“কুদস দিবসের” ইতিহাস
“কুদস দিবসের” ইতিহাস
'কুদস' শব্দের অর্থ পবিত্র। মসজিদে আকসাকে কুদস বলা হয়। মসজিদে আকসা মানে দূরবর্তী মসজিদ; এর অন্য নাম হচ্ছে বাইতুল মাকদিস, মসজিদে ইলিয়া, সালাম, উরুসালেম, ইয়াবুস। হিব্রু শব্দ 'বেথহামমিকদাস' থেকে মাকদিস, যার মূল শব্দ কুদস। মুসলমানদের কাছে জেরুজালেম শহর 'আল কুদস'। আর জেরুজালেম শব্দটি রোমান ব্যবহূত কেনানি শব্দ 'ইউরোসালেম'থেকে। ঈসায়ী সাল ৩ হাজার বছর আগে আরব ইয়াবুসি গোত্রের প্রথম শাসক মালিক সাদেক-এর উপাধি ছিল সালেম (শান্তিপ্রিয়)-তার নামানুসারে ইউরোসালেম-পরে জেরুজালেম। জেরুসালেম ৩৪ ডিগ্রী অক্ষাংশ ও ৩১.৫২ ডিগ্রী দ্রাঘিমাংশের উত্তরে একটি পাহাড়ি (মোরিয়া, যাইতুন, সাহইউন, যাইতা, গাওল, সামউইল নবীর পাহাড়) এলাকায় অবস্থিত।
ফিলিস্তিন বা প্যালেস্টাইন এশিয়ার পশ্চিম অঞ্চলে ভূমধ্যসাগরের পূর্ব পাড়ে অবস্থিত। এর পূর্বে জর্ডান,পশ্চিমে মিসরের সিনাই মরুভূমি ও ভূমধ্যসাগর, উত্তরে সিরিয়ার গোলান হাইট, বেকা উপত্যকা ও লেবানন এবং দক্ষিণে আকাবা উপসাগর ও সৌদি আরবের উত্তর পশ্চিম সীমান্ত।
হযরত ইবরাহীম (আ.) কাবাঘর নির্মাণের ৪০ বছর পর হযরত ইয়াকুব (আ.) জেরুজালেমে আল-আকসা মসজিদ নির্মাণ করেন। অতঃপর হযরত সুলায়মান (আ.) এই পবিত্র মসজিদের পুনঃনির্মাণ করেন। ৬৩৮ ঈসায়ী সালে বাইতুল মুকাদ্দাস এলাকা মুসলমানদের অধীনে আসে। ১০৯৬ সালে খ্রিস্টান ক্রুসেডারগণ সমগ্র সিরিয়া ও ফিলিস্তিন দখল করে নেয়ার পর বাইতুল মুকাদ্দাস মসজিদের ব্যাপক পরিবর্তন করে একে গির্জায় পরিণত করে। এরপর ১১৮৭ সালে মুসলিম বীর সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবী জেরুজালেম শহর মুসলমানদের অধিকারে নিয়ে আসেন। সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর হাতে পরাজিত হওয়ার পর খ্রিস্ট শক্তি পিছু হটলেও ইহুদি চক্র বায়তুল মুকাদ্দাসের প্রতি লোলুপ দৃষ্টি রাখে। তারা ফিলিস্তিন থেকে শুরু করে সুদূর মদীনা পর্যন্ত সারা মুসলিম এলাকা নিয়ে বৃহত্তর ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র করে।
মুসলমানদের প্রথম কিবলা উদ্ধারের জন্য মুসলিম উম্মাহকে জাগিয়ে তোলার লক্ষ্যে ১৯৭৯ সালে রমজানের শেষ শুক্রবারকে 'বিশ্ব কুদস দিবস' বলে ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে প্রতি বছর পালিত হচ্ছে এই 'আল কুদস দিবস'।
বায়তুল মুকাদ্দাস দুনিয়ার অসংখ্য ভূখণ্ডের মতো কোন সাধারণ ভূখণ্ড নয়। এ পবিত্র ঘর থেকেই খাতামুন্নাবীয়ীন হযরত মুহাম্মাদ (সা.) মিরাজে গমন করেছিলেন। এটি জিহাদের চারণভূমিও বটে। বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদ এবং তার আশেপাশের এলাকা বহু নবীর স্মৃতি বিজড়িত। এই পবিত্র নাম শুধু একটি স্থানের সাথে জড়িত নয়; বরং সকল মুসলমানের ঈমান ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। আর তাই সকল মুসলমানদের ঈমানি দ্বায়িত্ব হচ্ছে তাদের প্রথম কেবলকে ইয়াহুদি চক্রের কালো হাত থেকে রক্ষা করা।
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন