নেতানিয়াহুর ইরান বিরোধী বক্তব্যের উদ্দেশ্য নির্বাচনি ফায়দা হাসিল


নেতানিয়াহুর ইরান বিরোধী বক্তব্যের উদ্দেশ্য নির্বাচনি ফায়দা হাসিল

 

 

গত একমাস ধরে ব্যাপক গুঞ্জন ও বিতর্ক চলা পর ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু গতকাল মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে বক্তব্য দিয়েছেন। এর আগে তিনি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বক্তব্য দিয়ে গণমাধ্যমগুলোর হাসির খোরাকে পরিণত হয়েছিলেন এবং আন্তর্জাতিক সমাজও তাকে তিরস্কার করেছিল। তাই নেতানিয়াহু এবার অনেক বড় আশা নিয়ে কংগ্রেসে বক্তব্য দিয়েছিলেন। প্রায় দুই সপ্তাহ পর ইসরাইলে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে বিজয়ের কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। এ কারণে তিনি উগ্রপন্থীদের সমর্থন লাভের জন্য ইরানের পরমাণু কর্মসূচির বিরুদ্ধে প্রচারণা জোরদার করেছেন।

 

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এ লক্ষ্যে ইতিহাস বিকৃতি, তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএসআইএলসহ বিভিন্ন বিষয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচার এবং ইরানের পরমাণু কর্মসূচির বিরুদ্ধে প্রচারণার আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু তারপরও নেতানিয়াহু ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছেন। মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্রেট দলের সদস্য ন্যানসি পোলুসি নেতানিয়াহুর বক্তব্যকে ‘রাজনৈতিক নাট্য-মঞ্চ’বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ ছাড়া আরো অন্তত ৫০ জন প্রতিনিধি নেতানিয়াহুর ভাষণ বর্জন করেছেন। তবে যারা তার ভাষণ শুনেছেন তাদের অনেকে নেতানিয়াহুর বক্তব্যকে একই কথার পুনরাবৃত্তি এবং অনর্থক আখ্যায়িত করে বলেছেন,  আসন্ন নির্বাচনে ফায়দা হাসিল করাই তার প্রধান উদ্দেশ্য।

 

বিশ্লেষকরা বলছেন, বরাবরের মত ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর এবারের বক্তব্য বিভিন্ন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। অনেকের মতে নেতানিয়াহু প্রতারণার যে আশ্রয় নিয়েছেন তা তার অনেক পুরানো কৌশল। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী ১৯৯২ সালে সংসদ সদস্য থাকাকালে দাবি করেছিলেন, ইরান আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে পরমাণু বোমা বানাতে সক্ষম হবে। এরপর ১৯৯৬ সালে তিনি মার্কিন কংগ্রেসে দেয়া ভাষণে ইরানের পরমাণু শক্তিধর হয়ে ওঠাকে প্রতিহত করার জন্য আন্তর্জাতিক সমাজের প্রতি আহবান জানিয়েছিলেন। ১৯৯৭ সালেও তিনি বিবিসি চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাতকারে ইরানের বিরুদ্ধে পরমাণু অস্ত্রবাহী ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের গোপন মজুদ গড়ে তোলার অভিযোগ করেছিলেন। তিনি আরো দাবি করেছিলেন, ইরান খুব শিগগিরি নিউইয়র্ক শহরের মাঝখানে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানবে।

 

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর এ ধরণের মিথ্যাচার এখনো অব্যাহত রয়েছে। ২০১২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দেয়া ভাষণে নেতানিয়াহু একটি কার্টুন চিত্র তুলে ধরে দাবি করেছিলেন, ইরান এক বছরের কম সময়ের মধ্যে পরমাণু বোমা বানাতে সক্ষম হবে।

 

অবশ্য ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু  বাস্তবতা সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত আছেন। কিছুদিন আগে গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, নেতানিয়াহুর দাবি বা বক্তব্যের সঙ্গে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ব্যাপারে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রতিবেদনের কোনো মিল নেই। মোসাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে না। কিন্তু তারপরও ইরান পরমাণু বোমা তৈরির চেষ্টা করছে বলে দাবি করে নেতানিয়াহু বিশ্ববাসীকে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করছেন।

 

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী ইরানের পরমাণু কর্মসূচির বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিলেও তাতে কেউ তেমন সাড়া দেয়নি। নেতানিয়াহুর বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, তাতে নতুন এমন কোনো বক্তব্য ছিল না যাতে অন্যদেরকে আকৃষ্ট করতে পারে।

 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন