জাহেলিয়াতের যুগ ও ওহাবিদের মধ্যে সাদৃস্যতা- ৪

যখন আমরা ওহাবিদের কর্মকান্ড এবং চিন্তাধারার প্রতি দৃষ্টিপাত করি তখন বুঝতে পারি যে, ওহাবীদের সাথে মুসলমানদের কোন সাদৃশ্যতা নেই বরং জাহেলিয়াত যুগের বর্বর জাতীর সাথে তাদের সাদৃস্যতা রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ওহাবি মতবাদ হচ্ছে ইসলামের নামে জাহেলিয়াত যুগের চিন্তাচেত

জাহেলিয়াতের যুগ ও ওহাবিদের মধ্যে সাদৃস্যতা- ৪

যখন আমরা ওহাবিদের কর্মকান্ড এবং চিন্তাধারার প্রতি দৃষ্টিপাত করি তখন বুঝতে পারি যে, ওহাবীদের সাথে মুসলমানদের কোন সাদৃশ্যতা নেই বরং জাহেলিয়াত যুগের বর্বর জাতীর সাথে তাদের সাদৃস্যতা রয়েছে।

প্রকৃতপক্ষে ওহাবি মতবাদ হচ্ছে ইসলামের নামে জাহেলিয়াত যুগের চিন্তাচেতনার প্রতিচ্ছবি স্বরূপ।

আজকে আমাদের সম্মানিত শ্রোতাদের কাছে সংক্ষিপ্ত আকারে  ওহাবীদের সাথে জাহেলিয়াত যুগের যে সাদৃস্যতা রয়েছে তা উপস্থাপন করবো।

যদি আমরা ওহাবী বাতিল ফেরকা এবং আরবের জাহেলি যুগের ইতিহাসের গবেষণা করি তাহলে আমরা দেখতে পাব যে, তাদের উভয়ের মধ্যে একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে।

আমরা পূর্বে আলোচনা করেছিলাম যে, ইসলামের শত্রুরা যখন ইসলামকে ধ্বংস করতে চায় তখন তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে, মুসলমানদের মধ্যে এমন একটি বাতিল ফেরকা তৈরী করতে হবে এবং সকলের কাছে বিষয়টি স্পষ্ট করতে হবে যে ইসলাম মানেই হচ্ছে উক্ত বাতিল ফেরক্বা।

শত্রুরা ওহাবি মতবাদকে বিশ্বের কাছে এমনভাবে প্রচার করে যেন সকলেই বিশ্বাস করে যে, ইসলাম মানেই হচ্ছে বিদ্বেষ, বোমা বিষ্ফোড়ন, আত্মহত্যা,  যুদ্ধ।

কিন্তু আসলেই কি তাই? বরং ইসলাম মানেই হচ্ছে শান্তি, ভালবাসা, যুক্তি, সমাজের সাথে সামন্জস্যপূর্ণ, মানবাধিকার এবং সামাজিক একটি ধর্ম।

ওহাবিদের সাথে আরবের জাহেলিয়াত যুগের প্রথম যে সাদৃশ্যতা রয়েছে তা হচ্ছে যুদ্ধ, রক্তপাত এবং কঠোরতা।

আরবের জাহেলি যুগের লোকেরা ছিল উগ্র এবং তাদের আচরণ সমূহ ছিল বিদ্বেষ, উগ্রতা, কঠিন হৃদয়,  দয়াহীনতা বা কঠোরতার নিদর্শন স্বরূপ। তারা মানুষদেরকে হত্যা করে আনন্দ করতো বছরের পর বছর ধরে তারা যুদ্ধে লিপ্ত থাকতো এবং রক্তপাত ঘটাতো। উদাহরণ স্বরূপ অউস এবং খাযরাজ গোত্রদ্বয়ের মধ্যে যে যুদ্ধ শুরু হয় এবং তা প্রায় ১২০ বছর ধরে অব্যাহত থাকে।

অনুরূভাবে ইবনে কাসির তার ইতিহাসে গ্রন্থে জাহেলিয়াতের যুগে প্রায় ৬০টি যুদ্ধের কথা উল্লেখ করেছেন যে, যে সকল যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয় এবং ছোট বড় বড় যুদ্ধ মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার ৭০০টি যুদ্ধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

অনুরূপভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, একদা রাসুল (সা.) বেহেস্ত সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন তখন আরবের জাহেলি যুগের একজন লোক তাঁকে জিজ্ঞাসা করে: বেহেস্তে কি রক্তপাত এবং যুদ্ধ সংঘটিত হবে নাকি হবে না? যখন রাসুল (সা.) তাঁকে না সূচক জবাব দেন তখন সে বলে:

إذَنْ لاخَيْرَ فيها

তারা তাদের সন্তানদের জীবিত মাটিতে পুতে দিত এবং নিজেদের উক্ত কাজের উপরে তারা গর্বও করতো।

সূরা তাকভিরের ৮ এবং ৯ নং আয়াতের তাফসিরে মুফাসসিরগণ বলেছেন:

وَإِذَا الْمَوْؤُودَةُ سُئِلَتْ، بِأَيِّ ذَنبٍ قُتِلَتْ

অর্থ: যখন জীবন্ত প্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে, কি অপরাধে তাকে হত্য করা হল?

উক্ত আয়াতে আরবের জাহেলি লোক যারা নিজেদের কন্যা সন্তানদেরকে মাটিতে পুতে হত্যা করতো তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে।

আরবরা কবরকে (صهر) অর্থাৎ জামাই বলে আখ্যায়িত করতো কেননা তারা যখন তাদের কন্যাদেরকে মাটিতে পুতে দিত তখন তারা বলতে যে তারা জামায়ের কাছে মেয়েকে রখে এসেছে।

একদা কাইস বিন তামীমি রাসুল (সা.) এর খেদমতে উপস্থিত হয় এবং বলে আমি নিজ হাতে জাহেলিয়াতের যুগে নিজের ৮জন কন্যাকে কবর দিয়ে হত্যা করেছি! রাসুল (সা.) বলেন তুমি তাদের প্রত্যেকের বিনিময়ে  একটি করে দাশকে মুক্ত করে দাও। 

ইসলামে রাসুল (সা.)কে রাহমাতুললি আলামীন বলে উল্লেখ করা হয়েছে অনুরূপভাবে আল্লাহ তায়ালা প্রতি মূহূর্ত যেমন: যুদ্ধ, বিগ্রহে তার রহমতের নির্দশন দেখিয়েছেন। আর এভাবেই ইসলাম নিজ  দয়া দ্বারা সারা বিশ্বকে সত্য পথ দেখিয়েছে।

রাসুল (সা.) হচ্ছেন দয়ার প্রতিমূর্তি যেমন বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দয়া, মানুষ, পশুপাখি, গাছপালা এমনকি যুদ্ধক্ষেত্রেও তাঁর দয়ার দরজা খোলা থাকতো।  

হজরত আলি (আ.) মালিকে আশতার’কে লিখা তার এক চিঠিতে উল্লেখ করেছেন যে, তুমি মুসলিম এবং অমুসলিম সকলের সাথে বন্ধু সূলভ আচরণ করবে।

কিন্তু যদি আমরা ওহাবি উগ্র গোষ্ঠির প্রতি দৃষ্টিপাত করি তাহলে দেখতে পাব যে, যারা তাদের মতদর্শকে না মেনে নিবে তাদেরকে হত্যা করা এবং তাদের নারীদের সাথে যৌনাচারিতা, এবং তাদের সম্পদগুলো লুটে নেয়ার ফতোয়া দান করে থাকে। 

আমরা যদি ওহাবিদের সম্পূর্ণ ইতিহাসের প্রতি দৃষ্টিপাত করি তাহলে দেখতে পাব যে, এ পর্যন্ত তারা শুধুমাত্র হত্যা, যুদ্ধ এবং লুটপাটের ফতোয়া দিয়ে এসেছে।

আমরা যদি তাদের ইতিহাসের প্রতি দৃষ্টিপাত করি তাহলে দেখতে পাব যে তারা মক্কা, মদীনা, কারবালা, হেজাজ এবং নাজাফের জনগণের উপরে কি পরিমাণ অত্যাচার করেছে এবং এখনও তারা আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ইরাক এবং সিরিয়ার উপরে কি পরিমাণ আত্মঘাতি বোমা দ্বারা হামলা করছে, তা বলে শেষ করা যাবে না।

এভাবে তারা প্রত্যেকদিন শত শত শিয়া-সুন্নি নারী, শিশু ও পুরুষদেরকে হত্যা করছে। তারা বর্তমানে এমন কিছু কাজ সম্পাদন করছে যে, জাহেলিয়াতের যুগের লোকজনও এমন কাজটি করেনি।

তাদের উক্ত আচরণের কারণে তাদের অবস্থা নিন্মোক্ত আয়াতের ন্যায় হয়ে গেছে।

ثُمَّ قَسَتْ قُلُوبُكُمْ مِنْ بَعْدِ ذَلِكَ فَهِىَ كَا لْحِجَارَةِ أَوْ أَشَدُّ قَسْوَةً

অর্থ: অতঃপর এ ঘটনার পরে তোমাদের অন্তর কঠিন হয়ে গেছে। তা পাথরের মত অথবা তদপেক্ষাও কঠিন। (সূরা বাকারা, আয়াত নং ৭৪)

আর এ কারণেই ওহাবি জঙ্গিরা মুসলমানদেরকে হত্যা এবং ইসলামের নামে বিদ্বেষ ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে।

তারা বিভিন্ন প্রদর্শনির আয়োজন করে এবং তারা সেখানে বলে যে যারা কবরকে যিয়ারত করবে, তাওয়াসসুল  করবে আমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করবো এবং তাদেরকে হত্যা করবো। চাই তারা আবু হানিফার কবরের যিয়ারত করুক বা ইমাম হুসাইন (আ.)’এর কবরের যিয়ারত করুক। 

তারা ফতোয়া দিয়েছে যে যারা আমাদের মতদর্শের অনুসারী না তারা যেন আমাদের মসজিদে নামাজ আদায় না করে।

তারা ফতোয়া দিয়েছে যে, শিয়া ছাত্র ছাত্রীরা যেন বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে পড়ালিখা করতে না পারে।

ইরাকের মুসলমানদেরকে যেন হজ্ব করতে না দেয়া হয়। আর তাদের উক্ত ফতোয়ার কারণে তায়েফের গণ গোসলখানায় গণহত্যা করা হয় যা ইতিহাসের কালো অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ রয়েছে।

‘জামিল সিদ্দিকি যাহাওয়ি’ নামক আহলে সুন্নাতের একজন  আলেম তিনি তায়েফে সুন্নী অধ্যুষিত এলাকায় ওহাবিদের হামলা সম্পর্কে বলেন যে, ১২১৭ হিজরীতে ওহাবীরা তায়েফবাসীদেরকে গণহত্যা করে আর এটা ছিল তাদের একটি জঘন্যতম কাজ। তারা  ছোট বড় কারো উপরেই দয়া করেনি। এমনকি যারা কোরআনের হাফিয ছিল, যারা মসজিদে নামাজ পড়ছিল তাদেরও তারা হত্যা করেছিল। এমন কি তারা কোরআন,  সহীহ বুখারি, সহিহ মুসলিম, হাদীস গ্রন্থ, ফিক্ব’এর গ্রন্থকে অলিগলিতে ফেলে দেয় এবং পা দ্বারা তা পদদলিত করেছিল।

‘যিনি দাহলান’ তিনি ছিলেন মক্কার একজন মুফতি। তিনিও তার গ্রন্থে উক্ত ঘটনাটি উল্লেখ করেছেন। ‘গালেব মোহাম্মাদ আদিব’ তিনি ‘জাবারতি’ নামক ইতিহাসের গ্রন্থ থেকে উল্লেখ করেছেন যে, ওহাবিরা তিন দিন ধরে তায়েফে লুটতারাজ চালাতে থাকে এবং নারী, পুরুষ এবং বাচ্চাদেরকে হত্যা করে।

‘সালাহ উদ্দিন মোখতার’ যিনি নিজেও হচ্ছেন ওহাবি কিন্তু তিনিও লিখেছেন যে, ১২১৬ হিজরীতে সৌদির আমির তার সৈন্যদেরকে নিয়ে হেজাজ, নাজদ এবং আশায়ের’এর জনগণের উপরে হামলা করে তারপরে তারা ইরাকের দিকে অগ্রসর হয় এবং জিলক্দ্ব মাসে তারা কারবালাতে পৌছায় এবং সম্পূর্ণভাবে শহরটিকে ধ্বংস করে দেয় এবং সেখানের জনগণকে হত্যা করে এবং তাদের সম্পদ সমূহকে লুট করে এবং শহর থেকে বাহিরে চলে যায়।

‘শেইখ উসমান নাজদি’ ওহাবিদের একজন ঐতিহাসিক তিনি লিখেছেন যে, ওহাবিরা হঠাৎ কারবালাতে প্রবেশ করে এবং সেখানের অসংখ্য নারী পুরুষদেরকে তারা হত্যা করে, ইমাম হুসাইন (আ.)’এর কবর মোবারককে ভেঙ্গে দেয় এবং রওজা মোবারকের সকল মূল্যবান সম্পদ সমূহকে তারা লুট করে নেয়। এছাড়া তারা শহরে যত মূল্যবান জিনীষ, সোনা, অস্ত্র, এবং পোষাক ছিল তারা তা লুট করে এবং তারা প্রায় দুই হাজার কারবালাবাসীদেরকে হত্যা করে।

এধরণের আচরণ ছিল আরবের জাহেলি যুগের আচরণ সমূহের মধ্যে অন্যতম। যা ওহাবিরা বর্তমান বিশ্বে বাস্তবায়ন করে বেড়াচ্ছে। ইনশাআল্লাহ আমরা এর পরের আলোচনায় এ সম্পর্কে আরো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো। 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন