ইউরোপীয় মুসলমানরা ভুগছে নিরাপত্তহীনতায়
ইউরোপীয় মুসলমানরা ভুগছে নিরাপত্তহীনতায়
টিভি শিয়া: সম্প্রতি ইউরোপীয় দেশগুলোতে ইসলাম বিরোধিতার প্রবণতা ব্যাপক বেড়ে গেছে। বৃটিশ মুসলমানরাও ইসলাম বিরোধী তৎপরতার বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছে এমনকি তারা এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের কাছে প্রতিবাদলিপিও দিয়েছে। ওই প্রতিবাদলিপিতে ফ্রান্সের ম্যাগাজিনে রাসূলের অবমাননার বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়ে অন্তত এক লাখ লোক স্বাক্ষর করেছে।
একইভাবে তারা লন্ডনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর এবং পার্লামেন্টের সামনে বিশাল সমাবেশ করে শার্লি এবদো’র কার্যালয়ে সশস্ত্র হামলারও নিন্দা জানায়। উল্লেখ্য যে এই পত্রিকাটি বহুবার বিশ্বনবীর অবমাননাকর কার্টুন ছেপে বিশ্বের মুসলমানদের মনে আঘাত দিয়েছে যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
চলতি বছরের ৭ জানুয়ারিতে শার্লি এবদো’র অফিসে হামলার পর থেকে সমগ্র ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে হামলার ঘটনা বেড়ে গেছে। কিছুদিন আগে ইউরোপীয় কমিশন পশ্চিমা দেশগুলোতে মুসলিম-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। অথচ ৭ জানুয়ারির হামলার পর শার্লি এবদো ইসলাম অবমাননার মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ‘ইসলাম-বিদ্বেষ পর্যবেক্ষণ বিষয়ক ফরাশি পরিষদ’ ১৩ জানুয়ারিতে তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে ফ্রান্সে শার্লি এবদো’তে হামলার পর ইসলাম-বিদ্বেষী হামলার ঘটনা পঞ্চাশবারেরও বেশি হয়েছে।
ইতোমধ্যে জার্মানিতেও ইসলাম বিরোধী একটি গ্রুপ সেদেশে ব্যাপক মাত্রায় মুসলিম বিদ্বেষী কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। তারা তাদের ওই ইসলাম বিরোধী তৎপরতা অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও ওই গ্রুপটির কর্মকাণ্ড এখন পর্যন্ত সফল হয় নি।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, পেগিডা নামে পরিচিত জার্মানির এই ইসলাম-বিদ্বেষী গ্রুপটি অস্ট্রিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম শহর লিন্যে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিশাল মিছিল করতে গিয়ে ব্যর্থ হয় কেননা ওই মিছিলে দেড় শ’র বেশি লোক হয় নি। এই পেগিডা গত বছর থেকে অর্থাৎ এখন থেকে মাস তিনেক আগে জার্মানির ড্রেসডেন শহরে কয়েক শ লোকের অংশগ্রহণে বিক্ষোভ করার মধ্য দিয়ে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীকালে ২১ জানুয়ারিতে এই গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সরে দাঁড়ালে বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা আরো কমতে থাকে।
তারপরও জার্মান মুসলিম সেন্টার জানিয়েছে সেখানে নতুন করে মুসলমানদের ওপর হামলার ঘটনা বেড়ে গেছে। সেখানে এখন মুসলিম মনীষীদের অবমাননা করা কিংবা হিজাবধারী মুসলিম নারীদেরকে অপমান করার ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। জার্মান মুসলিম সেন্টার আরও জানিয়েছে সেদেশে প্রতি সপ্তায়ই মসজিদে হামলা চালাচ্ছে চরমপন্থিরা।
ফরাসি মুসলমানরাও জানিয়েছে সেখানে মুসলমানরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে, সেজন্য তারা নিরাপত্তার আবেদন জানিয়েছে কর্তৃপক্ষের কাছে।
এরকম পরিস্থিতিতে ইসলাম-বিদ্বেষের সমাধানের পরিবর্তে ইউরোপীয় সরকারগুলো বরং মুসলমানদের ওপর চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে শার্লির এবদো’র দফতরে হামলার দায়সহ বিচিত্র অভিযোগ আনছে তাদের বিরুদ্ধে। ইউরোপীয় দেশগুলোতে তাই মুসলমানদের ওপর চাপ বেড়ে যাওয়ায় সেখানে বসবাস করাটাই তাদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন