ইমাম হোসাইন (আ.)
ইমাম হোসাইন (আ.)
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র, বেহেশতী নারীদের নেত্রী হযরত ফাতিমার (সা.)কলিজার টুকরা এবং জ্ঞানের দরজা আমীরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ.)’র সুযোগ্য দ্বিতীয় পুত্র এবং ইসলামের চরম দূর্দিনের ত্রাণকর্তা ও শহীদদের নেতা হযরত ইমাম হোসাইন (আ.)।হিজরি চতুর্থ সনের তৃতীয় শা’বান এই ভূপৃষ্ঠে আগমণ করেন।
ইমাম হোসাইন (আ.)'র জন্মলগ্নে তার মা অর্থাৎ হযরত ফাতেমার (সা.) এর পাশে ছিলেন নবী (সা.)এর ফুপু সাফিয়া বিনতে আবদুল মোত্তালিব। রাসূল সে সময় তার ফুপুর কাছে এসে বলেন, হে ফুপু, আমার ছেলেকে আমার কাছে কাছে আনুন। তখন সাফিয়া বললেন, আমি তাকে এখনও পবিত্র করিনি। বিশ্বনবী (সা.) বললেন, "তাকে তুমি পবিত্র করবে? বরং আল্লাহই তাকে পরিষ্কার ও পবিত্র করেছেন।" ইমাম হোসাইন (আ.)’র জন্মের পর তার ডান কানে আজান ও বাম কানে ইক্বামত পাঠ করেছিলেন স্বয়ং বিশ্বনবী (সা.)। মহান আল্লাহর নির্দেশে তিনি এই শিশুর নাম রাখেন হোসাইন। এ শব্দের অর্থ সুন্দর, সৎ, ভালো ইত্যাদি।
হযরত সালমান ফারস (রা.) বলেছেন, একদিন দেখলাম যে, রাসূল (সা.) হোসাইন (আ.)-কে নিজের জানুর ওপর বসালেন ও তাকে চুমু দিলেন এবং বললেন,
" তুমি এক মহান ব্যক্তি ও মহান ব্যক্তির সন্তান এবং মহান ব্যক্তিদের পিতা। তুমি নিজে ইমাম ও ইমামের পুত্র এবং ইমামদের পিতা। তুমি আল্লাহর দলিল বা হুজ্জাত ও আল্লাহর হুজ্জাতের পুত্র এবং আল্লাহর নয় হুজ্জাতের (বা নয় ইমামের) পিতা, আর তাঁদের সর্বশেষজন হলেন হযরত ইমাম মাহদী (আ.)"।
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) তার প্রাণপ্রিয় নাতী হযরত হাসান ও হোসাইন (আ.)-কে নিজের সন্তান বলে অভিহিত করতেন। এ ছাড়াও তিনি বলেছেন, "নিশ্চয়ই হাসান ও হোসাইন জান্নাতে যুবকদের সর্দার।" (জামে আত-তিরমিজি, হাদিস নং-৩৭২০)
জাবের আনাস বিন মালেককে বললেন, “একদিন রাসুলে খোদা (সা.) কিছু সাহাবাদের নিয়ে মসজিদে উপবিষ্ট ছিলেন। তখন রাসুলে খোদা (সা.) আমাকে বললেন ঃ হে জাবের যাও হাসান ও হোসাইনকে আমার নিকট নিয়ে আস। জাবের বললেন ঃ পয়গাম্বার (সা.) ঐ দু’জনকে খুব ভালবাসেন, আমিও গিয়েছিলাম ঐ দু’জনকে আনতে। পথিমধ্যে কখনও একজনকে কখনও অন্যজনকে কোলে করে পয়গাম্বার (সা.) এর নিকট পৌঁছালাম। পয়গাম্বার (সা.) ওদের দু’জনের প্রতি আমার ভালবাসা ও মমতা দেখতে পেয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন হে জাবের! ঐ দু’জনকে তুমি ভালবাস কি?
আমি বললামঃ আমার বাবা ও মা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক। কেন ওদেরকে ভালবাসব না? আপনার নিকট তাঁদের মর্যাদা সম্পর্কে আমি অবগত।
অতঃপর পয়গাম্বার ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন (আ.) এর ফজিলত ও মহত্ত্ব সম্পর্কে বক্তব্য দেন এবং পরিশেষে ইমাম মেহেদী (আ.) এর পবিত্র আগমন ইমাম হোসাইন (আ.) এর বংশ থেকে ঘটবে তা উল্লেখ করেন।
রাসুলে খোদা (সা.) তার অব্যাহত বক্তৃতায় বলেন ঃ তাঁদের ফজিলত সম্পর্কে কি তোমাকে বলবো? আমি বললাম ঃ হ্যাঁ, আমার পিতা ও মাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক। পয়গাম্বার (সা.) বললেন ঃ মহান আল্লাহ তায়ালা আমাকে সৃষ্টি করতে যখন মনস' করলেন; আমাকে একটি শুভ্র রঙ্গের শুক্রের আকৃতিতে সৃষ্টি করলেন এবং আমার আদি পিতা আদম (আ.) এর অস্থির মধ্য তার প্রবেশ ঘটালেন; এমনিভাবে আমাকে পবিত্র অস্থি থেকে পবিত্র গর্ভে স্থানান্তরিত করতেন, তার ধারাবাহিকতা হিসেবে হযরত নুহ, হযরত ইব্রাহীম ও হযরত আব্দুল মোতালেব এর নিকট স্থানান্তরিত হল।
কখনও অজ্ঞতার কলুষতা আমার নিকট পৌঁছাইনি সর্বশেষ ঐ শ্বেত শুক্র দুইভাগে বিভক্ত হলো। এক ভাগ আমার বাবা আব্দুল্লাহ ও অন্য ভাগ আমার চাচা আবু তালেবর অভ্যন্তরে প্রবেশ ঘটলো। আব্দুল্লাহ ঐ পবিত্র ও নুরানী শুক্র থেকে আমাকে জন্ম দিয়েছেন। আর আমি হলাম আমার খোদার সর্বশেষ প্রেরিত রাসুল, আর নবুওয়াত আমার ঊপর সমাপ্ত হয়েছে। আর আবুতালেব থেকে আলীর জন্ম হয়। যিনি সর্বশেষ পয়গাম্বরের ওসী বা ঊত্তরসূরী। আমার ও আলীর শুক্রের সংমিশ্রনের মাধ্যমে দু’জন সুন্দর ফুটফুটে সন্তান হাসান ও হোসাইনের আগমন ঘটে। যারা আল্লহর পয়গাম্বারের সর্বশেষ বংশধর আর আল্লাহ তায়ালা আমার বংশধর ঐ দু’জন থেকে অব্যাহত রেখেছে।
অতঃপর পয়গাম্বার (সা.) হোসাইন (আ.) এর দিকে ইঙ্গিত করে বললেনঃ আমার সর্বশেষ ঊত্তরসূরী যিনি পূর্ণ বিজয়ের মাধ্যমে কাফেরদের সকল শহর জয় করবেন এবং অন্যায় ও অত্যাচারে ভরপূর জমিনকে ন্যায় ও ইনসাফে পরিপূর্ণ করবেন। তিনি হবেন তার বংশ হতে।
আমার এই দু’সন্তান হাসানাইন পাক পবিত্র ও বেহেস্তের যুবকদের সর্দার। সৌভাগ্যবান তারাই যারা এ দুজন ও তাঁদের পিতামাতাদে রকে ভালবাসবে। আর দুর্ভাগ্য তাদের যারা এদুজন ও তাদের পিতা মাতাদের সাথে শত্রুতা করবে।(আল খাসায়েসুন নাবুওয়াহ)
হযরত ইমাম হোসাইন বিন আলী (আ.) ছয় বছরেরও কিছু বেশি সময় পর্যন্ত নানা বিশ্বনবী (সা.)'র সান্নিধ্য পেয়েছিলেন।
ইমাম হোসাইনের (আ.) ইমামত কাল ছিল ১০ বছর তার ইমামতের শেষ ৬মাস ছাড়া বাকী সমগ্র ইমামতকালই মুয়াবিয়ার খেলাফতের যুগেই কেটেছিল। তার ইমামতের পুরো সময়টাতেই তিনি অত্যন্ত কঠিন দূর্যোগপূর্ণ ও শ্বাসরূদ্ধকর পরিবেশে জীবন যাপন করেন। কারণ, ঐযুগে ইসলামী আইন-কানুন মর্যাদাহীন হয়ে পড়েছিল। তখন খলিফার ব্যক্তিগত ইচ্ছাই আল্লাহ্ ও তার রাসুল (সা.)-এর ইচ্ছার স্থলাভিষিক্ত হয়ে পড়ে। মুয়াবিয়া ও তার সঙ্গীসাথীরা পবিত্র আহলে বাইতগণ (আ.) ও শীয়াদের ধ্বংস করা এবং ইমাম আলী (আ.) ও তার বংশের নাম নিশ্চিহ্ন করার জন্যে এমন কোন প্রকার কর্মসূচী নেই যা অবলম্বন করেনি। শুধু তাই নয় মুয়াবিয়া স্বীয় পুত্র ইয়াযিদকে তার পরবর্তী খলিফা হিসেবে মনোনীত করার মাধ্যমে স্বীয় ক্ষমতার ভিত্তিকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। কিন্তু ইয়াযিদের চরিত্রহীনতার কারণে একদল লোক তার প্রতি অত্যন্ত অসন্তুষ্ট ছিল। তাই মুয়াবিয়া এ ধরণের বিরোধীতা রোধের জন্যে অত্যন্ত কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ইচ্ছাকৃতভাবে হোক আর অনিচ্ছাকৃত ভাবেই হোক, হযরত ইমাম হোসাইন (আ.)-কে এক অন্ধকারাচ্ছান্ন দূর্দিন কাটাতে হয়েছে। মুয়াবিয়া ও তার অনুচরদের পক্ষ থেকে সর্বপ্রকার মানসিক অত্যাচার তাকে নিরবে সহ্য করতে হয়েছিল। অবশেষে হিজরী ৬০ সনের মাঝামাঝি সময়ে মুয়াবিয়া মৃত্যুবরণ করে। তার মৃত্যূর পর তার পুত্র ইয়াযিদ তার স্থলাভিষিক্ত সে যুগে বাইয়াত (আনুগত্য প্রকাশের শপথ গ্রহণ) ব্যবস্থা আরবদের মধ্যে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রথা হিসেবে প্রচলিত ছিল। বিশেষ করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের পক্ষ থেকে রাজা বাদশা বা খলিফার প্রতি তাদের আনুগত্য প্রকাশের জন্যে অবশ্যই বাইয়াত গ্রহণ করা হত। বাইয়াত প্রদানের পর তার বিরোধীতা করা বিরোধী ব্যক্তির জাতির জন্যে অত্যন্ত লজ্জাকর ও কলঙ্কের বিষয় হিসেবে গণ্য করা হত। এমনকি মহানবী (সা.)-এর জীবনাদর্শে ও স্বাধীন ও ঐচ্ছিকভাবে প্রদত্ত বাইয়াতের নির্ভরযোগ্যতার অস্তিত্ব বিদ্যমান ছিল। মুয়াবিয়াও আরবের প্রথা অনুযায়ী তার পরবর্তী খলিফা হিসেবে জনগণের কাছ থেকে স্বীয়পুত্র ইয়াযিদের পক্ষে বাইয়াত গ্রহণ করে। কিন্তু মুয়াবিয়া এ ব্যাপারে ইমাম হোসাইন (আ.)-এর বাইয়াত গ্রহণের ব্যাপারে তাকে কোন প্রকার চাপ প্রয়োগ করেনি। শুধু তাই নয়, মৃত্যুর পূর্বে সে ইয়াযিদকে বিশেষভাবে ওসিয়াত করে গিয়েছিল যে, ইমাম হোসাইন (আ.) যদি তার (ইয়াযিদ) আনুগত্য স্বীকার (বাইয়াত) না করে, তাহলে সে (ইয়াযিদ) যেন এ নিয়ে আর বেশী বাড়াবাড়ি না করে। বরং নীরব থেকে এ ব্যাপারটা যেন সে এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করে। এখানে বলে রাখা দরকার যে, মুয়াবিয়ার সাথে ইমাম হাসানের (আ.) চুক্তি হয়েছিলো যে - মুয়াবিয়ার মৃত্যুর পর ইমাম হাসান এবং তদপরবর্তী ইমাম হুসাইন (আ.)খলিফা হবেন। কিন্তু মুয়াবিয়া চুক্তি ভঙ্গ করে লম্পট মাতাল ইয়াজিদকে খলিফা মনোনিত করে ।
কিন্তু ইয়াযিদ তার চরম অহংকার ও দুঃসাহসের ফলে পিতার ওসিয়তের কথা ভুলে বসল। তাই পিতার মৃত্যুর পর পরই সে মদীনার গর্ভণরকে তার পক্ষ থেকে ইমাম হোসাইন (আ.)-এর কাছ থেকে বাইয়াত গ্রহণের নির্দেশ দিল। শুধু তাই নয়, ইমাম হোসাইন (আ.) যদি বাইয়াত করতে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে তৎক্ষণাৎ তার কর্তিত মস্তক দামেস্কে পাঠানোর জন্যেও মদীনার গর্ভণরের কাছে কড়া নির্দেশ পাঠানো হয়।
মদীনার প্রশাসক হযরত ইমাম হোসাইন (আ.)-কে যথা সময়ে ইয়াযিদের নির্দেশ সম্পর্কে অবহিত করেন। ইমাম হোসাইন (আ.) ঐ বিষয়ে চিন্তাভাবনা করে দেখার জন্যে কিছু অবসর চেয়ে নিলেন।
৬০ হিজরীর রজব মাসের শেষ অথবা শাবান মাসের প্রথম দিকে তিনি ইয়াজিদের অবৈধ শাসনকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানানোর পর নিজ শহর মদীনা ত্যাগ করে সপরিবারে মক্কায় চলে এসেছিলেন। ইমাম হোসাইন (আ.) প্রায় চার মাস যাবৎ মক্কায় অবস্থান করেন। আর ধীরে ধীরে এ সংবাদ তদানিন্তন ইসলামী বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।
পবিত্র মক্কা শহরে এসে ইমাম অবৈধভাবে খেলাফত দখলকারী উমাইয়া শাসকদের ভণ্ডামি ও তাদের জুলুম-অত্যাচার এবং খোদাদ্রোহী চরিত্র সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করেন। মক্কায় অবস্থানকালে ততকালীন মুসলিম বিশ্বের জটিল পরিস্থিতির বিষয়টি জনগণের কাছে তুলে ধরেছিলেন খাঁটি ইসলামের ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত এই মহান ইমাম। মুয়াবিয়ার অত্যাচারমূলক ও অবৈধ শাসনে ক্ষিপ্ত অসংখ্য মুসলমান ইয়াযিদের এহেন কার্যকলাপে আরও অসন্তুষ্ট ও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। আর এদিকে ইরাকের কুফা নগরী থেকে ইমামকে আমন্ত্রন জানিয়ে অনেক চিঠি আসতে লাগল। ঐসব চিঠির মূল বক্তব্য ছিল এটাই যে, তিনি যেন ইরাকে গিয়ে সেখানকার জনগণের নেতৃত্বের দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেন এবং অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ান। অন্য দিকে আসন্ন হজ্ব উপলক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসলমানরা দলে দলে মক্কায় সমবেত হতে লাগল। নরপিশাচ ইয়াজিদ বিপদের আভাস পেয়ে মক্কায় হাজীর বেশে একদল অস্ত্রধারী গুপ্তঘাতক প্রেরণ করল ।তাদের লক্ষ ছিল ইমাম (আ.) কে হত্যা করা।
জালিম উমাইয়া শাসক ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়ার পাঠানো গুপ্ত-ঘাতক ও হজ্বযাত্রীর ছদ্মবেশধারী সন্ত্রাসীদের হাতে যাতে এই পবিত্র স্থান তথা 'শান্তির নগরী' মক্কার মর্যাদা ক্ষুণ্ণ না হয় বা মক্কার পবিত্র ভূমি রক্তে-রঞ্জিত না হয় সে জন্যই তিনি হজ্জব্রত শেষ না করেই মক্কা ত্যাগ করেছিলেন।
হজ্জ উপলক্ষে আগত বিশাল জনগোষ্ঠীর সামনে তিনি সংক্ষিপ্ত এক বক্তব্য পেশ করেন । প্রদত্ত বক্তব্যে তিনি তার যাত্রার উদ্দেশ্য ও নিজ সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করেন। একই সাথে তার আসন্ন শাহাদত প্রাপ্তির কথাও তিনি ঐ জনসভায় ব্যক্ত করেন। আর তাকে ঐ মহান লক্ষ্যে (অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ) সহযোগিতা করার জন্যে উপস্থিত মুসলমানদেরকে আহ্বান জানান। উক্ত বক্তব্যের পরপরই তিনি কিছু সংখ্যক সহযোগীসহ স্বপরিবারে ইরাকের পথে যাত্রা করেন।
হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) কোন ক্রমেই ইয়াযিদের কাছে ‘বাইয়াত’ প্রদান না করার জন্যে সুদৃঢ় সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ভাল করেই জানতেন যে, এ জন্যে তাকে প্রাণ বিসর্জন দিতে হবে। তিনি এটাও জানতেন যে, বনি উমাইয়াদের বিশাল ও ভয়ংকার যোদ্ধা বাহিনীর দ্বারা তাকে সম্পূর্ণ রূপে নিশ্চিহ্ন করা হবে। অথচ, ইয়াযিদের ঐ বাহিনী ছিল সাধারণ মুসলমানদের, বিশেষ করে ইরাকী জনগণেরই সর্মথনপুষ্ট।
শুধুমাত্র সে যুগের অল্প ক’জন গণ্যমান্য ব্যক্তি হযরত ইমাম হোসাইন (আ.)-এর শুভাকাংখী হিসাবে ইরাক অভিমুখে যাত্রার ব্যাপারে তাকে বিরত রাখার চেষ্টা করেন। তারা ইমাম হোসাইন (আ.)-এর ঐ যাত্রা ও আন্দোলনের বিপজ্জনক পরিণতির কথা তাকে স্মরণ করিয়ে দেন। কিন্তু তাদের প্রতিবাদের উত্তরে ইমাম হোসাইন (আ.) বলেন, আমি কোন অবস্থাতেই ইয়াযিদের বশ্যতা শিকার করব না। অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠীকে আমি কোন ক্রমেই সমর্থন করব না। আমি যেখানেই যাই না কেন, অথবা যেখানেই থাকি না কেন, তারা আমাকে হত্যা করবেই। আমি এ মূহুর্তে মক্কা নগরী এ কারণেই ত্যাগ করছি যে, রক্তপাত ঘটার মাধ্যমে আল্লাহ ঘরের পবিত্রতা যেন ক্ষুন্ন না হয়।”
অতঃপর ইমাম হোসাইন (আ.) ইরাকের কুফা শহরের অভিমুখে রওনা হন। কুফা শহরে পৌঁছাতে তখনও বেশ ক’দিনের পথ বাকী ছিল। এমন সময় পথিমধ্যে তার কাছে খবর পৌঁছাল যে, ইয়াযিদের পক্ষ থেকে নিযুক্ত কুফার প্রশাসক ইমাম হোসাইন (আ.)-এর প্রেরিত বিশেষ প্রতিনিধিকে হত্যা করেছে। একই সাথে ইমাম হোসাইন (আ.)-এর জনৈক জোরালো সর্মথক এবং কুফা শহরের একজন বিখ্যাত ব্যক্তিকেও হত্যা করা হয়েছে। এমনকি হত্যার পর তাদের পায়ে রশি বেঁধে কুফা শহরের সকল বাজার এবং অলি গলিতে টেনে হিছড়ে নিয়ে বেড়ানো হয়েছে। এছাড়াও সমগ্র কুফা শহর ও তার পার্শ্বস্থ এলাকায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে। অসংখ্য শত্রু সৈন্য ইমাম হোসাইন (আ.)-এর আগমনের প্রতিক্ষায় দিন কাটাচ্ছে। সুতরাং শত্রু হস্তে নিহত হওয়া ছাড়া ইমাম হোসাইন (আ.)-এর জন্যে আর কোন পথই বাকী রইল না। তখন সবকিছু জানার পর ইমাম সুদৃঢ় ও দ্বিধাহীনভাবে শাহাদত বরণের সিদ্ধান্ত নিলেন এবং কুফার পথে যাত্রা অব্যাহত রাখলেন।
কুফা পৌঁছার প্রায় ৭০ কিঃ মিঃ পূর্বে কারবালা নামক মরুভুমিতে ইমাম পৌঁছলেন। তখনই ইয়াযিদের সেনাবাহিনী ইমাম হোসাইন (আ.)-কে ঐ মরু প্রান্তরে ঘেরাও করে ফেললো। ইয়াযিদ বাহিনী আটদিন পর্যন্ত ইমাম হোসাইন (আ.) ও তার সহচরদের সেখানে ঘেরাও করে রাখল। প্রতিদিনই তাদের ঘেরাওকৃত বৃত্তের পরিসীমা সংকীর্ণ হতে থাকে। আর শত্রু সৈন্য ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে লাগল। অবশেষে হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) তার স্বীয় পরিবারবর্গ ও অতি নগণ্য সংখ্যক সহচরসহ তিরিশ হাজার যুদ্ধাংদেহী সেনাবাহিনীর চারিদিক থেকে পরিবেষ্টিত হলেন।
এক রাতে তিনি তার সকল সঙ্গী সাথীদেরকে একত্রিত করে তাদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত ভাষণে তিনি বললেনঃ মৃত্যু ও শাহাদত বরণ ছাড়া আমাদের সামনে আর কোন পথ নেই। আমি ছাড়া আর অন্য কারো সাথেই এদের (ইয়াযিদ বাহিনী) কোন কাজ নেই। আমি তোমাদের বাইয়াতকে (আনুগত্যের শপথ) তুলে নিচ্ছি। তোমাদের যে কেউই ইচ্ছে করলে রাতের এ আঁধারে এ স্থান ত্যাগ করার মাধ্যমে এই ভয়ংকার মৃত্যুকূপ থেকে নিজেকে মুক্তি দিতে পারে। ইমামের ঐ বক্তৃতার পর শিবিরের বাতি নিভিয়ে দেয়া হল। তখন পার্থিব উদ্দেশ্যে আগত ইমাম হোসাইন (আ.)-এর অধিকাংশ সঙ্গীরাই রাতের আধাঁরে ইমামের শিবির ছেড়ে পালিয়ে গেল। যার ফলে হাতে গোনা ইমামের অল্পকিছু অনুরাগী এবং বনি হাশেম গোত্রের অল্প ক’জন ছাড়া ইমামের আর কোন সঙ্গী বাকী রইল না। ইমামের ঐসব অবশিষ্ট সঙ্গীদের সংখ্যা ছিল প্রায় ৪০ জন। অতঃপর ইমাম হোসাইন (আ.) পুনরায় তার অবশিষ্ট সঙ্গীদেরকে পরীক্ষা করার জন্যে সমবেত করেন। সমবেত সঙ্গী ও হাশেমীয় গোত্রের আত্মীয় স্বজনদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণে হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) বলেনঃ আমি ছাড়া তোমাদের কারো সাথে এদের কোন কাজ নেই। তোমাদের যে কেউ ইচ্ছে করলে রাতের আধাঁরে আশ্রয় গ্রহণের (পালিয়ে যাওয়া) মাধ্যমে নিজেকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পার।”
কিন্তু এবার ইমামের অনুরাগী ভক্তরা একে একে সবাই দৃঢ় কন্ঠে জবাব দিল। তারা বললো, “আমরা অবশ্যই সে সত্যের পথ থেকে বিমুখ হব না, যে পথের নেতা আপনি। আমরা কখনোই আপনার পবিত্র সাহচর্য ত্যাগ করবো না। আমাদের হাতে যদি তলোয়ার থাকে, তাহলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ পর্যন্ত আপনার স্বার্থ রক্ষার্থে যুদ্ধ করে যাব।”
ইমাম (আ.)-কে প্রদত্ত অবকাশের শেষ দিন ছিল মহররম মাসের ৯ তারিখ। আজ ইমাম হোসাইন (আ.) কে ইয়াযিদের বশ্যতা স্বীকারের (বাইয়াত) ঘোষণা প্রদান করতে হবে অথবা ইয়াযিদ বাহিনীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হতে হবে। শত্রু বাহিনীর পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে ইমামের জবাব চেয়ে পাঠানো হল। প্রত্যুত্তরে ইমাম (আ.) ঐ রাতটি (৯ই মহরমের দিবাগত রাত) অবসর চাইলেন, যেন মহান রাব্বুল আলামিনের ইবাদত বন্দেগীতে রাতটি কাটিয়ে দিতে পারেন। আর পর দিন ইয়াযিদ বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবর্তীণ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।
হিজরী ৬১ সনের ১০ই মহররম আশুরার দিন, ইমাম হোসাইন (আ.)-এর বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৯০ জনের চেয়েও কম। যাদের মধ্যে ৪০ জনই ইমামের পুরানো সঙ্গী। আর আনুমানিক ৩০ জনেরও কিছু বেশী সৈন্য এ ক‘দিনে(১লা মহররম থেকে ১০ই মহররম পর্যন্ত) ইয়াযিদের বাহিনী ত্যাগ করে ইমাম হোসাইন (আ.)-এর বাহিনীতে যোগদান করেছেন। আর অবশিষ্টরা ইমামের হাশেমী বংশীয় আত্মীয় স্বজন, ইমামের ভাই বোনেরা ও তাদের সন্তানগণ, চাচাদের সন্তানগণ এবং তার নিজের পরিবারবর্গ। ইয়াযিদের বিশাল বাহিনীর মোকাবিলায় ইমাম হোসাইন (আ.) তার ঐ অতি নগন্য সংখ্যক সদস্যের ক্ষুদ্র বাহিনীকে যুদ্ধের জন্যে বিন্যস্ত করলেন। অতঃপর যুদ্ধ শুরু হল। সেদিন আশুরার সকাল থেকে শুরু করে সারাদিন যুদ্ধ চললো। ইমামের হাশেমী বংশীয় সকল যুবকই একের পর এক শাহাদত বরণ করলেন। ইমামের অন্যান্য সাথীরা একের পর এক সবাই শহীদ হয়ে গেলেন। ঐ সকল শাহাদত প্রাপ্তদের মাঝে ইমাম হাসান (আ.)-এর দু’জন কিশোর পুত্র এবং স্বীয় ইমাম হোসাইন (আ.)-এর একজন নাবালক পুত্র ও একটি দুগ্ধ পোষ্য শিশু ছিলেন। যুদ্ধ শেষে ইয়াযিদ বাহিনী ইমাম হোসাইন (আ.)-এর পরিবারের মহিলাদের শিবির লুটপাট করার পর তাঁদের তাবুগুলোতে অগ্নি সংযোগ করে তা জ্বালিয়ে ছারখার করে দেয়। তারা ইমামের বাহিনীর শহীদদের মাথা কেটে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। শহীদদের লাশগুলোকে তারা বিবস্ত্র করে। দাফন না করেই তারা লাশগুলোকে বিবস্ত্র অবস্থায় মাটিতে ফেলে রাখে। এরপর ইয়াযিদ বাহিনী শহীদদের কর্তিত মস্তকসহ ইমাম পরিবারের বন্দী অসহায় নারী ও কন্যাদের সাথে নিয়ে কুফা শহরের দিকে রওনা হল। ঐসব বন্দীদের মাঝে ইমাম পরিবারের পুরুষ সদস্যের সংখ্যা ছিল মাত্র অল্প ক’জন। এদের একজন ছিলেন চরমভাবে অসুস্থ তিনি হলেন, হযরত ইমাম হুসাইনের ২২ বছর বয়স্ক পুত্র হযরত ইমাম জয়নুল আবেদীন (আ.)। ইনিই সেই চর্তুথ ইমাম। অন্য একজন ছিলেন ইমাম জয়নুল আবেদীন (আ.)-এর ৪ বছর বয়স্ক পুত্র মুহাম্মদ বিন আলী। ইনিই হলেন পঞ্চম ইমাম হযরত বাকের (আ.)। আর তৃতীয় জন হলেন, হযরত ইমাম হোসাইন (আ.)-এর জামাতা এবং হযরত ইমাম হাসান (আ.)-এর পুত্র হযরত হাসান মুসান্না (রহঃ)। তিনি চরমভাবে আহত অবস্থায় শহীদের লাশের মাঝে পড়ে ছিলেন। তখনও তার শ্বাসক্রিয়া চলছিল। শহীদদের মাথা কাটার সময় ইয়াযিদ বাহিনীর জনৈক সেনাপতির নির্দেশে তার মাথা আর কাটা হয়নি। অতঃপর তাকেও সেখান থেকে উঠিয়ে নিয়ে বন্দীদের সাথে কুফার দিকে নিয়ে যাওয়া হল। তারপর কুফা থেকে সকল বন্দীকে দামেস্কে ইয়াযিদের দরবারে নিয়ে যাওয়া হয়।
ইমাম পরিবারের নারী ও কন্যাদেরকে বন্দী অবস্থায় এক শহর থেকে অন্য শহরে ঘুরিয়ে বেড়ানো হয়। পথিমধ্যে আমিরুল মুমিনীন ইমাম আলী (আ.)-এর কন্যা হযরত জয়নাব (আ.) ও ইমাম জয়নুল আবেদীন (আ.) জনগণের উদ্দেশ্যে কারবালার ঐ মর্মান্তিক ঘটনার ভয়াবহ বর্ণনা সম্বলিত মর্মস্পর্শী বক্তব্য রাখেন।
কুফা ও দামেস্কে তাঁদের প্রদত্ত ঐ হৃদয়বিদারক ভাষণ উমাইয়াদেরকে জনসমক্ষে যথেষ্ট অপদস্থ করে। যার ফলে মুয়াবিয়ার বহু বছরের অপপ্রচারের পাহাড় মূহুর্তেই ধুলিস্যাৎ হয়ে যায়। এমনকি শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়ালো যে, ইয়াযিদ তার অধীনস্থদের এহেন ন্যক্কারজনক কার্যকলাপের জন্যে বাহ্যিকভাবে জনসমক্ষে অসন্তুষ্টি প্রকাশে বাধ্য হয়েছিল। কারবালার ঐ ঐতিহাসিক মর্মান্তিক ঘটনা এতই শক্তিশালী ছিল যে, অদূর ভবিষ্যতে তারই প্রভাবে উমাইয়া গোষ্ঠী তাদের শাসনক্ষমতা থেকে চিরতরে উৎখাত হয়ে যায়। ঐতিহাসিক কারবালার ঘটনাই শীয়া সমপ্রদায়ের মূলকে অধিকতর শক্তিশালীভাবে প্রতিষ্ঠিত করে। শুধু তাই নয়, কারবালার ঐ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একের পর এক বিদ্রোহ, বিপ্লব এবং ছোট বড় অনেক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও সংঘাত ঘটতে থাকে। এ অবস্থা প্রায় বার বছর যাবৎ অব্যাহত ছিল। শেষ পর্যন্ত ইমাম হোসাইন (আ.)-কে হত্যা করার সাথে জড়িত একটি ব্যক্তিও জনগণের প্রতিশোধের হাত থেকে প্রাণ নিয়ে পালাতে সক্ষম হয়নি।
হযরত ইমাম হোসাইন (আ.)-এর জীবন ইতিহাস, ইয়াযিদ এবং তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে যার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম জ্ঞান রয়েছে, তিনি নিঃসন্দেহে জানেন যে, সে দিন হযরত ইমাম হোসাইন (আ.)-এর সামনে শুধুমাত্র একটা পথই খোলা ছিল। আর তা ছিল শাহাদত বরণ। কেননা, ইয়াযিদের কাছে বাইয়াত প্রদান, প্রকাশ্যভাবে ইসলামকে পদদলিত করারই নামান্তর। তাই ঐ কাজটি ইমামের জন্যে আদৌ সম্ভব ছিল না। কারণ, ইয়াযিদ যে শুধুমাত্র ইসলামী আর্দশ ও ইসলামী আইন কানুনকে সম্মান করত না, তাই নয়; বরং সে ছিল উচ্ছৃংখল চরিত্রের অধিকারী। এমনকি ইসলামের পবিত্র বিষয়গুলো এবং ইসলামী বিধানকে প্রকাশ্যে পদদলিত করার মত স্পর্ধাও সে প্রদর্শন করত। অথচ, ইয়াযিদের পূর্ব পুরুষরা ইসলামের বিরোধী থাকলেও তারা ইসলামী পরিচ্ছদের অন্তরালে ইসলামের বিরোধীতা করত। কিন্তু প্রকাশ্যভাবে তারা ইসলামকে সম্মান করত। তারা প্রকাশ্যে মহানবী (সা.)-কে সহযোগিতা করত এবং ইসলামের গণ্যমান্য ও উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের সম্পর্কে বাহ্যত গর্ববোধ করত। কারবালার ইতিহাসের অনেক বিশ্লেষকই বলে থাকেন যে, ঐ দুই ইমামের [ইমাম হাসান (আ.) ও ইমাম হোসাইন (আ.)] মতাদর্শ ছিল দু’ধরণের যেমনঃ ইমাম হাসান (আ.) প্রায় ৪০ হাজার সেনাবাহিনীর অধিকারী হয়েও মুয়াবিয়ার সাথে সন্ধি করেন। আর ইমাম হোসাইন (আ.) মাত্র ৪০ জন অনুসারী নিয়েই ইয়াযিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবর্তীণ হন। কিন্তু ইতোপূর্বের আলোচনা থেকে এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, এ ধরণের মন্তব্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কারণ, ইমাম হোসাইন (আ.), যিনি মাত্র একটি দিনের জন্যেও ইয়াযিদের বশ্যতা স্বীকার করেননি, সেই তিনিই ইমাম হাসান (আ.)-এর পরপর র্দীঘ দশ বছর যাবৎ মুয়াবিয়ার শাসনাধীনে সন্ধিকালীন জীবন যাপন করেন। ঐ সময় তিনি প্রকাশ্যে প্রশাসনের বিরুদ্ধে কোন বিদ্রোহ করেননি। প্রকৃতপক্ষে, ইমাম হাসান (আ.) এবং ইমাম হোসাইন (আ.) যদি সেদিন মুয়াবিয়ার সংগে যুদ্ধে অবর্তীণ হতেন, তাহলে অবশ্যই তাঁরা নিহত হতেন। আর এর ফলে ইসলামের এক বিন্দু মাত্র উপকারও হত না। কেননা, মুয়াবিয়ার কপটতাপূর্ণ রাজনীতির কারণে, বাহ্যত তাকেই সত্য পথের অনুসারী বলে মনে হত। এছাড়া মুয়াবিয়া নিজেকে রাসুল (সা.)-এর সাহাবী, ওহী’ লেখক এবং মু’মিনদের মামা (মুয়াবিয়ার জনৈকা বোন রাসুলের স্ত্রী ছিলেন) হিসেবে জনসমক্ষে প্রচার করে বেড়াত। আপন স্বার্থ উদ্ধারের প্রয়োজনে এমন কোন চক্রান্ত নেই যা সে অবলম্বন করেনি। এমতাবস্থায় মুয়াবিয়ার এহেন প্রতারণামূলক রাজনীতির মোকাবিলায় ইমাম হাসান (আ.) বা ইমাম হোসাইন (আ.)-এর কোন কর্মসূচীই ফলপ্রসু হত না।
মুয়াবিয়া এতই চতুর ছিল যে, সে অতি সহজেই লোক লাগিয়ে ইমামদের হত্যা করত। আর সে নিজেই নিহত ইমামদের জন্যে প্রকাশ্যে শোক অনুষ্ঠানের নেতৃত্ব দিত। কেননা, একই কর্মসূচী সে তৃতীয় খলিফার ক্ষেত্রেও বাস্তবায়িত করেছিল।
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন