ইমাম হুসাইন (আ.)-এর চেহেলুম সংক্রান্ত বিষয়াবলি
ইমাম হুসাইন (আ.)-এর চেহেলুম সংক্রান্ত বিষয়াবলি
এস, এ, এ
ইতিহাসে ২০ শে সফর ইমাম হুসাইন (আ.)-এর চল্লিশার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।বিভিন্ন রেওয়ায়েত সমূহে ইমাম হুসাইন (আ.)এর চল্লিশার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন ইমাম হাসান আসকারী (আ.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন মুমিনদের চিহ্ন হচ্ছে যে, তারা ইমাম হুসাইন (আ.)-এর চল্লিশা পালন করবে।(আল মাযার, পৃষ্ঠা ৫৩)
ইমাম হুসাইন (আ.)-এর চল্লিশা সম্পর্কে দুইভাবে বর্ণিত হয়েছেঃ
১- সেদিন যখন কারবালার বন্দিরা শাম থেকে কারবালাতে আসে।
২- যেদিন জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারী কারবালাতে আসেন।
তবে কারবালার বন্দিরা কি এ দিনে কারবালাতে ফিরে এসেছিলেন সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে।
শেইখ মুফিদ তার গ্রন্থ মাশয়েরুশ শিয়া উল্লেখ করেছেন চল্লিশা হচ্ছে সেই দিন যেদিন আহলে বাইত (আ.) গণ শাম থেকে মদীনার উদ্দেশ্যে ফিরে আসেন এবং যেদিন জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ কারবালাতে প্রবেশ করেন।(মাশায়েরুশ শিয়া, পৃষ্ঠা ৪৬)
শেইখ তুসী মেসবাহুল মোতাহাজ্জেদ এবং ইবনে আসাম আল ফুতুহ নামক গ্রন্থে উক্ত বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। মিযা হুসাইন নূরী লিখেছেন শেইখ মুফিদ ও তুসীর বণনা অনুযায়ি বোঝা যায় যে ইমাম হুসাইন (আ.)এর চল্লিশা হচ্ছে সেদিন যেদিন আহলে বাইত (আ.) শাম থেকে মদীনার উদ্দেশ্যে রওনা হন। না যেদিন তারা মদীনাতে পৌছান। (মেসবাহুল মুজতাহেদীন, পৃষ্ঠা ৭৮৭, লুলু ওয়া মারজান, পৃষ্ঠা ১৫৪)
অন্যদিকে সৈয়দ ইবনে তাউস তার লাহুফ নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, ইমাম হুসাইন (আ.)এর চল্লিশা হচ্ছে সেদিন যেদিন কারবালার বন্দিরা শাম থেকে কারবালার উদ্দেশ্যে রওনা হয় তারা তাদের কাফেলা পরিচালককে বলে আমাদেরকে কারবালাতে নিয়ে চল। অতঃপর তারা ইমাম হুসাইন (আ.) এর শাহাদতের স্থানে উপস্থিত হন তারপর তারা সেখানে ইমাম হুসাইন (আ.) এর শাহাদতকে কেন্দ্র করে ক্রন্দন করেন। (আল লাহুফ ফি কাতালিল তাউফ, পৃষ্ঠা ১১৪)
“ইবনে নোমা হিল্লি” বন্দিদের শাম থেকে কারবালায় ফিরে আসা এবং সেখানে জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারী এবং কিছু বণি হাশিমের-এর সাথে সাক্ষাত করার দিনকে বুঝিয়েছেন। (মাসিরুল আহযান, পৃষ্ঠা ৮৬)
মিযা হুসাইন নূরী সৈয়দ ইবনে তাউস-এর কথা বণনা করেন এবং তার নাকদ ও করেছেন।(লুলু ওয়া মারজান, পৃষ্ঠা ২১৬)
রাসুল জাফারিয়ান লিখেছেন শেইখ মুফিদ ইরশাদ নামক গ্রন্থে এবং আবু মাখনাফ মাকতালে হুসাইন নামক গ্রন্থে, বালাজুরি ইনসাবুল আশরাফ নামক গ্রন্থে, দীনূরি তার আখবারুত তাওয়াল নামক গ্রন্থে, ইবনে সাআদ তার তাবাকাতুল কোবরা নামক গ্রন্থে বন্দিদের কারবালায় ফিরে আসার কোন কথা উল্লেখ করেনি। (নাআমালি নেহজাতে আশুরা, পৃষ্ঠা ২১৬)
শেইক আব্বাস কুম্মি-এর বণনামতে চল্লিশার দিনে বন্দিদের কারবালায় ফিরে আসার ঘটনাকে অসম্ভব বলে মনে করেন।(মুনতাহিউল আমাল, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৫২৫)
মোহাম্মাদ ইব্রাহিমে আয়াতি এবং শহীদ মোতাহহারী (রহ.) চল্লিশার দিনে বন্দিদের কারবালায় ফিরে আসার ঘটনাকে অস্বীকার করেছেন। শহীদ মোতাহহারী বলেছেন শুধুমাত্র লাহুফ নামক গ্রন্থে উক্ত ঘটনাটি উল্লেখ করা হয়েছে তাও আবার সৈয়দ ইবনে তাউস অন্য গ্রন্থে চল্লিশার ঘটনাটিতে অস্বিকার করেছেন এছাড়া অন্য কোন গ্রন্থে উক্ত বষিয়টিকে সত্যায়িত করেনি।(হামাসে হুসাইনী, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩০)
তবে জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারী-এর ৬১ হিজরীতে চল্লিশার দিনে কারবালায় প্রবেশের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং এ সম্পর্কে ইতিহাসে তেমন কোন মতভেদ দেখতে পাওয়া যায় না। শেইখ তুসি লিখেছেনঃ
প্রকৃতপক্ষে ইমাম হুসাইন (আ.) এর চল্লিশা হচ্ছে সেদিন যেদিন রাসুল (সা.) এর সাহাবী জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারী ইমাম হুসাইন (আ.) এর কবর মোবারক যিয়ারত করার জন্য কারবালাতে আসেন এবং তিনি হচ্ছে সর্বপ্রথম ইমাম হুসাইন (আ.) জিয়ারতকারী। (মেসবাহুল মোতাহাজ্জেদ, পৃষ্ঠা ১৩৯)
মরহুম আয়াতি লিখেছেন জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারী ঠিক চল্লিশার দিনে কারবালাতে পৌছান এবং তার মাধ্যমেই আরবাইনের যিয়ারতের প্রথা শুরু হয়। (বাররাসি তারিখে আশুরা, পৃষ্ঠা ২৩০-২৩১)
জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারীরর সাথে যে ব্যাক্তি কারবালাতে আসেন তিনি হচ্ছেন আতিয়া বিন সাআদ বিন জোনদা আওফি কুফি। আয়াতি তার ব্যাক্তিত্ব সম্পর্কে লিখেন যদিও সে ছিল একজন ইসলামের জ্ঞানী, মুফাসসির, তাবেঈন এবং আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসের ছাত্র। তিনি ৫ খন্ডের তাফসিরে কোরআন লিখেছেন এবং এছাড়াও তিনি ছিলেন একজন হাদীস বর্ণনাকারী। (বাররাসি তারিখে আশুরা, পৃষ্ঠা ২৩০-২৩১)
বাশারুতুল মোস্তোফা নামক গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে আতিয়া আওফি বলেছেন আমি হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারীর সাথে ইমাম হুসাইন (আ.) এর কবর মোবারক যিয়ারতের জন্য কারবালাতে উপস্থিত হই।জাবের ফুরাতের কিনারায় যায় গোসল করে এবং ভাল কাপড় পরিধান করে তারপর আমরা ইমাম হুসাইন (আ.) এর কবরের দিকে অগ্রসর হই। জাবের প্রতিধাপে খোদার যিকর করছিল। যখন আমরা কবরের কাছাকাছি পৌছায় তখন সে আমাকে বলে আমাকে কবরের কাছে নিয়ে চল।
আমি তার হাত নিয়ে কবরের উপরে রাখি জাবের কবরের উপরে হাত রেখে দুঃখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আমি সামান্য পানি নিয়ে তার মুখের উপরে ছিটালে সে জ্ঞান ফিরে পায় এবং তিনবার বলে ইয়া হুসাইন (আ.) তারপর সে বলে হে হুসাইন কেন আপনি আমার কথার জবাব দিচ্ছেন না?
তারপর সে নিজে নিজেই বলে আপনি কিভাবে জবাব দিবেন আপনার গলার রগ কেটে দেয়া হয়েছে এবং আপনার শরীর থেকে মাথাকে বিছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি হচ্ছেন রাসুল (সা.) এর নাতী মুমনিদের সর্দার এবং আসহাবে কেসার পঞ্চম সদস্য। দুরুদ ও সালাম হোক আপনার উপরে তারপর তিনি হুসাইন (আ.) এর কবরের চারিপাশে ঘুরেন এবং বলেন (السلام عليكم ايتها الارواح التي حلت بفناء الحسين ... اشهد انكم اقمتم الصلاة و آتيتم الزكاة و امرتم بالمعروف و نهيتم عن المنكر...)। (বাশারাতুল মোস্তফা, পৃষ্ঠা ১২৬)
আর আরবাঈন হচ্ছে সেই দিন যেদিন আহলে বাইত (আ.) গণ শাম থেকে মদীনার দিকে ফিরে আসেন।
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন