আক্বিক্বা ও তার আহকাম
আক্বিক্বা ও তার আহকাম
এস, এ, এ
আক্বিক্বা শব্দটি (عقّ) থেকে নেয়া হয়েছে, যার অর্থ হচ্ছে নবজাতকের মাথার চুল যা সে নিজের মাথায় নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু বর্তমানে ঐ পশু যা নবজাতকের জন্মের সপ্তম দিনে জবাই করা হয় তাকে বলা হয়।(মাজমাউল বাহরাইন, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ২১৫)
ফিক্বহ’র দৃষ্টিতে আক্বিক্বাঃ
ফক্বিহদের মতে বাচ্চা জন্মের পরে পশু জবাই করাকে আক্বিক্বা বলা হয়।(আল মাবসুত ফি ফিক্বহিল ইমামীয়া, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৯৪)
আক্বিক্বা ঐ পশুকে বলা হয় যা বাচ্চা জন্মগ্রহণের পরে তা জবাই করা হয় চাই সে বাচ্চা ছেলে হোক বা মেয়ে।(আল ইন্তেসার ফি ইনফেরাদাতিল ইমামীয়া, পৃষ্ঠা ৪০৬)
আক্বিক্বার শর্ত এবং নিয়মাবলিঃ
আক্বিক্বার উদ্দেশ্যে হচ্ছে বাচ্চা জন্মের সপ্তম দিনে তার নিরাপত্তা এবং বিভিন্ন বীপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার লক্ষ্যে হালাল পশু জবাই করা।
আক্বিক্বার পশুর সমপরিমাণ অর্থ প্রদান এর পরিপূরক না। বরং এর জন্য অবশ্যই পশু জবাই করতে হবে এবং উত্তম হচ্ছে ছেলের জন্য নর এবং মেয়ের জন্য মাদী পশু জবাই করা তবে যদি এমনটি না হয় বা না পাওয়া যায় তাহলে এক্ষেত্রে কোন সমস্যা নাই। অর্থাৎ যে কোন হালাল পশু জবাই করা জায়েয।
অনুরুপভাবে উত্তম হচ্ছে পশু জবাই করার পরে তার হাড়গুলোকে না ভাঙ্গা বরং তার হাড়ের জোড়া থেকে অপর হাড়ের জোড়া পর্যন্ত হাড় এবং গোশতকে আলাদা করা।
মুস্তাহাব হচ্ছে এক চতূর্থাংশ নিজের আত্মীয় স্বজনদের মাঝে বন্টন করা এবং অবশিষ্ট অংশটুকু মুমিনদের মাঝে বন্টন করা। মুস্তাহাব হচ্ছে উক্ত সন্তানের বাবা মা এবং রক্তের সম্পর্কিত আত্মীয় স্বজনদের আক্বিক্বার গোশত না খাওয়া।
যদি বাবা নিজের সন্তানের জন্য ৭ম দিনে আক্বিক্বা না করে এবং তার বালেগ হওয়া পর্যন্ত আক্বিক্বা না দেয়। তাহলে এর পরে দ্বায়িত্ব বাবার উপরে বর্তাবে না বরং স্বয়ং সন্তানের উপরে বর্তাবে।
কোন কোন ফক্বিহদের দৃষ্টিতে বাচ্চার জন্য আক্বিক্বা করা হচ্ছে ওয়াজিব। (আল ইন্তেসার ফি ইনফেরাদাতিল ইমামীয়া, পৃষ্ঠা ৪০৬)
কোন কোন ফক্বিহদের দৃষ্টিতে বাচ্চার জন্য আক্বিক্বা করা হচ্ছে মুস্তাহাব। (মুখতালেফুশ শিয়াতী ফি আহকামুশ শারীয়াহ, খন্ড ৭, পৃষ্ঠা ৩০৩)
বাচ্চার নিরাপত্তা এবং তাকে বীপদ থেকে দূরে রাখার নিমিত্তে জন্মের ৭ম দিনে পশু জবাই দেয়া এবং অন্তত ১০ জনকে খাদ্য দান।(আল কাফি, খন্ড ৬, পৃষ্ঠা ২৮, ২৯)
ইমাম সাদিক্ব (আ.) কে প্রশ্ন করা হয় যদি আক্বিক্বার সমপরিমাণ অর্থ যদি সাদক্বা দেয়া হয় তাহলে কি যথেষ্ট? তিনি বলেনঃ যথেষ্ট না কেননা খোদা এর বদলে রক্ত এবং খাদ্য দানকে পছন্দ করেন। (আল কাফি, খন্ড ৬, পৃষ্ঠা ২৫)
ইমাম সাদিক্ব (আ.) থেকে রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে আক্বিক্বা হচ্ছে সন্তানের জন্য বীপদ থেকে মুক্তির কবজ স্বরূপ অর্থাৎ যদি আক্বিক্বা না করা হয় তাহলে বীপদ মুক্ত হবে না এমনকি সে রোগে অসুস্থ হবে যার পরিণতি হচ্ছে মৃত্যু।(হিল্লিয়াতুল মুত্তাক্বিন, পৃষ্ঠা ১১৫)
যদি বাবা তার সন্তানের বালেগ হওয়া পর্যন্ত আকিক্বা না করে তাহলে বালেগ হওয়ার পর থেকে মৃত্যুর পূর্ব পযর্ন্ত স্বয়ং সন্তানের উপরে আক্বিক্বা করা হচ্ছে মুস্তাহাব। (আল মাবসুত ফি ফিক্বহিল ইমামীয়া, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৯৫)
ইমাম সাদিক্ব (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে পুত্র সন্তানের জন্য নর পশু এবং মেয়ে সন্তানের জন্য মাদী পশু জবাই করা। (মান লা ইয়াহযারুহুল ফাক্বিহ, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৪৮৫)
অন্য এক রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে ইমাম সাদিক্ব (আ.) কে আক্বিক্বা সর্ম্পকে প্রশ্ন করা হয়। তিনি বলেনঃ পুত্র এবং মেয়ে সন্তানের জন্য আক্বিক্বার মধ্যে কোন পার্থক্য নাই। (আল কাফি, খন্ড ৬, পৃষ্ঠা ২৬)
উপরে উল্লেখিত বর্ণনা সহ অন্যান্য রেওয়ায়েত অনুযায়ি এবং ফক্বিদের মত অনুযায়ি আমরা বিষয়টি বুঝতে পারি তা হচ্ছেঃ নবজাতকের জন্য উত্তম হচ্ছে পশু জবাই করা, ছাগল ছাড়া অন্যন্য হালাল পশুও জবাই করা যেতে পারে, লিঙ্গ অনুসারে পশু জবাই করা উত্তম, আর যদি ছেলে বা মেয়ের বিষয়টি পালন করা না হয় তাহলেও কোন সমস্যা নাই।
পশু আক্বিক্বা করার দোয়াঃ
یٰا قَوْمِ إِنِّی بَرِیءٌ مِمّٰا تُشْرِکُونَ إِنِّی وَجَّهْتُ وَجْهِیَ لِلَّذِی فَطَرَ السَّمٰاوٰاتِ وَ الْأَرْضَ حَنِیفاً مُسْلِماً وَ مٰا أَنَا مِنَ الْمُشْرِکِینَ إِنَّ صَلٰاتِی وَ نُسُکِی وَ مَحْیٰایَ وَ مَمٰاتِی لِلّٰهِ رَبِّ الْعٰالَمِینَ لٰا شَرِیکَ لَهُ وَ بِذٰلِکَ أُمِرْتُ وَ أَنَا مِنَ الْمُسْلِمِینَ اللَّهُمَّ مِنْکَ وَ لَکَ بِسْمِ اللَّهِ وَ اللَّهُ أَکْبَرُ اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَ آلِ مُحَمَّدٍ وَ تَقَبَّلْ مِنْ
অমুক (সন্তানের নাম) ইবনে অমুক (বাবার নাম)(সূরা আনআম, আয়াত নং ৭৯, আল কাফি , খন্ড ৬, পৃষ্ঠা ৩১)
জবাই করার পরে বলতে হবেঃ
بِسْمِ اللَّهِ وَ بِاللَّهِ اللَّهُمَّ عَقِیقَةٌ عَنْ فُلَانٍ لَحْمُهَا بِلَحْمِهِ وَ دَمُهَا بِدَمِهِ وَ عَظْمُهَا بِعَظْمِهِ اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ وِقَاءً لآِلِ مُحَمَّدٍ ص
আক্বিক্বার গোশত কিভাবে বন্টন করতে হবেঃ
উত্তম হচ্ছে আক্বিক্বার পশু জবাই করার পরে তার হাড্ডিগুলো ভেঙ্গে না ফেলা বরং তার হাড়ের গিরা সমূহ থেকে গোশতগুলো আলাদা করে নেয়া। (আল কাফি, খন্ড ৬, পৃষ্ঠা ২৯)
মুস্তাহাব হচ্ছে পশুর একটি পা অথবা এক চতূর্থাংশ গোশত ধাত্রীকে দান করা। (আল কাফি, খন্ড ৬, পৃষ্ঠা ২৭, ২৯)
আর যদি ধাত্রী দাদী অথবা নানী হয় তাহলে তারা কিছু পাবে না অথবা যদি ধাত্রীর ভরণ পোষণের দ্বায়িত্ব তাদের উপরে থাকে তাহলে সে উক্ত গোশত পাবে না। (আল কাফি, খন্ড ৬, পৃষ্ঠা ৩২)
আর যদি সন্তান বিনা ধাত্রীর সাহায্যে জন্মগ্রহণ করে তাহলে উক্ত গোশত তার নবজাতকের মাকে দেয়া হবে সে যাকে ইচ্ছা দান করতে পারে। (আল কাফি, খন্ড ৬, পৃষ্ঠা ২৯)
অবশিষ্ট গোশতকে মুমিন এবং অভাবগ্রস্তদের মাঝে বন্টন করে দিতে হবে তবে উত্তম হচ্ছে উক্ত গোশতটি রান্না করে দশ অথবা তার অধিক মুমিনদেরকে খাওয়ানো। (আল ফিক্বহুর রেযা, পৃষ্ঠা ২৩৯)
সুন্নাত হচ্ছে বাবা মা যেন উক্ত গোশত না খায় এবং অনুরূপভাবে উত্তম হচ্ছে উক্ত হাড়িতে রান্না করা গোশত বা তার ঝোল বা অন্যান্য কিছুও না খাওয়া। এক্ষেত্রে বিশেষভাবে মাকে উক্ত গোশত খাওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য তাকিদ করা হয়েছে।
উত্তম হচ্ছে ৭ম দিনে সন্তানের মাথার চুলের ওজন অনুযায়ি রুপা অথবা সোনার সমপরিমাণ অর্থ সাদক্বা দান করা।(আল কাফি, খন্ড ৬, পৃষ্ঠা ৩৩)
মুস্তাহাব হচ্ছে আগে সন্তানের মাথার চুল ফেলা তার পরে আক্বিক্বা করা।(জামেউল মাসায়েল, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৯৮)
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন