ওহাবী ও তাকফিরী টেররিষ্ট দায়েশদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলার ক্ষেত্রে হযরত আয়াতুল্লাহ আল উজমা চিসতানীর নির্দেশ

ওহাবী ও তাকফিরী টেররিষ্ট দায়েশদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলার ক্ষেত্রে হযরত আয়াতুল্লাহ আল  উজমা চিসতানীর নির্দেশ

 

ইরাকে দায়েশের সাথে  যুদ্ধ চলা অবস্থায় ইরাকী যোদ্ধাদেরকে সম্বোধোন করে হযরত আয়াতুল্লাহ আল  উজমা চিসতানী কিছু নির্দেশ দিয়েছেন এবং তিনি গুরুত্বারোপ করেছেন যে দায়েশের সাথে যুদ্ধ করতে গিয়ে কোনভাবেই যেন দীনী বিধান লংঘন করা না হয়। তিনি যে নির্দেশ প্রদান করেছেন তা নিম্নরূপঃ

 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য  এবং দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের প্রতি।

    যে সকল যোদ্ধাদেরকে মহান রাব্বুল আলামিন ‍রণক্ষেত্রে উপস্থিত হয়ে সীমা লংঘণকাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার তৌফিক দান করেছেন তাদের যেনে রাখা দরকার যেঃ

১. মহান আল্লাহ যেভাবে মোমিদেরকে জিহাদ করার নির্দেশ দিয়েছেন, জিহাদকে দ্বীনের স্তম্ভ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন এবং মোজাহেদদেরকে বাড়িতে অবস্থানরত ব্যক্তিদের ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন; সেভাবে জিহাদের জন্য আদব ও নিয়ম কানুনও নির্ধারণ করেছেন। তোমরা এ নিয়ম কানুন রক্ষা করবে। যারা এ কানুন মেনে চলবে তারা আল্লাহর নিকট হতে বরক ও করুণা প্রাপ্ত হবে।

২. জিহাদের কিছু সাধারণ নিয়ম রয়েছে, এসব নিয়ম অবশ্যই মেনে চলতে হবে যদিও তা অমুসলিমের বিরুদ্ধে হয়। নবি করিম (সাঃ) বলেছেনঃ আল্লার উদ্দেশ্যে জিহাদ করবে, জিহাদে গিয়ে বাড়াবাড়ি করবে না, নিহত ব্যক্তির অংগপ্রতংগ কর্তন করবে না, প্রতারণা করবে না,বৃদ্ধ, দুর্বল , শিশু ও মহিলাদেকে হত্যা করবে না এবং অপ্রয়োজনে গাছ কাটবে না।

৩. অত্যাচারী মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ করারও কিছু নিয় রয়েছে, এ ক্ষেত্রে ইমাম আলী (আঃ) হতে আমাদেরকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। তিনি তাঁর সাথীদেরকে অত্যাচারী  ‍মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ করার আদব শিক্ষা দিয়েছেন।

৪. নিরঅপরাধ মানুষদেরকে হত্যা করবে না। ইমাম আলী (আঃ) কখনো যুদ্ধ করতে গিয়ে বেগুনাহ ব্যক্তিদেরকে হত্যা কনেনি। তিনি জনাব মালেক আশতারকে বলেনঃ কখনো অন্যায়ভাবে কাউরো রক্ত ঝরাবে না; কেননা এর জন্য কঠিন আজাব রয়েছে। এ ধরণের কাজের মাধমে হুকুমত দুর্বল হবে।

৫. যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসেনি তাদের প্রতি কোন ধরণের নির্যাতন করবে না, বিষেশ করে দুর্বল, বৃদ্ধ, শিশু ও মহিলাদের প্রতি। এমনকি যারা তোদের সাথে যুদ্ধ করছে তাদের আত্মীয় স্বজনদের প্রতি কোন ধরণের নির্যাতন করবে না। মনে রেখ আমিরুল মোমিনিন আলী (আঃ) কখনো এ ধরণের কাজ করতেন না।

৬. খাওরেজদের ন্যায় কোন ব্যক্তিকে অপবাদ দেওয়ার মাধ্যমে সীমা লংঘন করবে না। মনে রেখ যারা কালেমা পাঠ করে তারা মুসলমান। তাদের জান  ও মাল সম্মানিত, যদিও তারা কোন কোন প্রকার বেদআত করে থাকে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হচ্ছেঃ

يا أَيُّهَا الَّذينَ آمَنُوا إِذا ضَرَبْتُمْ في‏ سَبيلِ اللَّهِ فَتَبَيَّنُوا وَ لا تَقُولُوا لِمَنْ أَلْقى‏ إِلَيْكُمُ السَّلامَ لَسْتَ مُؤْمِناً تَبْتَغُونَ عَرَضَ الْحَياةِ الدُّنْيا فَعِنْدَ اللَّهِ مَغانِمُ كَثيرَةٌ كَذلِكَ كُنْتُمْ مِنْ قَبْلُ فَمَنَّ اللَّهُ عَلَيْكُمْ فَتَبَيَّنُوا إِنَّ اللَّهَ كانَ بِما تَعْمَلُونَ خَبيراً

হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন আল্লাহর পথে সফর কর, তখন যাচাই করে নিও এবং যে, তোমাদেরকে সালাম করে তাকে বলো না যে, তুমি মুসলমান নও। তোমরা পার্থিব জীবনের সম্পদ অন্বেষণ কর, বস্তুতঃ আল্লাহর কাছে অনেক সম্পদ রয়েছে। তোমরা ও তো এমনি ছিলে ইতিপূর্বে; অতঃপর আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। অতএব, এখন অনুসন্ধান করে নিও। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের কাজ কর্মের খবর রাখেন।

 

হাদিসেও এসেছে যে তোমরা অন্যদেরকে কাফের বলে আখ্যায়িত কর না। যেভাবে খাওয়ারেজ অন্যদেরকে কাফের বলে আখ্যায়িত করত।

ইমাম সাদিক (আঃ) বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেনঃ ইমাম আলী (আঃ) তাঁর শত্রুদেরকে মুশরেক ও মোনাফেক বলতেন না বরং তিনি বলতেনঃ তারা আমাদের ভই কিন্তু অবাদ্ধ হয়েছে।

৭. অমুসলমানদের ক্ষেত্রেও সীমা লংঘণ করবে না, তারা যে ধর্মে অনসারীই হোক না কেন। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হচ্ছেঃ

لا يَنْهاكُمُ اللَّهُ عَنِ الَّذينَ لَمْ يُقاتِلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَ لَمْ يُخْرِجُوكُمْ مِنْ دِيارِكُمْ أَنْ تَبَرُّوهُمْ وَ تُقْسِطُوا إِلَيْهِمْ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطينَ

ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে ভালবাসেন।

 

৮. কোন মুসলমানের অর্থ সম্পদ লুন্ঠন করা যায়েজ নয়। যে অন্যের মাল লুন্ঠন করে সে জাহান্নামের আগুনে তার স্থান নির্ণয় করে নেয়। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হচ্ছেঃ

إِنَّ الَّذينَ يَأْكُلُونَ أَمْوالَ الْيَتامى‏ ظُلْماً إِنَّما يَأْكُلُونَ في‏ بُطُونِهِمْ ناراً وَ سَيَصْلَوْنَ سَعيراً

যারা এতিমদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে খায়, তারা আগুন দিয়ে নিজেদের পেট পূর্ণ করে এবং তাদেরকে অবশ্যিই জাহান্নামের জ্বলন্ত আগুনে ফেলে দেয়া হবে। 

     আমিরুল মোমিনিন আলী (আঃ) এর জীবনীতে দেখা যায় যে, তিনি যুদ্ধে শুত্রুদের গ্রহণ করা হতে বীরত থাকতে বলতেন।
৯. একজনের অপরাধের কারণে অন্যকে হাত ও মুখ দ্বরা কষ্ট দেওয়া হতে বীরত থেক এবং ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণে কাওকে কষ্ট দিবে না।

আমিরুল মোমিনিন আলী (আঃ) সিফফিনে যুদ্ধে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, কোন নিহত ব্যক্তির অংগ কর্তন করবে না। কাউরো বাড়ির পরর্দা সরাবে না ও বাড়িতে প্রবেশ করবে না। তাদের মাল গ্রহণ করবে না। মহিলাদের কষ্ট দিবে না।

১০. যতক্ষণ পর্যন্ত কোন গ্রুপ তোমাদের সাথে যুদ্ধ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদেরকে কোন হক হতে বঞ্চিত করবে না। আমিরুল মোমিনিন আলী (আঃ) তাঁর শত্রুদেরকেও যুদ্ধে অবতীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত কোন কিছু হতে বঞ্চিত করতেন না। তিনি কখনো প্রথমে যুদ্ধ শুরু করতে না।

১১. জেনে রেখ অধিকাংশ ব্যক্তিরাই ভুল বুঝে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে। তোমাদের ভুলের কারণে তাদের ভুল ধারণা যেন আরো বৃদ্ধি না পায়। ভাল ব্যাবহার, ক্ষমা ও ন্যায় পরায়নতার মাধ্যমে তাদেরকে ভুল ধারণা হতে অব্যাহতি দিতে পারবে। পবিত্র আহলে বাইত (আঃ) এর সিরাত এ ধরণেরই ছিল।

১২. তোমরা যেনে রাখ যে জুলুম ও নির্যাতনের মাধ্যমে কোনকিছুই ঠিক হবে না; বরং শুধু হিংসার সৃষ্টি হবে।

১৩. যদি সহানুভুতি দেখাতে গিয়ে সাময়িকভাবে তোমাদের কিছু ক্ষতিও হয় তবুও তাগহণ কর কেননা এতে কল্যাণ ও বরকত রয়েছে। পবিত্র আহলে বাইত (আঃ) এর তরফ হতে এ ধরণের অনেক উদাহরণ রয়েছে। যেমন জঙ্গে জামালে শত্রুপক্ষ আক্রমন না করা পর্যন্ত আমিরুল মোমিনিন আলী (আঃ) যুদ্ধের নির্দেশ নেননি।

১৪. যুদ্ধ উদ্ধেশিত এলাকার জনগণকে সহযোগিতা করবে যাতে করে তারাও তোমাদেরক সহযোগিত করে। তাদেরকে তোমাদের নিজেদের পরিবারের ন্যায় মনে করবে। যেনেরেখ তোমরা আল্লাহর দৃষ্টির অগচরে নও।

১৫. কখনো নামাজ আদায় করা হতে উদার্সীন হবে না। আল্লাহর নিকট নামাজের চেয়ে পছন্দনীয় এবাদত আর কোনকিছু নেই। নামাজ হচ্ছে দ্বীনে স্তম্ভ। নামাজ ব্যতিত কোন এবাদত কবুল হবে না। আল্লাহ তায়ালা যুদ্ধের অবস্থায় নামাজকে হালকা করে দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হচ্ছেঃ

حافِظُوا عَلَى الصَّلَواتِ وَ الصَّلاةِ الْوُسْطى‏ وَ قُومُوا لِلَّهِ قانِتينَ* فَإِنْ خِفْتُمْ فَرِجالاً أَوْ رُكْباناً فَإِذا أَمِنْتُمْ فَاذْكُرُوا اللَّهَ كَما عَلَّمَكُمْ ما لَمْ تَكُونُوا تَعْلَمُونَ

 তোমাদের নামাযগুলো সংরক্ষণ করো, বিশেষ করে এমন নামায যাতে নামাযের সমস্ত গুণের সমন্বয় ঘটেছে। আল্লাহর সামনে এমনভাবে দাঁড়াও যেমন অনুগত সেবকরা দাঁড়ায়। অশান্তি বা গোলযোগের সময় হলে পায়ে হেঁটে অথবা বাহনে চড়ে যেভাবেই সম্ভব নামায পড়ো। আর যখন শান্তি স্থাপিত হয়ে যায় তখন আল্লাহকে সেই পদ্ধতিতে স্মরণ করো, যা তিনি তোমাদের শিখিয়েছেন, যে সম্পর্কে ইতিপূর্বে তোমরা অনবহিত ছিলে।

১৬.  আল্লাহকে অধিক স্মরণ করবে এবং কোরআন তেলাওয়াত করবে। আমিরুল মোমিনিন আলী (আঃ এমনটিই করতেন। তিনি ‍সিফফিনের যুদ্ধে নামাজ পড়ছিলেন ও আল্লাহর জিকির করছিলেন। তাঁর আসপাস দিয়ে তীর অতিক্রম করছিল তবুও তিনি তার এবাদতে মশগুল ছিলেন।

১৭. যুদ্ধ ও সন্ধিতে তোমাদের অবস্থঅন যেন মহানবি (সাঃ) ও তাঁর আহলে বাইত (আঃ) এর ন্যায় হয়। ইসলাম বিবেককে কাজে লাগতে বলেছে এবং নেক চরিত্রের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে।

১৮. যুদ্ধের ময়দানে সাবধানতা অবলম্বন করবে এবং তাড়াহুড়া করা হতে বীরত থাকবে। পরস্পরের মাঝে ঐক্য বজায় রাখবে।

يا أَيُّهَا الَّذينَ آمَنُوا خُذُوا حِذْرَكُمْ فَانْفِرُوا ثُباتٍ أَوِ انْفِرُوا جَميعاً

 হে ঈমানদারগণ! মোকাবিলা করার জন্য সর্বক্ষণ প্রস্তুত থাকো। তারপর সুযোগ পেলে পৃথক পৃথক বাহিনীতে বিভক্ত হয়ে বের হয়ে পড়ো অথবা এক সাথে

إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الَّذينَ يُقاتِلُونَ في‏ سَبيلِهِ صَفًّا كَأَنَّهُمْ بُنْيانٌ مَرْصُوصٌ

আল্লাহ সেই সব লোকদের ভালবাসেন যারা তাঁর পথে এমনভাবে কাতারবন্দী হয়ে লড়াই করে যেন তারা সীসা গলিয়ে ঢালাই করা এক মজবুত দেয়াল।

১৯. জনগণের জন্য কল্যাণ কামনা করবে। প্রত্যেক মানুষ একে অপরের ওপর কিছু হক রাখে সে হক যেন আদায় করতে আমরা ভুলে না যায়। অন্যকে ক্ষমা করবে, ‍যদিও সে বড় কোন অপরাধ করে। যে প্রথমে ক্ষমা করে সে প্রতিদান ছাড়াও মহত্ত্বের কাজ আনজাম দেয়। যে ব্যাক্ত মুজাহিদকে সহযোগিতা করে সেও যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করার সওয়াব প্রপ্ত হবে।

২০. সকলেই অহেতুক হিংসা বিদ্বেশ হতে দুরে থাকতে হবে। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে বিভিন্ন বংশে বিভক্ত করেছেন যাতে করে তারা একে অপরকে চিন্তে পারে ও একে অন্যর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে। অহংকার হতে বীরত থাকবে। যেকোন প্রকার ফেতনা ফ্যাসাদ হতে দুরে থাকব। সকলেই আল্লাহর রসীকে আকড়ে ধরবে। আল্লাহ সবকিছুর ওপর সমতাসীন।

 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন