কোরআন শরিফ তাহরিফ হতে সংরক্ষণ- ১
কোরআন শরিফ তাহরিফ হতে সংরক্ষণ- ১
শিয়া সুন্নী উভয়েই বিশ্বাস করে যে, পবিত্র কোরআন শরিফ হচ্ছে একটি ঐশী গ্রন্থ যা রাসুল (সা.)’এর উপরে নাযিল করা হয়েছিল এবং অনুরূপভাবে তা সকল ধরণের বিকৃত, পরিবর্তন, হ্রাস- বৃদ্ধি ছাড়াই অবশিষ্ট রয়েছে। এটা হচ্ছে কোরআনের একটি স্পষ্ট মজেযা।
শিয়াদের দৃষ্টিতে পবিত্র কোরআন শরিফে কোন ধরণের বিকৃততা সাধিত হয়নি। আর উক্ত বিষয়টি প্রমাণ করার জন্য সম্মানিত শ্রোতাদের সামনে কয়েকটি দিক উল্লেখ করবো।
১- মহান আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং ঐশী গ্রন্থ কোরআন শরীফ সম্পর্কে মুসলমানদেরকে নিশ্চিত করে বলেছেন:
اِنّا نَحْنُ نَزَّلْناالذِّکْرَ وَانّا لَهُ لَحافِظُوْنَ
অর্থ: আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতারণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক। (সূরা হিজর, আয়াত নং ৯)
২- শিয়াদের প্রথম ইমাম হজরত আলি (আ.) যিনি ছিলেন কাতেবে ওহি। তিনি কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ি বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য দিনগুলোতে মুসলমানদেরকে আহবান জানাতেন। তিনি বলতেন: পবিত্র কোরআন হচ্ছে এমন একটি গ্রন্থ যেখানে আল্লাহ তার বান্দাদেরকে অসংখ্যবার নসিহত করেছেন। কোরআন হচ্ছে আল্লাহর একটি রজ্জু এবং মানুষের জন্য হেদায়াত স্বরূপ।
অতঃপর মহান আল্লাহ তায়ালা এমন এক ঐশী গ্রন্থ নাযিল করেছেন যাতে রয়েছে এমন নূর যা কখনও নিভে যাবে না এবং এমন এক বাতি যার আলো তখনও কম হবে না। এমন এক পথ, যে উক্ত পথের পথিক কখনও পথভ্রষ্ট হবে না এবং তা হচ্ছে এমন এক হক্ব ও বাতিল পার্থক্যকারী মানদন্ড যাতে কোন প্রকারের কম বেশী হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
শিয়াদের ধর্মীয় নেতা ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ.)’এর উক্ত বাণী দ্বারা যে বিষয়টি স্পষ্ট হয় তা হচ্ছে কোরআন হচ্ছে হেদায়াতের নূর এবং মানুষের পথ চলার জন্য আলোক বর্তিকা স্বরূপ। তাতে কোন দ্বিধা দ্বন্দ নাই যার কারণে মানুষ পথভ্রষ্ট হবে।
৩- সকল শিয়া আলেমদের মতে রাসুল (সা.) বলেছেন: আমি তোমাদের মাঝে দুটি মূল্যবান বস্তু রেখে যাচ্ছি একটি আল্লাহর কিতাব এবং অপরটি হচ্ছে আমার আহলে বাইত। এরা কখনই একে অপর থেকে বিচ্যুত হবে না।
উক্ত হাদীসটি হচ্ছে মোতাওয়াতির আর শিয়া সুন্নী উভয়েই উক্ত হাদীসটিকে বর্ণনা করেছেন। আর এ থেকে শিয়াদের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কেও আমরা অবগত হতে পারি যে তারা কোরআন বিকৃত হওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্বাসী না। কেননা পবিত্র কোরআন শরীফ যদি বিকৃত হওয়ার (নাউযুবিল্লাহ) সম্ভাবনা থাকে তাহলে তা কখনই আল্লাহর রজ্জু হতে পারে না এবং মানুষকে পথভ্রষ্টতা থেকে পরিত্রাণ দান করতে পারে না।
৪- পবিত্র ইমাম (আ.)গণ থেকে বর্ণিত বিভিন্ন রেওয়ায়েত সমূহকে যা শিয়া আলেমগণ বর্ণনা করেছেন এবং তা থেকে এই বিষয়টা স্পষ্ট হয় যে, পবিত্র কোরআন হচ্ছে হক্ব ও বাতিল নির্ণয়ের মাপকাঠি যা দ্বারা আমরা সত্য ও মিথ্যাকে পৃথক করতে পারবো। এমনকি যদি কেউ কোন রেওয়ায়েত বর্ণনা করে এবং তার কোরআনের আয়াতের সাথে মিল না থাকে তাহলে উক্ত রেওয়ায়েত হয়ে যাবে মূল্যহীন আর যদি মিল থাকে তাহলে তা হবে সহিহ এবং সত্য।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে শিয়াদের ফিক্বহ’এর গ্রন্থ সমূহে অসংখ্য রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে তার মধ্যে একটি রেওয়ায়েত যা ইমাম সাদিক্ব (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেছেন:
ما لَمْ یُوافِقْ مِنَ الْحَدِیْثِ الْقُرآنَ فَهُوَ زُخْرُفٌ
অর্থ: কোরআনের সাথে যে বাণীর সাদৃশ্যতা নেই তা হচ্ছে বাতিল বা অহেতুক। (উসুলে কাফি, খন্ড ১)
ইমাম (আ.)’এর উক্ত বাণী থেকেও স্পষ্ট হয় যে, পবিত্র কোরআনে কোন প্রকারের পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। সুতরাং উক্ত পবিত্র কিতাব হচ্ছে হক্ব ও বাতিল নিরক্ষণের সঠিক মানদন্ড।
৫- শিয়াদের বড় বড় আলেমগণ যারা ইসলামী সংষ্কৃতি এবং শিয়াদের তারকা স্বরূপ ছিলেন তারাও এক বাক্যে স্বীকার করেছেন যে, কোরআন কখনও বিকৃত হতে পারে না।
চলবে.....
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন