ইসরাইলকে সহযোগিতার ওপর ওবামা সরকারের গুরুত্বারোপ

মার্কিন কংগ্রেসে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বক্তৃতা দেওয়া নিয়ে যখন ব্যাপক বিতর্ক চলছে তখন তেলাবিবের প্রতি সহায়তা ও সমর্থনের ওপর গুরুত্বারোপ করলো মার্কিন সরকার।   
 
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ সম্প্রতি একটি তালিকা দিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করেছে। ওই তালিকায় গত ছয় বছরে ওবামা সরকার তেলাবিবকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিক ক্ষেত্রে কী কী সাহায্য করেছে তার ফিরিস্তি দেওয়া হয়েছে। তালিকায় এসেছে অপরিশোধ্য সামরিক সাহায্য, যুদ্ধ সরঞ্জামাদি বিক্রি এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ইসরাইল-বিরোধী প্রস্তাবে ভেটো দেওয়ার বিবরণ।
 
আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের দেওয়া এই বিবৃতিতে যদিও ওয়াশিংটন-তেলাবিবের মধ্যকার সহযোগিতার মাত্রাগত কোনো নতুন চিত্র ফুটে ওঠে নি তারপরও এই বিবৃতি প্রকাশের সময়টা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। গেল কয়েক সপ্তায় নেতানিয়াহুর বক্তব্য দেওয়াকে কেন্দ্র করে নেতানিয়াহুর সঙ্গে মার্কিন কর্মকর্তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে।
 
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামার নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুসান রাইস কয়েকদিন আগে নেয়ানিয়াহুর কড়া সমালোচনা করে বলেছেন, মার্কিন সরকারের সম্মতি ছাড়া যদি নেতানিয়াহু কংগ্রেসে বক্তব্য দেয় তাহলে ওয়াশিংটন-তেলাবিবের মধ্যকার সম্পর্কে মারাত্মক আঘাত আসবে। সুজান রাইসের এই বক্তব্যের কয়েকদিন পরই আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ এই বিবৃতি প্রকাশ করলো। কারণ হলো এটা প্রমাণ করা যে ইসরাইলকে সামরিক,অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার ক্ষেত্রে ওয়াশিংটন এখনো আগের অবস্থানেই রয়েছে। কিন্তু কোনো কোনো বিশ্লেষক মনে করছেন কিছু তথ্য-প্রমাণে দেখা যায় দু’দেশের সম্পর্কে যদি কোনোরকম ফাটল সৃষ্টি নাই হবে তাহলে বারাক ওবামা ইসরাইলকে মার্কিন সহায়তার বিষয়টি প্রমাণ করার প্রয়োজনই মনে করতেন না।
 
একইভাবে মার্কিন কর্মকর্তারা নেতানিয়াহুর ব্যাপক সমালোচনা করার পরও মার্কিন নিরাপত্তা পরিষদ যেভাবে বিবৃতি দিয়েছে তা থেকেও প্রমাণ হয় যে বাহ্যিকভাবে দু’দেশের নেতাদের মাঝে বাক-বিতণ্ডা সত্ত্বেও এ দুই মিত্রের মাঝে কৌশলগত সম্পর্কে কোনো পরিবর্তন আসে নি। মার্কিন নেতাদের দৃষ্টিতে ইসরাইলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার বিষয়টি ওয়াশিংটন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখে।এমনকি তারা মনে করে ইসরাইলকে যে-কোনো মূল্যে রক্ষা করতে হবে,এমনকি নিজেদের জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে হলেও।
 
তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জি-স্ট্রিটের মতো কিংবা লিবারেল ডেমোক্র্যাটদের মতো ইসরাইলি লবিগুলো ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন নেতানিয়াহুকে নিয়ে। তার উগ্র আচরণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসরাইল কোনঠাসা হয়ে পড়তে পারে এ আশঙ্কার কারণেই তারা উদ্বিগ্ন। এসব দিকের প্রতি লক্ষ্য রেখেই বারাক ওবামা বাহ্যিকভাবে হলেও নেতানিয়াহুকে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইহুদি বসতি নির্মাণ করতে নিষেধ করেছিল। সেইসাথে ওবামা ছয় জাতিগোষ্ঠির সাথে ইরানের পরমাণু বিষয়ক আলোচনা প্রক্রিয়ায় নেতানিয়াহুর দৃষ্টিভঙ্গিও উপেক্ষা করে।
 
সামগ্রিকভাবে বলা যায় ওবামা-নেতানিয়াহুর মধ্যকার ব্যক্তিগত মতপার্থক্য সত্ত্বেও আমেরিকা এখনো ইসরাইলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। এই পৃষ্ঠপোষকতার কারণে বিশেষ করে গত ছয় বছরে ইসরাইলকে দুই হাজার দুই শ কোটি ডলারের সামরিক সাহায্য দেওয়া না হলে এবং ইসরাইল বিরোধী অসংখ্য প্রস্তাবে ভেটো দেওয়া না হলে নেতানিয়াহু এখন ওবামার বিরোধীদের আমন্ত্রণে কংগ্রেসে ভাষণ দিতে যাবার সাহস করতো না। ওবামাকে অবহিত না করে এই আমন্ত্রণে সাড়া দেওয়ার ঘটনায় ওবামা সরকারের পররাষ্ট্রনীতি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বলেই বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছেন।

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন