রোজার মূখ্য উদ্দেশ্য ও কল্যাণ
রোজার মূখ্য উদ্দেশ্য ও কল্যাণ
রোজার আসল উদ্দেশ্য বা হিকমাত হল মানুষকে খোদাভীরু করা। রোজার সামাজিক উপকারিতা, দৈহিক উপকারিতা ও অর্থনৈতিক নানা উপকারিতাও রয়েছে। তবে সেসবের কোনোটিই রোজার প্রধান উদ্দেশ্য নয়। এর আসল বা সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য হল, মুসলমানদেরকে খোদাভীরু করা। যারা পবিত্র জগতের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে চায় ও চায় পূর্ণতা অর্জন করতে তাদেরকে অবশ্যই নফস বা প্রবৃত্তির সঙ্গে জিহাদ করে তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আর তা কেবল খোদাভীতির মাধ্যমেই অর্জন করা যায়। কারণ, প্রবৃত্তির বৈধ চাহিদাগুলো বর্জনের চর্চা করার মাধ্যমে মানুষ প্রবৃত্তির অবৈধ ঝোঁকগুলোর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার প্রতিজ্ঞাকে সুদৃঢ় করতে সক্ষম হয়।
মানুষের শরীরের মূল নিয়ন্ত্রক হল তার আত্মা। রমজানে মানুষ পানাহার বর্জন করায় এবং চোখ ও কানকে অশালীনতা থেকে দূরে রাখার অনুশীলন করায় তার আত্মা পার্থিব বিষয়ের বোঝা থেকে মুক্ত হয়ে পরকালমুখী ও কোমল হয়। এ ছাড়াও মানুষ রমজান মাসে সুনির্দিষ্ট সময়ে পানাহারের অভ্যস্ত হয় বলে তারা অন্য সময়ও নিজের ইচ্ছাশক্তিকে নানা লোভ-লালসা ও পাপাচারের প্রলোভনের মোকাবেলায় শক্তিশালী করতে সক্ষম হয়। রমজান মানুষকে ভোগ-বিলাসের ক্ষেত্রে সংযমী করে ও প্রবৃত্তির লাগামহীনতার প্রবণতাকে করে ভারসাম্যপূর্ণ।
এভাবে রোজা মানুষকে পাশবিক অবস্থান থেকে ফেরেশতার পর্যায়ে উন্নীত করতে সহায়তা করে। বলা হয় জিহ্বা ও পেট হচ্ছে সব দুষ্কৃতির মূল। কিন্তু রোজা মানুষের ভোজন-বিলাস বা পেটুকটা এবং গিবত ও মিথ্যাচারের মত গোনাহ থেকে রক্ষা করে দেহের পাশাপাশি মনকেও করে পবিত্র। রোজার দিনে মানুষ ক্ষুধা-তৃষ্ণার কষ্ট সহ্য করার মাধ্যমে দরিদ্র ও অভুক্তদের বেদনা বুঝতে পারে এবং এরফলে সে তাদের প্রতি হয় দানশীল ও কোমল। বিশ্বের সব ধনী মানুষ যদি রোজা রাখতো তাহলে তারা কাউকে অভুক্ত ও দরিদ্র থাকতে দিত না।
রোজার ফলে মানুষের পরিপাক-যন্ত্রসহ নানা অঙ্গ বিশ্রামের কারণে আবারও সতেজ এবং শক্তিশালী হয়। ভুরিভোজনের ফলে যে অতিরিক্ত চর্বি বা বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থগুলো দেহে জমে থাকে রোজা তা নিঃশেষ করে দেয়। রোজা শরীরের ক্ষতিকর দিকগুলো ছাড়াও মনেরও ক্ষতিকর নানা দিক তথা সন্দেহপরায়নতা ও ভুল ধারণার মত নানা মানসিক রোগকেও দূর করে। কারণ,এ মাসে বেশি-বেশি কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া পাঠ ও ইবাদতের ফলে মস্তিষ্ক বা মন-মানসিকতা অলস থাকে না, ফলে মনের মধ্যে কুচিন্তা, অহংকার, হিংসা ও প্রতিশোধপরায়নতাসহ নানা ধরনের অসৎ কাজের প্ররোচনাও সৃষ্টি হয় না।
আমিরুল মু'মিনীন আলী (আ.) বলেন, “জেনে রাখ, নিশ্চয়ই দারিদ্র্য একটি বড় বিপদ এবং দারিদ্রের চেয়েও হতে খারাপ হল শারীরিক অসুস্থতা; আর শারীরিক অসুস্থতা হতেও নিকৃষ্ট ও কঠিন হলো অন্তরের অসুস্থতা।” কুরআনের অন্যতম পরিকল্পনা হলো সুস্থ ও উন্নত মানুষ গড়ে তোলা। আর তাই আমাদেরকে উন্নত মানুষ হওয়ার আগে সুস্থ ও ত্রুটিহীন মানুষ হতে হবে।
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন