ইমাম মাহদী (আ.)’এর আবির্ভাবের বরকত সমূহ
ইমাম মাহদী (আ.)’এর আবির্ভাবের বরকত সমূহ
১
وَلَهُ أَسْلَمَ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا وَإِلَيْهِ يُرْجَعُونَ
অর্থ: আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক, তাঁরই অনুগত হবে এবং তাঁর দিকেই ফিরে যাবে। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং ৮৩)
ইমাম সাদিক্ব (আ.) উক্ত আয়াত সম্পর্কে বলেছেন: যখন আমাদের মাহদি (আ.) কিয়াম করবেন তখন বিশ্বের সকল স্থান থেকে ‘কলেমা শাহাদাতাইন’ উচ্চারিত হবে। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৫২, পৃষ্ঠা ৩৪০, হাদীস নং ৮৯)
সকলের চিন্তা চেতনা কোরআন অনুযায়ি হবে:
২- হজরত আলি (আ.) বলেছেন: মানুষেরা নিজেদের নাফসকে হেদায়েতের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেয় এবং ইমাম মাহদি আবির্ভাবের পরে তিনি নাফসকে হেদায়াত অনুযায়ি পরিচালনা করতে বাধ্যে করবেন।
অনেকেই কোরআনকে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ি তাফসির করে থাকে কিন্তু তিনি সকলের চিন্তা অনুযায়ি তাফসিরকে কোরআনের সামনে উপস্থাপন করেবেন যেন সকলের ধারণা সঠিক হয়ে যায়।
তিনি মানুষদেরকে শিক্ষা দিবেন যে কিভাবে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হয়। তিনি প্রকৃত কোরআন ও সুন্নাতের শিক্ষাকে উজ্জিবিত করবেন। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৫২, পৃষ্ঠা ২৮০)
প্রকৃত হক্বদারের কাছে তার প্রাপ্য অধিকার পৌছাবে:
৩- ইমাম সাদিক্ব (আ.) বলেছেন: যখন ইমাম মাহদি (আ.) কিয়াম করবেন তখন তিনি ন্যায়ের সাথে বিচার করবেন এবং তাঁর যুগে অন্যায় অত্যাচার নির্মূল হবে এবং বিশ্বে শান্তি ফিরে আসবে ভুমি তার সকল বরকত সমূহ পরিলক্ষিত হবে এবং প্রত্যেকেই তার প্রাপ্য অধিকার ফিরে পাবে।
পুথিবীতে এক ইসলাম ছাড়া আর অন্য কোন দ্বিন অবশিষ্ট থাকবে না এবং সকলেই ইসলামরে প্রতি ঈমান নিয়ে আসবে। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৫২, পৃষ্ঠা ৩৩৮)
পবিত্র কোরআনে বর্নিত হয়েছে যে,
وَلَهُ أَسْلَمَ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا وَإِلَيْهِ يُرْجَعُونَ
অর্থ: আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক, তাঁরই অনুগত হবে এবং তাঁর দিকেই ফিরে যাবে। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং ৮৩)
৪- ইমাম সাদিক্ব (আ.) বলেছেন যে, মানুষের মাঝে তাঁর দ্বারা আল্লাহর বিধানাবলি বাস্তবায়িত হবে এবং প্রত্যেক অধিকারীই তার প্রাপ্য অধিকার ফিরে পাবে।
সকলের কাছে সত্য স্পষ্ট হয়ে যাবে এবং লোকজনের ভয়ের কারণে এমন কোন কিছুই থাকবে না যা প্রকাশ করা হবে না। (উসুলে কাফী, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১৩০, হাদীস নং ২)
ইমাম মাহদি (আ.)’এর আবির্ভাব জ্ঞান সমূহ পূর্ণতা অর্জন করবে:
৫- ইমাম বাকের (আ.) বলেছেন: যখন আমাদের মাহদি (আ.) কিয়াম করবেন এবং তার পবিত্র ছত্র ছায়ায় যারাই অবস্থান করবে সকলের জ্ঞান পরিপূর্ণ হবে। এবং মহান আল্লাহ তায়ালা সকলের দৃষ্টিশক্তি এবং শ্রবণশক্তিকে বৃদ্ধি করে দিবেন। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৫২, পৃষ্ঠা ৩২৭)
ইমাম মাহদি (আ.) মানুষের অন্তর সমূহ সম্পর্কে অবগত:
৬- ইমাম সাদিক্ব (আ.) বলেছেন: যখন আমাদের মাহদি (আ.) কিয়াম করবেন তখন তার সম্মুখে যারাই উপস্থিত হবে তিনি তাদেরকে দেখা মাত্রই চিহ্নিত করবেন যে, সে যোগ্য না অযোগ্য ব্যাক্তি। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৫২, পৃষ্ঠা ৩২৫)
ইমাম মাহদি (আ.)’এর আবির্ভাবের পরে শিয়ারা সকল বীপদমুক্ত হবে:
৭- ইমাম সাজ্জাদ (আ.) বলেছেন যে, যখন আমাদের মাহদি (আ.) কিয়াম করবেন তখন শিয়ারা সকলেই বীপদ মুক্ত হবে এবং তাদের অবস্থা হবে বিভিন্ন লৌহ খন্ডকে একত্রিত করার মতো এবং তখন প্রত্যেকেই ৪০ জন ব্যাক্তির সমপরিমাণ শক্তি অর্জন করবে এবং তাদেরকে পৃথিবীর বুকে বিভিন্ন স্থানের শাষক এবং সম্মানিত ব্যাক্তি হিসেবে নির্ধারিত করা হবে। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৫২, পৃষ্ঠা ৩১৬)
ইমাম মাহদি (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন এবং পৃথিবীকে অন্যায় অবিচার মুক্ত করবেন:
৮- ইমাম সাদিক্ব (আ.) বলেছেন: ইমামদের মধ্যে সর্বশেষ ইমাম হচ্ছেন ইমাম মাহদী যিনি অন্তর্ধানের পরে কিয়াম করবেন এবং দাজ্জালকে হত্যা করবেন এবং পৃথিবীকে সকল অন্যায় অত্যাচার মুক্ত করবেন। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৫১, পৃষ্ঠা ৪৪১)
ইমাম মাহদি (আ.)’এর মাধ্যেমে জ্ঞানের বিকাশ ঘটবে এবং সকল প্রকারের ব্যাধিগ্রস্থ মানুষেরা আরোগ্যে লাভ করবে:
৯- ইমাম সাদিক্ব (আ.) বলেছেন: জ্ঞান বিজ্ঞান’এর ২৭টি দিক রয়েছে এবং বিভিন্ন নবি রাসুলগণ যে জ্ঞানের বহিঃপ্রকাশ করেছেন এবং জনগণ যে জ্ঞান অর্জন করেছে তা হচ্ছে জ্ঞান বিজ্ঞান’এর ২টি দিকের নমূনা স্বরূপ। কিন্তু যখন ইমাম মাহদি (আ.) আবির্ভূত হবেন তখন তিনি জ্ঞানের অবশিষ্ট দিকগুলোকে প্রকাশ এবং তা দ্বারা জনগণকে অবগত করবেন। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৫২, পৃষ্ঠা ৩২৫)
১০- ইমাম বাকের (আ.) বলেছেন: ইমাম মাহদি (আ.)’এর আবির্ভাবের পরে জনগণ এতই হিকমতের অধিকারী হবে যে, নারিরা ঘরে থেকেও কোরআন ও সুন্নাতের বিধানের উপরে আমল এবং বিচার করতে পারবে। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৫২, পৃষ্ঠা ৩২৫)
১১- ইমাম হুসাইন (আ.) ইমাম মাহদি (আ.)’এর হুকুমত সম্পর্কে বলেছেন: তখন কেউ অজ্ঞ এবং অসহায় অবস্থায় থাকবে না কেননা মহান আল্লাহ তায়ালা সকলের সমস্যার সমাধান করবেন। (বিহারুল আনওয়ার খন্ড ৫৩, পৃষ্ঠা ৬২)
১২- ইমাম বাকের (আ.) বলেছেন: যারাই ইমাম মাহদি (আ.)’এর সানিধ্য অর্জন করবে তাহলে যদি সে অসুস্থ থাকে সুস্থ হয়ে যাবে এবং দূর্বল থাকে তাহলে সে শক্তিশালী হয়ে যাবে। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৫২, পৃষ্ঠা ৩২৫)
ইমাম মাহদি (আ.)’এর আবির্ভাবের পরে মানুষেরা কল্যাণ এবং স্বস্তি অনুভব করবে:
১৩- রাসুল (সা.) বলেছেন: ইমাম মাহদি (আ.)’এর যুগটি এমন হবে যে, মানুষেরা উপহার দেয়ার জন্য এমনকি যাকাত দেয়ার জন্যও কোন দরিদ্রকে খুজে পাবে না। কেননা আল্লাহর অশেষ কৃপায় সকলেই অভাবমুক্ত জিবন যাপন করবে।
১৪- রাসুল (সা.) বলেছেন: মহান আল্লাহ তায়ালা ইমাম মাহদি (আ.)’এর আবির্ভাবের কারণে আমার উম্মতের সকল সমস্যার সমাধান করবেন এবং মানুষের অন্তরকে অনুগত্য এবং ইবাদতমুখি করে দিবেন এবং সকলেই তাঁর ন্যায়মুলক আচরণকে অনুভব করবে। মহান আল্লাহ তায়ালা তার কারণে মিথ্যা এবং মিথ্যাবাদিকে ধ্বংস করে দিবেন এবং অক্রমণাত্মক মনমানসিকতাকে বিদূরিত করবেন এবং দাশ প্রথাকে সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
১৫- রাসুল (সা.) বলেছেন: ইমাম মাহদি (আ.)’এর অবির্ভাবের পরে ভুমি তার অভ্যন্তরের মূল্যবান সম্পদকে প্রকাশ করে দিবে। তখন চোর এসে বলবে উক্ত সম্পদের জন্য আমার হাতকে কাটা হয়েছিল! হত্যাকারী এসে বলবে উক্ত সম্পদের জন্য আমি মানুষকে হত্যা করেছি!
আত্মীয়তার সম্পর্কছেদকারী এসে বলবে যে, আমি উক্ত সম্পদের জন্য সম্পর্কছেদ করেছিলাম! তখন এমন অবস্থার সৃষ্টি হবে যে, সেনা রূপা পড়ে থাকলেও মানুষ তা অর্জনের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করবে না। (বাশারাতুল ইসলাম, পৃষ্ঠা ৭১, ইয়ানাবিউল মোয়াদ্দাত, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৮৬)
১৬- ইমাম বাকের (আ.) এ সম্পর্কে বলেছেন: ইমাম মাহদি (আ.)’এর আবির্ভাবের পরে মানুষকে উদ্দেশ্যে করে বলা হবে যে জিনিষের জন্য তোমরা আত্মিয়তার সম্পর্ক ছেদ করেছ, মানুষদেরকে হত্যা করেছ এবং বিভিন্ন গুনাহে লিপ্ত হয়েছ! তখন তাদেরকে এত পরিমাণ দান করা হবে যে মানব ইতিহাসে এর কোন নজির খুজে পাওয়া যাবে না। (গায়বাতে নোমানি, পৃষ্ঠা ২৩৭)
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন