হাদিসে আরাফা দিবসের ফযিলত

আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের জন্য এমন কিছু দিন বা স্থানকে বিশেষভাবে ফযিলতপূর্ণ করেছেন যাতে বান্দারা নিজেদেরকে গুনাহমুক্ত করতে পারে। এ রকম একটি দিন হলো যিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখ ইয়াউমে আরাফা-আরাফার দিন।

হাদীসের আলোকে আরাফা দিবসের ফযিলত

এস, ,

 

আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের জন্য এমন কিছু দিন বা স্থানকে বিশেষভাবে ফযিলতপূর্ণ করেছেন যেন বান্দারা গুনাহ হতে নিজেদেরকে মুক্ত করতে পারে। আর এ রকমই একটি দিন হলো জিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখ ইয়াউমে আরাফা আরাফার দিন। অনুরূপভাবে তেমনই একটি স্থান হলো আরাফার ময়দান। আরাফার ময়দানে অবস্থান করাটা হজ্ব পালনকারীদের জন্য অবশ্য পালনীয় বিষয়গুলোর মধ্যে একটি। আরাফার ময়দান ক্ষমা পাওয়ার ময়দান হিসেবেও পরিচিত। হাদীসের আলোকে আরাফা দিবসের ফযিলত নিম্নে আলোচনা করা হলো।

রাসুল (সা.) বলেছেন: মহান আল্লাহ তায়ালা আরাফাত দিবসের ন্যায় অন্য কোন দিবসে এত অধিক জাহান্নামের আগুন থেকে তার বান্দাদেরকে মুক্ত করেন না। গুনাহসমুহের মধ্যে অনেক গুনাহকে আরাফাত দিবসের কারণে ক্ষমা করে দেয়া হয়। (মাফতিহুল জেনান, আমালে রুযে আরাফা)

রাসুল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, আরাফাতে অবস্থান করার পরেও এমন কোন হাজি আছে যার গুনাহ সমুহকে ক্ষমা করা হয় না? রাসুল (সা.) বলেন: তাদের গুনাহকে ক্ষমা করা হবে না, যারা আরাফাতে অবস্থান করে অথচ মনে করে যে তাদের গুনাহকে ক্ষমা করা হবে না। (সুনানে কুবরা, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ১৯২)

ইমাম আলী (আ.) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন: বাইতুল হারামের  বাইরের অংশ হচ্ছে আরাফাত। সুতরাং আল্লাহর মেহমানের উচিত হবে সে যেন তাঁর দ্বারে এমনভাবে মিনতি বা বিনতি করবে যেন সে বাইতুল হারামে প্রবেশের যোগ্যতা অর্জন করতে পারে। (উসুলে কাফি, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ২২৪)

ইমাম সাজ্জাদ (আ.) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন: আরাফার দিনে আসরের সময় এবং ঈদুল আযহার যোহরের সময় যখন হাজিরা মিনাতে অবস্থান করে। তখন মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর ফেরেস্তাদের কাছে গৌরবের সাথে বলেন: হে আমার ফেরেস্তারা! তোমরা দেখ এরা হচ্ছে আমার প্রকৃত বান্দা যারা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক কষ্ট সহ্য করে এখানে এসেছে এবং সকল  আরাম আয়েশকে ত্যাগ করে আরাফাতের মরু এলাকাতে অবস্থান করছে এবং নিজেদের অসহায়ত্বকে প্রকাশ করছে। (সাহাবায়ে হাজ, পৃষ্ঠা ৪১৫, উসুলে কাফি, খন্ড৪, পৃষ্ঠা ২২৪)

ইমাম সাজ্জাদ (আ.) আরাফাতের দিবসে এক ফকিরের ভিক্ষা চাওয়ার আওয়াজ শুনতে পান। তখন তিনি তাকে বলেন: তুমি এমন একটি দিবসে আল্লাহকে বাদ দিয়ে মানুষের কাছে ভিক্ষা প্রার্থনা করছো। অথচ উক্ত দিনে মায়ের গর্ভে থাকা বাচ্চারাও নিজেদের সুখ ও সৌভাগ্যের আশা করে। (জাফারিয়াত, খন্ড ১১৪, পৃষ্ঠা ৪১৫)

ইমাম বাকের (আ.) বলেন: আরাফতের দিবসে ভাল এবং খারাপ সকলের দোয়াকে আল্লাহ কবুল করেন। (তাম্বিহুল গাফেলিন, পৃষ্ঠা ৪৮৯)

ইমাম সাদিক্ব (আ.)কে জিজ্ঞাসা করা হলো যে কেন আরাফাত নামকরণ করা হয়েছে?

ইমাম (আ.) উত্তরে বলেন: হজরত জিব্রাইল (আ.) হজরত ইব্রাহিম (আ.)কে উক্ত দিনে আরাফাতে নিয়ে আসেন। যখন যোহরের সময় হয় তখন তিনি হজরত ইব্রাহিম (আ.)কে বলেন: হে ইব্রাহিম! আপনি আপনার সকল কর্মের স্বীকারোক্তি দিন এবং হজের আমলসমুহকে শিখুন! তখন থেকে উক্ত স্থানের নাম আরাফাতে পরিণত হয়। (উসুলে কাফি, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৪০২)

যখন হাজিরা আরাফাতের মাঠে অবস্থান করে তখন যদি তাদের গুনাহ বালু কণা, বৃষ্টির ফোটা এবং নক্ষত্রের সমতুল্য হয় তাহলেও তার গুনাহসমুহকে ক্ষমা করে দেয়া হয়। (এলালুশ শারায়ে, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৪৩৬)

সুতরাং আমাদের উচিত আমরা যেন যেন উক্ত দিনটির মাধ্যমে আমরা অনেক ফায়দা হাসিল করতে পারি এবং নিজেদেরকে গুনাহ মুক্ত করতে পারি।

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন