সৌদি আরবের সহিংসতাকামী নীতির ভরাডুবি

সৌদি আরবের সহিংসতাকামী নীতির ভরাডুবি

সৌদি আরব, রবার্ট ফিস্ক, ব্রিটেন, রিয়াদ, সিরিয়া, ইয়েমেন,

ব্রিটেনের খ্যাতিমান বিশ্লেষক রবার্ট ফিস্ক ডেইলি ইন্ডিপেন্ডেন্টের সর্বশেষ সংখ্যায় বিগত এক বছরে সৌদি রাজাদের অবস্থান ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে লিখেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ করে সিরিয়া, ইয়েমেন এবং ইরাকে সৌদি রাজারা একই লক্ষ্যে তৎপর সন্ত্রাসী গোষ্ঠিগুলোর পেছনে যে বিশাল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছে তাতে সৌদিআরবের কোনো লক্ষ্য অর্জিত তো হয়ই নি উল্টো বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রিয়াদের অবস্থান দুর্বল হয়েছে।

রবার্ট ফিস্ক সিরিয়ায় সৌদি সেনা পাঠানোর চিন্তাকে রিয়াদের সর্বশেষ এবং সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা বলে মন্তব্য করে বলেছেন, সবাই যখন সিরিয়া সংকট নিরসনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক উপায় খুঁজে বেড়াচ্ছে সে সময় সৌদি আরব সিরিয়ায় স্থলবাহিনী পাঠানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। সৌদি আরবের এই আচরণে বিশ্বসমাজ বিক্ষুব্ধ এবং বিস্মিত হয়েছে।

ইয়েমেন এবং সৌদি আরবে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত উইলিয়ম রোভও তাঁর এক বক্তৃতায় বলেছেন, বর্তমান সৌদি কর্মকর্তাদের আচরণ তাদের পূর্বেকার কর্মকর্তাদের তুলনায় অনেক পাল্টে গেছে। রাজা সালমান এবং তাঁর ছেলে মুহাম্মাদ বিন সালমানের নেতৃত্বাধীন সৌদি আরবের আগ্রাসী কর্মকাণ্ড মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে তাদের রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক এবং সামরিক অবস্থানকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। মার্কিন এই সাবেক কূটনীতিক আরও বলেন সিরিয়া এবং ইয়েমেনে সৌদি আরবের সামরিক কৌশল লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। সেইসঙ্গে সিরিয়ায় স্থলবাহিনী পাঠানোর সম্ভাব্য সিদ্ধান্তও মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি নীতির ব্যর্থতারই প্রমাণ।

সৌদি আরব সিরিয়ায় ক্ষমতায় পরিবর্তন আনার জন্য সামরিক উপায়ের কথা ভাবছে,অথচ ইয়েমেনে তাদের সামরিক হস্তক্ষেপ বিগত এক বছরেও কোনো ফল বয়ে আনতে পারে নি। অপরদিকে ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের ব্যাপক গণহত্যা চালানোর ঘটনায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।

বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা যায় সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট ইয়েমেনের পদচ্যুত প্রেসিডিন্টের সমর্থনে সেদেশে হামলা চালানো শুরু করেছে। এর ফলে সেই শুরু থেকেই ইয়েমেনের অভ্যন্তরে নিরাপত্তাহীনতা ও অস্থিতিশীলতা বেড়ে গেছে। এমনকি বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠি ইয়েমেনের নাজুক পরিস্থিতির সুযোগে সেদেশের বিভিন্ন শহরের ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।

সিরিয়া এবং ইয়েমেনে সৌদি হস্তক্ষেপ ছাড়াও ইরাকেও রিয়াদের পৃষ্ঠপোষকতায় যেসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আগ্রাসন চালিয়েছে তারাও ব্যর্থ হয়েছে। এটিও মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি নীতির ব্যর্থতায় আরো একটি সংযোজন।

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আগ্রাসন বৃদ্ধিতে সৌদি সরকার ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। বিশেষ করে তাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে, নজিরবিহীন বাজেট ঘাটতির মুখে পড়েছে এবং সবচেয়ে বড়ো ক্ষতি হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সৌদি আরবের গ্রহণযোগ্যতায় ধস নেমেছে।

প্রকৃতপক্ষে সৌদি রাজতন্ত্র গত কয়েক দশক ধরে ব্যাপক চেষ্টা চালিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে আরবদের মোড়লের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে। কিন্তু তাদের আচরণে ফল হয়েছে ঠিক উল্টো।

 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন