কারবালায় শিশুদের ভুমিকা
কারবালায় শিশুদের ভুমিকা
এস, এ, এ
হজরত ইমাম হুসাইন (আ.)’এর কাফেলায় শিশুদের অবস্থান ছিল আরেকটি উল্লেখযোগ্য একটি বিষয়। যার কারণে ইতিহাসে উক্ত কাফেলাটির গুরুত্ব আরো বেড়ে যায়। নিন্মে কারবালার কিছু শিশু শহীদদের বিবরণি উল্লেখ করা হলো:
হজরত আলী আসগার:
ইমাম হুসাইন (আ.)’এর দুধের শিশু ছিলেন হজরত আলী আসগার। যখন তিনি কারবালার তপ্ত মরুভুমির গরমে বিচলিত হয়ে পড়ে। তখন ইমাম হুসাইন (আ.) শত্রুদের উদ্দেশ্যে করে বলেন: হে এজিদের সৈন্যরা তোমরা কি দেখছ না যে, আমার এ দুধের শিশুটি কেমন পানির জন্য বিচলিত হয়ে পড়েছে? নাফসুল মাহমুম নামক গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে, যখন ইমাম হুসাইন (আ.) এজিদ বাহিনীর সাথে কথা বলছিলেন তখন হুরমুলা শিশু হজরত আলী আসগার (আ.)’এর ছোট গলাকে লক্ষ্য করে তীর নিক্ষেপ করে যার কারণে তাঁর গলা ভেদ করার সাথে তিনি ইমাম হুসাইন (আ.)’এর হাতের উপরে শাহাদত বরণ করেন। ঐতিহাসিকগণ উল্লেখ করেন যে, হজরত আলী আসগার শাহাদত বরণের পূর্বে এজিদ বাহিনীর মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি শুরু হয়ে যায়।
হজরত রুকাইয়া:
হজরত রুকাইয়া ছিলেন ইমাম হুসাইন (আ.)’এর কন্যা যার বয়স ছিল ৩ অথবা ৪ বছর। যাকে ইমাম হুসাইন (আ.)’এর শাহাদতের পরে বন্দি করে শামের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। একদা তিনি শামের কারাগারে তাঁর বাবাকে স্বপ্নে দেখেন এবং ঘুম থেকে উঠে তিনি ক্রন্দন করতে শুরু করেন এবং বিচলিত হয়ে পড়েন। যখন এজিদের কাছে উক্ত খবরটি পৌছায় তখন সে ইমাম হুসাইন (আ.)’এর কাটা মাথাকে শিশু রুকাইয়াকে দেখানোর নির্দেশ দান করে হজরত সকিনা উক্ত দৃশ্য দেখে আর সহ্য করতে পারেননি এবং তার কয়েকদিন পরে তিনিও শাহাদত বরণ করেন।
ইমাম বাকের (আ.):
কারবালাতে ইমাম সাজ্জাদ (আ.)’এর একমাত্র সন্তান ছিল ইমাম বাকের (আ.) যার মায়ের নাম ছিল ফাতেমা বিনতে হাসান মুজতবা। তিনি উম্মে আব্দুল্লাহ নামেও পরিচিত ছিলেন। কারবালাতে তাঁর বয়স ছিল সাড়ে তিন বছর। তিনি কারবালা সকল হত্যাকান্ড এবং ঘটনাবলিকে দেখেছিলেন।
কাসিম বিন হাসান (আ.):
কারবালার ঘটনার সময় তিনি ছিলেন একজন কম বয়সী নবযুবক। তিনি ছিলেন ইমাম হাসান (আ.)’এর সন্তান। ইতিহাসে তার মায়ের বিভন্ন নাম বর্ণনা করা হয়েছে যেমন: রামালে, নাফিলা। হজরত কাসিম (আ.) ইমাম (আ.)’কে একাধিকবার অনুরোধ করার পরে তাঁকে যুদ্ধের ময়দানে যাওয়ার অনুমতি দান করেন। আমরু বিন সাঈদ বিন নোফায়ল বলে যে, যখন আমি তাঁর উপরে হামলা করি তখন তাঁকে বলি যে, তুমি কেন যুদ্ধ করতে এসেছ? তখন সে উত্তরে বলে: হক্ব প্রতিষ্ঠার জন্য আমার দেহে যতক্ষণ প্রাণ আছে আমি ততক্ষণ লড়াই করে যাব। উক্ত কথাটি বলার পরে যখন সে মাথঅকে ঘুরায় তখন আমি তার মাথঅর উপরে এমন জোরে তরবারি দ্বারা আঘাত করি যে, তার মাথার খুলি ভেঙ্গে যায় এবং তিনি স্বজোরে চিৎকার করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে যায় এবং বলে হে আমার চাচা! আমাকে সাহায্যে করুন। ইমাম হুসাইন (আ.) দ্রুতগতিতে তার কাছে পৌছান এবং বলেন যে, যারা তোমাকে আহত করেছে তারা যেন খোদার রহমত থেকে দূরে থাকে। তখন ইমাম হুসাইন (আ.) হজরত কাসিমের লাশকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরেন এবং এবং যখন তাকে দেহকে তাবুর দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তার ঘোড়ার খুরের আঘাতে দলিত হজরত কাসিমের শরীর মাটির সাথে লেগে যাচ্ছিল।
আব্দুল্লাহ বিন হাসান বিন আলী (আ.):
কারবালাতে আব্দুল্লাহ বিন হাসান বিন আলী (আ. ‘এর বয়স ছিল মাত্র ১১ বছর। তিনি ছিলেন ইমাম হাসান (আ.)’এর সন্তান। যখন সে দেখতে পায় যে তার চাচা ইমাম হুসাইন (আ.) আহত হয়ে মাটিতে পড়ে গেছে। তখন সে যুদ্ধের ময়দানে ছুটে আসে এবং এজিদের কয়েকজন সৈন্যকে হত্য করে এমতাবস্থায় বাহার বিন কাআব’এর তরবারীর আঘাতে তিনিও শাহাদত বরণ করেন। অন্য এ রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে, হুরমুলা তার সে দুই হাত যা দ্বারা সে তার চাচাকে ধরেছিল তারবারির আঘাতে কেটে ফেলে এবং তাকে সেখানেই শহীদ করে।
অউন বিন আব্দুল্লাহ: হজরত জয়নাব (সা.আ.)’এর সন্তান যিনি তার মায়ের সাথে কারবালাতে উপস্থিত ছিলেন। তিনিও কারবালার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং বেশকিছূ এজিদী সৈন্যকে হত্যা করেন এবং আবশেষে শাহাদত বরণ করেন। যিয়ারতে নাহিয়অতে তার শঅহাদত সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে।
মোহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ:
মোহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ ছিলেন কারবালার আরেকজন বীর সৈনিক। তিনি তিনজন আরোহি এবং ১৮ জনকে হত্যা করেন এবং অবশেষে তিনিও শাহাদত বরণ করেন। যিয়ারতে নাহিয়াতে তাঁর কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
হজরত মুসলিমের দুই সন্তান:
কারবালার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইবনে যিয়াদের নির্দেশে মোহাম্মাদ এবং ইব্রাহিম হজরত মুসলিমের দুই সন্তানকে আটক করা হয় এবং তাদেরকে প্রায় এক বছর বন্দি করে রাখা হয়। কিন্তু আহলে বাইত (আ.)’এর একজন বৃদ্ধ প্রেমিক যে ছিল কারাগারের রক্ষি সে এক রাতে তাদের দুজনকে পালিয়ে যেতে সাহায্যে করে। কিন্তু তারা দূর্ভাগ্যেবশত এমন এক নারীর ঘরে আশ্রয় নেয় যার স্বামী ছিল ইবনে যিয়াদের সৈনিক। হারেস তাদেরকে ফুরাতের কিনারায় নিয়ে যায় এবং নির্মমভাবে তাদের গলাকে কেটে হত্যা করে।
আমরু বিন হাসান:
আমরু বিন হাসান ছিলেন কারবালার আরেকজন সাহসী বালক সৈনিক যনি বন্দি হন। একদা এজিদ তাকে বলে: তুমি কি আমার পুত্র আব্দুল্লাহ’এর সাথে কুস্তি লড়াই করবে। আমরু বিন হাসান তার জবাবে বলে কুস্তি লড়াই করার মতো আমার দেহে শক্তি নাই তবে তুমি যদি আমাকে এবং তোমার পুত্রকে একটি করে চাকু দাও তাহলে হয়তো আমি লড়াই করতে রাজি আছি। যদি তার চাকুর আঘাতে আমি মারা যায় তাহলে আমি আমার পূর্বপুরুষ হজরত মোহাম্মাদ (সা.) এর সাথে মিলিত হব আর যদি সে আমার চাকুর আঘাতে মারা যায় তাহলে আবু সুফিয়ানের সাথে মিলিত হবে। এজিদ তার উত্তরে হতবাক হয়ে পড়ে।
কারবালার যুদ্ধে পুরুষদের সাথে বাচ্চাদের ভুমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। আর বাচ্চাদের উক্ত যুদ্ধে প্রতক্ষ্য এবং পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ আমাদেরকে তিনটি উল্লেযোগ্য দিক নির্দেশনা দেয়:
১- আশুরার স্মৃতীকে জীবিত রাখার শিক্ষা।
২- পাপীদের হেদায়াতের শিক্ষা।
৩- আশুরার বার্তা সকলের কাছে পৌছানোর শিক্ষা।
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন