কোরআন শরিফ তাহরিফ হতে সংরক্ষণ- ২

কোরআন শরিফ তাহরিফ হতে সংরক্ষণ- ২

তাহরিফে কোরআন, কোরআন বিকৃত, কোরআন শরিফ, বিকৃত কোরআন, সূরা হিজর, হাদীস,

পূর্বের আলোচনার পরে..... শিয়া আলেমগণ তাদের নিজের বাণীতে কোরআন অবিকৃত থাকা সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন নিন্মে কোরআন শরিফ তাহরিফ হতে সংরক্ষণ সম্পর্কিত কিছু শিয়া ওলামাদের বাণীকে উল্লেখ করা হলো:

১- আবু জাফর মোহাম্মাদ বিন আলি বিন হুসাইন বাবেওয়েই কুম্মী যিনি প্রসিদ্ধ হচ্ছেন সাদুক্ব নামে (মৃত্যুর তারিখ ৩৮১হিজরী) তিনি বলেছেন: কোরআন সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস হচ্ছে যে, কোরআন হচ্ছে আল্লাহর বাণী এবং তাতে কোন প্রকার বাতিল এবং ত্রুটিপূর্ণ বিষয়ের অবকাশ নেই। যা মহাজ্ঞানী আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছে এবং স্বয়ং তিনিই হচ্ছে এর প্রহরী এবং রক্ষক। (আল এতেকাদাত, পৃষ্ঠা ৯৩)

২- সৈয়দ মোর্তযা আলি বিন হুসাইন মুসাভি আলাভি যিনি প্রসিদ্ধ হচ্ছেন ইলমুল হুদা নামে (মৃত্যুর তারিখ ৪৩৬ হিজরি) তিনি বলেছেন: রাসুল (সা.)’এর কিছু সাহাবি যেমন: আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ, উবাই ইবনে কাআব যারা পবিত্র কোরআনকে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত কয়েকবার রাসুল (সা.)’এর সমীপে তেলাওয়াত করেছেন এবং তারাই বলেছেন যে, কোরআন যা কোন প্রকারের পরিবর্তন ছাড়াই জমাকৃত করা হয়েছে। (মাজমাউল বায়ান, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১০)

৩- আবু জাফর মোহাম্মাদ বিন তুসি যিনি শেইখুত তায়েফ নামে প্রসিদ্ধ (মৃত্যুর তারিখ ৪৬০ হিজরি) তিনি বলেছেন: পবিত্র কোরআনের ক্ষেত্রে কম বেশী হওয়ার বিষয়টি উপযুক্ত নয় এবং এ বিষয়ে সকল মুসলমানগণ একমত। উক্ত কথাটি সৈয়দ মোর্তযাও  মেনে নিয়েছেন এবং সত্যায়িত করেছেন। শিয়া এবং সুন্নীদের মধ্যে মাত্র কয়েকজন যারা কোরআনে পরিবর্তন সম্পর্কে নিজেদের মতামতকে বর্ণনা করেছেন। তাই বলে এটা আমরা কোনমতেই বলতে পারি না যে কোরআন বিকৃত করা হয়েছে। বরং তাদের উক্ত মন্তব্য সম্পর্কে আমরা অস্বীকৃতিজ্ঞাপন করতে পারি। (তিবয়ান, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩)

৪- “তাফসিরে মাজমাউল বায়ান”এর লেখক আবু আলি তাবারসি বলেছেন: কুরআনে বৃদ্ধির মতো ভিত্তিহীন মতামতের বিরূদ্ধে সম্পর্কে সকল মুসলমানগণ একমত। কিন্তু কোরআনের আয়াত কমানোর মতো ভিত্তিহীন মতামত সম্পর্কে কিছু সাহাবি এবং আহলে সুন্নাতের কিছু ফেরক্বা (হাসাওয়িয়েহ) থেকে রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু শিয়াদের মতে কোরআনের কোন ধরণের পরিবর্তন সাধিত হয়নি। (মাজমাউল বায়ান, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১০)

৫- আলি বিন তাউস হিল্লি যিনি সৈয়দ ইবনে তাউস নামে প্রসিদ্ধ (মৃত্যু ৬৬৪ হিজরি) তিনি বলেছেন: শিয়াদের মতে কোরআন শরিফে পরিবর্তন সাধিত হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। (সাআদ আল সাউদ, পৃষ্ঠা ১৪৪)

৬- শেইখ যাইন উদ্দিন আমেলি (মৃত্যু ৮৭৭ হিজরি) তিনি সূরা হিজরের ৯ নং আয়াত সম্পর্কে বলেছেন: আমরাই পবিত্র কোরআনকে সকল ধরণের পরিবর্তন এবং কম বেশি হওয়া থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করবো। (আয়হারুল হাক্ব, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১৩০)

৭- আহকাকুল হাক্ব নামক গ্রন্থের লেখক কাজি সৈয়দ নূরুদ্দিন তাসতারি (মৃত্যু ১০১৯) তিনি বলেছেন: অনেকেই ১২ ইমামি শিয়া আলেমদের প্রতি অপবাদ দান করে যে, তারা কোরআন বিকৃত সম্পর্কে বিশ্বাস করে। উক্ত বিষয়টিকে শিয়ারা মেনে নেয় না বরং তারা বলে যে, কয়েকজন এমন মতামত বর্ণনা করেছেন। কিন্তু শিয়ারা তাদের উক্ত বাণীকে গুরুত্ব দেয় না। (আলাউর রহমান, পৃষ্ঠা ২৫)

৮- মোহাম্মাদ বিন হুসাইন যিনি বাহাউদ্দিন আমেলি নামে প্রসিদ্ধ (মৃত্যু ১০৩০ হিজরি) তিনি বলেছেন: আর এটাই সত্য যে, পবিত্র কোরআন শরিফ সকল প্রকার ভুল ক্রুটি এবং কম বেশি ছাড়াই সুরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। সকল শিয়া আলেমগণের মতে কোরআন শরিফ সকল ধরণের ভুল ত্রুটির উর্দ্ধে এবং বিভিন্ন রেওয়ায়েত এবং সাহাবিদের বাণী দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে পবিত্র কোরআন শরিফ রাসুল (সা.)’এর যুগেই জমা করা হয়েছিল। (আলাউর রহমান, পৃষ্ঠা ২৫)

৯- ওয়াফি গ্রন্থের লেখক ফেইয কাশানি (মৃত্যু ১০৯১ হিজরি)। তিনি সূরা হিজর আয়াত নং ৯ সম্পর্কে বলেছেন: উক্ত আয়াত নাযিল হওয়ার পরে কিভাবে কোরআন বিকৃত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে? বরং বিকৃত রেওয়ায়েত সমূহ যা হচ্ছে কোরআন বিরোধি আগে সেগুলোর সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে। (তাফসিরে সাফি, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৫১)

১০- শেইখ হুররে আমেলি (মৃত্যু ১১০৪ হিজরি) তিনি বলেছেন: মানুষ ইতিহাস এবং খবর নিয়ে গবেষণা করে এবং তারা ভালভাবেই জানে যে, সহীহ হাদীস সমূহ এবং অসংখ্য সাহাবি দ্বারা সত্যায়িত হয়েছে কোরআন সব ধরণের ভুল ত্রুটি এবং কম বেশি ছাড়াই রাসুল (সা.)’এর যুগে একত্রিত করা হয়েছিল। (আলাউর রহমান, পৃষ্ঠা ২৫)

১১-  কাশেফুল গেতা’এর লেখক ও গবেষক তিনি বলেছেন: এতে কোন সন্দেহ নেই যে, কোরআন আল্লাহর সুরক্ষা ও সংরক্ষণের আলোকে এবং সকল ধরণের ভুল ত্রুটি এবং কম বেশি ছাড়াই সংরক্ষিত রয়েছে। প্রত্যেক যুগে যুগে আলেমগণ এ বিষয়ে একমত ছিলেন এবং তারা সাক্ষ্য দিয়েছেন। আর মাত্র গুটি কয়েকজন এর দ্বিমত পোষণ করেছেন।

১২- ইরানের ইসলামি বিপ্লবের প্রধান নেতা হজরত আয়াতুল্লাহ আল উজমা ইমাম খোমাইনি (রহ.) তিনি বলেছেন: কোরআন বিকৃত সম্পর্কে যে সকল রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে বা যারা এ সম্পর্কে লিখেছে তা হচ্ছে অবিশ্বাস্য এবং দূর্বল আর এ কারণে আমরা এর উপরে ভিত্তি করে প্রমাণ করা হবে একটি ভুল কাজ কেননা এগুলো যে বানোয়াট তা হচ্ছে সুস্পষ্ট। সুতরাং পবিত্র কোরআন শরিফ হচ্ছে যেভাবে আসমান থেকে নাযিল হয়েছিল বর্তমানেও অনুরূপভাবেই রয়েছে এবং তাতে কোন প্রকারের সন্দেহের অবকাশ নেই। (তাহযিবে উসুল, ইমাম খোমাইনি (রহ.)’এর বক্তব্য খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৯৬)

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন