শবে ক্বদরে রুহ নাজিল হয় কার কাছে?
শবে ক্বদরে রুহ নাজিল হয় কার কাছে?
রমজানের অফুরন্ত সুযোগ-সুবিধাগুলোকে মানুষের জীবনের মহাপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার সুযোগ হিসেবে উল্লেখ করা যায়। প্রত্যেক মানুষই পার্থিব এ জীবনে মহাপরীক্ষার সম্মুখীন। কিন্তু রমজান হচ্ছে যেন এমন এক মাস যে এই মাসে সেই মহাপরীক্ষার প্রশ্নপত্রগুলো ফাঁস করে দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয় প্রশ্নের উত্তরগুলোও জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এমনকি কেউ যদি পরীক্ষার হলে লিখতে ব্যর্থ হয় সেক্ষেত্রেও তাকে সহযোগিতা করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এই মাসে।
রমজানে একজন মুসলিম নিজেকে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন যে তিনি নিজেকে কতটা উন্নত করতে পেরেছেন সৎগুণাবলী অর্জনের মাধ্যমে এবং কতটা বদ স্বভাবের প্রবণতাগুলোকে নিজের মন-মানসিকতা ও প্রবৃত্তি থেকে বিদায় করতে পেরেছেন। পানাহার বর্জনসহ নানা বিষয়ে সংযমের চর্চার ফলে রমজানে একজন মুসলমান উন্নত হয় ফেরেশতার পর্যায়ে। আর খোদাপ্রেম ও খোদাভীতি তাকে ফেরেশতার চেয়েও উন্নত করতে পারে। কারণ, ফেরেশতাদের মধ্যে ক্ষুধা, তৃষ্ণা ও ভোগ-লিপ্সা ইত্যাদি জন্মগতভাবেই থাকে না বলে তাকে এইসব দমন করতে হয় না। রমজানে একজন মুসলিম তখনই সফল হতে পারে যখন সে তার জীবনকে মহান আল্লাহর গুণাবলী, পবিত্র কুরআন এবং বিশ্বনবী (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে-বাইতের দিক-নির্দেশনার আলোকে রাঙ্গিয়ে নিতে সক্ষম হয়।
পবিত্র কুরআনের সুরা কদরের তৃতীয় আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:
'এই রাতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে।' এখানে 'তানাজ্জালুল' তথা 'অবতীর্ণ' ক্রিয়াটি হল বর্তমান বা ঘটমান ক্রিয়া। এর অর্থ প্রতি বছরই এই মহিমান্বিত রাত আসে। আর রুহ হচ্ছে এমন এক সত্ত্বা যা ফেরেশতা থেকে ভিন্ন, তথা ফেরেশতাদের চেয়েও উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন সত্ত্বা বা অস্তিত্ব। ফেরেশতারা এই মহিমান্বিত রাতে তথা শবে কদরের রাতে মানুষের জন্য কল্যাণ ও বরকত এবং ভাগ্য নির্ধারণ করার জন্য অবতীর্ণ হন। ফেরেশতাদের চেয়েও উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন সেই অস্তিত্বরা কার কাছে অবতীর্ণ হন? অনেকেই মনে করেন তারা অবতীর্ণ হন ইমাম মাহদি (আ.)'র কাছে।
এটা স্পষ্ট যে মানুষ যদি পবিত্র রমজান মাসে নিজের যোগ্যতাকে বিকশিত করতে পারে তাহলে তার জন্য বেশি বেশি কল্যাণ নির্ধারণ করা হবে শবে কদরে। এ জন্যই এই রাতে দোয়া ও ইবাদতের গুরুত্ব অপরিসীম। ফজরের উদয় পর্যন্ত অফুরন্ত কল্যাণ ও শান্তি বা নিরাপত্তার দরজা আল্লাহ খোলা রাখেন এই রাতে। অন্য কথায় মানুষই তার ভাগ্য গড়ে তোলে। কেউ যদি পরিশ্রম করে তাহলে তার উন্নতি ও অগ্রগতি অনিবার্য। আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্যও এই একই সত্য প্রযোজ্য।
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন