বণি মুস্তালিকের যুদ্ধ ও মুনাফিকদের ষড়যন্ত্র

বণি মুস্তালিকের যুদ্ধ ও মুনাফিকদের ষড়যন্ত্র

এস, এ, এ

বণি মুস্তালিক হচ্ছে একটি গোত্রের নাম যারা হেজাজের মরুভূমিতে বসবাস করতো এবং তারা অন্যান্য আরবীদের মতো পশুর খামার, কৃষিকাজ এবং ব্যাবসা বানিজ্যে করতো। উক্ত গোত্রটি ওহদের যুদ্ধে কুরাইশদের সাহায্যে করেছিল। ৬ হিজরী শাবান মাসে হজরত মোহাম্মাদ (সা.) খবর পান যে, বণি মুস্তালিক গোত্রের প্রধান যুদ্ধের সরন্জামাদি জমা করছে এবং অনতি বিলম্বে মদীনায় হামলা করবে।

হজরত মোহাম্মাদ (সা.) উক্ত খবরটি শোনার পরে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে বলেন। তিনি চান উক্ত ফেতনাকে মূলৎপাটন করতে। তিনি তাঁর সাহাবী “বুরাইদা”কে বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নেয়ার জন্য প্রেরণ করেন। তিনি তিনি ছদ্মনামে প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং প্রবাহিত ঘটনা সম্পর্কে অবগত হন। তিনি মদীনায় ফিরে আসেন এবং রাসুল (সা.)’কে ঘটনা সম্পর্কে অবগত করেন। তখন রাসুল (সা.) হজরত আবু যার গাফফারী (রা.) কে মদীনাতে রেখে ইসলামী সেনা বাহিনীকে নিয়ে রওনা হন এবং “মারিসিয়া” নামক কুয়ার কাছে পৌছালে সেখানে শত্রুদের সাথে তিনি মুখোমুখি হন এবং উভয় পক্ষ থেকে হামলা শুরু হয়। যখন বণী মুস্তালিকের মাত্র ১০ জন লোক মারা যায় তখন তারা ভয়ে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ণ করে। তারা নিজেদের নারী ও বাচ্চা, ১০ হাজার উট, ৫ হাজার ছাগল পলায়ণের সময় রেখে যায়।

বণী মুস্তালিকের প্রধানের মেয়ে জাওয়িরা উক্ত যুদ্ধে আটক হয় রাসুল (সা.) তাকে কিনে নেয় এবং তাকে মুক্ত করে দেন। অতঃপর তার অনুমতিক্রমে তার সাথে বিবাহ করেন। মুসলমানগণও রাসুল (সা.)’এর উক্ত উদারতাকে দেখে অন্যান্য বন্দিদেরকেও মুক্ত করে দেয় এবং বলে যে এরা হচ্ছে রাসুল (সা.)’এর আত্মীয়। রাসুল (সা.)’এর উক্ত বিবাহের কারণে বণি মুস্তালিকের ১০০ জন নারী মুক্তি লাভ করে। মুক্তি লাভ করার পরে নারীরা তাদের নিজ গোত্রে ফিরে যায় এবং রাসুল (সা.)’এর সাথে উক্ত গোত্রের সম্পর্কের কথা এবং তাঁর উদারতার কথা নিজ গোত্রের লোকদেরকে জানায়। তাদের কথার প্রভাব উক্ত গোত্র সহ অন্যান্য গোত্রের উপরেও পড়ে।

প্রথমবারের মতো উক্ত স্থানে আনসার এবং মুহাজিরদের মধ্যে দ্বন্দ শুরু হয়। আর তখন যদি রাসুল (সা.) না থাকতেন তাহলে গুটি কয়েক মানুষের জন্য মুসলমানদের মধ্যে ফাঁটল ধরে যেত। দ্বন্দের কারণ ছিল যে, যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে মুহাজির জাহজাহ মাসউদ এবং আনসার সেনানে জাহনী’এর মধ্যে পানি নিয়ে দ্বন্দ বাধে। তখন উভয়ে তাদের গোত্রের লোকদের নিজেদের সহায়তার জন্য ডাকে । তখন এমন একটা পরিবেশের সৃষ্টি হয় মনে হচ্ছিল যেন, মুসলমানরা এখনই একে অপরের রক্তের পিপাসু হয়ে পড়বে।  যখন রাসুল (সা.)  ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত হন তখন তিনি বলেন যে, উক্ত সাহায্যের বিষয়টি এতই খারাপ ছিল যে, আল্লাহর শোকর যে মুসলমানদের মধ্যে জাহেলিয়াত যুগের ন্যায় কোন রক্তক্ষয়ি যুদ্ধ বাঁধেনি।

এরা উভয়েই ইসলামের মূখ্য উদ্দেশ্যে সম্পর্কে অবগত না। কেননা ইসলাম চায় মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে অটুট করতে। আর যে সাহায্যের আহবান মুসলমানদের মধ্যে বিভেদের সৃষ্টি করে তা হচ্ছে একেশ্বরবাদী আইনের বিরোধি।

রাসুল (সা.) এভাবে ফেতনাকে নস্যাত করেন। কিন্তু আব্দুল্লাহ বিন আবি উবাই যে ছিল মুনাফিকদের নেতা তার অন্তর ইসলামের জন্য বিদ্বেষে পূর্ণ ছিল। সে শুধুমাত্র গণিমত লাভের জন্য যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতো। সে তার মুনাফিকের মুখোশকে উন্মোচন করে বলে আমরা মদীনাবাসীরা মক্কার মুহাজেরিন মুসলমানদেরকে স্থান দান করেছি। তাদেরকে শত্রুদের ষড়যন্ত্র থেকে মুক্ত করেছি। আল্লাহর শপথ যখন মদীনাতে ফিরে যাব তখন চেষ্টা করবো আানসারগণ যেন মুহাজেরিনদেরকে  মদীনা থেকে বাহির করে দেয়। তখন সেখানে যায়দ বিন আরক্বাম সেখঅনে উপস্থিত ছিল সে বীরত্বের সাথে তার কথার বিরোধিতা করে বলে আল্লাহর শপথ অপদস্থ এবং লাঞ্ছিত হচ্ছো তুমি যার নিজের আত্মীয় স্বজনদের কাছে কোন মূল্য নাই। কিন্তু মুসলমানদের অন্তরে মোহাম্মাদ (সা.)’এর একটি বিশেষ স্থান রয়েছে যা তার প্রতি ভালবাসা এবং শ্রদ্ধা দ্বারা পূর্ণ। অতঃপর সে রাসুল (সা.)’এর কাছে আসে এবং উক্ত ঘটনা সম্পর্কে অবগত করে। কিন্তু রাসুল (সা.) উক্ত ফেতনা দমনের জন্য যায়দের কথাকে তিনবার থামিয়ে দিয়ে বলে মনে হয় তুমি ভুল করছো! হয়তো তোমার ক্রোধ তোমাকে উক্ত কথাটি বলতে বাধ্যে করেছে! হয়তো সে সম্ভবত তোমাকে ছোট বলে বিবেচনা করেছে এটা মানে এই নয় যে, সে মুসলমানদের মদ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। কিন্তু যায়দ রাসুল (সা.)’এর উক্ত তিন ধারণাকে অস্বীকার করে বলে আসলে তার উদ্দেশ্যে হচ্ছে বিভেদ সৃষ্টি করা। হজরত ওমর রাসুল (সা.) কে বলেন যে আমাকে অনুমতি দিন যেন আমি তাকে হত্য করি। কিন্তু রাসুল (সা.) তাকে বাধা দিয়ে বলেন যে, তাকে হত্যা করার দরকার নাই তাহলে জনগণ বলবে যে, মোহাম্মাদ তার অনুসারীদেরকেই হত্যা করে।

আব্দুল্লাহ ঘটনা সম্পর্কে অবগত হলে দ্রুত রাসুল (সা.)’এর সমীপে উপস্থিত হয়ে বলে: আমি কখনই এ কথাগুলো বলিনি তার সঙ্গিরা বলে যে হয়তো যায়দ ভুল বুঝেছে। অতঃপর রাসুল (সা.) সকলকে যাত্রা করার জন্য নির্দেশ দান করেন তখন সকল মুসলমানরা যাত্রা শুরু করে এবং শুধুমাত্র নামাজ ব্যাতিত কোথাও অবস্থান করেনি। পরের দিন অনক গরম ছিল আর এ কারণে সকলে ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন রাসুল (সা.) ক্লান্তি দূর করার জন্য  সকলকে থামার নির্দেশ দান করেন সকলে অবস্থান করার পরে ঘুমিয়ে পড়ে এবং যখন সাহাবীরা ঘুম থেকে উঠে তখন সকলের অন্তর থেকে উক্ত বিরোধ দূর হয়ে যায় এবং ষড়যন্ত্র নস্যাত হয়ে যায়।

সূত্র:

১- সুরা হুজরাত, আয়াত নং ৬।

২- তারিখে তাবারী, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ২৬১- ২৬২, মাজমাউল বায়ান, খন্ড ১০, পৃষ্ঠা ২৯২- ২৯৫।

৩- সীরেহ ইবনে হেশাম, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ২৯৫, তাফসীরে কুম্মী, পৃষ্ঠা ৬৮১।

 

 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন