাসিত আরব দেশগুলো ইরানের বিরুদ্ধে যে প্রস্তাব উত্থাপন করেছিল লেবানন তার বিরোধিতা করায় সৌদি আরব বৈরুতের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে নান বক্তব্য বিবৃতি দিচ্ছে।
বাস্তবতা হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান স্পর্শকাতর পরিস্থিতিতে সৌদি আরব কখনই আরব দেশগুলোর পাশে থাকেনি বরং মুসলিম ঐক্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আরব দেশগুলোর জনগণের স্বার্থ রক্ষা করার লক্ষ্য নিয়েই আরবলীগ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। কিন্তু সৌদি আরবের বর্তমান নীতি আরবসহ সারা বিশ্বের মানুষের স্বার্থের পরিপন্থী। ১৯৬৭ এবং ১৯৭৩ সালে আরব ইসরাইল যুদ্ধেও সৌদি আরব কোনো সহযোগিতা করেনি। এমনকি আরব নেতারা নিজেদের জনগণের স্বার্থ রক্ষার বিষয়টিও অনুধাবন করে না থাকতো আঞ্চলিক স্বার্থ। সৌদি কর্মকর্তারা গত তিন দশকে বহু অপকর্মের প্রতি সমর্থন যুগিয়েছেন। যেমন ইরানের বিরুদ্ধে ইরাকের সাবেক স্বৈরশাসক সাদ্দামের চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধে সৌদি সমর্থনের কথা উল্লেখ করা যায়। অথচ সাদ্দাম ছিল সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের জন্য বিরাট হুমকি। ইরানে আগ্রাসন চালানোর পর সাদ্দাম কুয়েতেও হামলা চালায়।
অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, পারস্য উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ ও আরবলীগে সৌদি আরবের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে এবং এসব জোট বর্তমানে দখলদার ইসরাইলের স্বার্থ রক্ষার হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন