আইএসআইএল ইসরাইলের বন্ধু আরব রাজারা: গ্যালাওয়ে
আইএসআইএল ইসরাইলের বন্ধু আরব রাজারা: গ্যালাওয়ে
ফিলিস্তিনিদের দরদি হিসেবে সুপরিচিত ব্রিটেনের বিশিষ্ট সংসদ সদস্য জর্জ গ্যালাওয়ে
মার্কিন ও ব্রিটিশ সরকারের সবুজ-সংকেত পেয়ে ফিলিস্তিনিদের ভূখণ্ডে জবরদখলের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত অবৈধ রাষ্ট্র ইহুদিবাদী ইসরাইল একটানা পঞ্চম দিনের মত অবরুদ্ধ গাজায় বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
শহীদের সংখ্যা বেড়ে ১২২ এ পৌঁছেছে বলে খবর এসেছে। তাদের অনেকেই ছিল দুধের শিশু এবং নারী।
হানাদার বিমানগুলো বেসামরিক অঞ্চল ও আবাসিক বাসভবনগুলো লক্ষ্য করে নির্বিচার বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে এবং সমুদ্র পথেও হামলা চালাচ্ছে ইসরাইলি যুদ্ধ-জাহাজগুলো।
বিশেষ করে বর্বরতার সব সীমা ছাড়িয়ে পবিত্র রমজান মাসে সাহরি ও ইফতারির সময় এইসব হামলা জোরদার করছে ইহুদিবাদী আগ্রাসীরা। গত ২৪ ঘণ্টায় সাহরি খাওয়ার সময় একই পরিবারের একাধিক নারীসহ অন্তত ৫ সদস্য শহীদ হন। এ ছাড়াও মাগরিবের আজানের সময় গাজার মসজিদগুলোতেও বোমা বর্ষণ করছে ইসরাইলি জঙ্গি বিমান।
পশ্চিম তীরে অবৈধ ইসরাইলি বসতির তিন অধিবাসীর অপহৃত হওয়া ও নিহত হওয়ার রহস্যময় ঘটনাকে অজুহাত করে ইসরাইল সাম্প্রতিক আগ্রাসন শুরু করে। নেতানিয়াহুর দাবি এই ঘটনার সঙ্গে নিশ্চয়ই হামাস জড়িত তাই গাজার সব অধিবাসীর ওপর নির্বিচার হামলার পদক্ষেপ নিয়েছে এই নরঘাতক। অতীতে যখন ইসলামপন্থী হামাসের অস্তিত্বই ছিল না তখনও ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের নানা অবস্থানে সন্ত্রাসী বোমা হামলা চালাতো এই বলে যে, ফিলিস্তিনি মানেই হল সন্ত্রাসী!
গাজায় বিমান হামলা শুরুর আগে পশ্চিম তীরের শত শত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে ইসরাইলি সেনারা এবং অবৈধ ইহুদি বসতির গুণ্ডারা এক ফিলিস্তিনি কিশোরকে ধরে নিয়ে জীবন্ত অবস্থায় পুড়িয়ে মারে।
এই যে এতো বর্বরতা, তা নিয়ে নীরব রয়েছে মানবাধিকারের দাবিদার পাশ্চাত্য এবং তাদের হাতের পুতুল জাতিসংঘ। জাতিসংঘের বান কি মুন এক বিবৃতিতে গাজায় ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানানোর পাশাপাশি মাতৃভূমির প্রতিরোধ সংগ্রামে লিপ্ত হামাসের যোদ্ধাদেরও নিন্দা করেছেন! কারণ, হামাস ইসরাইলি হামলার জবাবে রকেট নিক্ষেপ করছে ইসরাইলে! অন্যদিকে ওবামাসহ মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে!
মুসলিম বিদ্বেষী সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর কাছে ন্যায়-নীতি বা নিরপেক্ষতার আশা কেউই করেন না। কিন্তু মুসলিম দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানরা কি করছেন? বিশেষ করে পবিত্র মক্কা ও মদিনার খাদেম হওয়ার দাবিদার রাজা ফিলিস্তিনি মুসলমানদের রক্ষার জন্য কি করছেন? পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের অন্য রাজারা কি করছেন? কি করছেন তুরস্কের তথাকথিত ইসলামপন্থী প্রধানমন্ত্রী এরদোগান?
এ ধরনের কিছু প্রশ্ন উঠে এসেছে মজলুম ফিলিস্তিনিদের দরদি হিসেবে সুপরিচিত ব্রিটেনের বিশিষ্ট সংসদ সদস্য জর্জ গ্যালাওয়ের কিছু সাহসী বক্তব্যে।
তিনি অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে ও অশ্রু-সজল কণ্ঠে জানিয়েছেন যে, তার কাছে খবর রয়েছে যে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের দুটি রাজতান্ত্রিক দেশের দুই রাজ পরিবারের দুই সদস্য ব্রিটেনের দু'টি ফুটবল ক্লাবের জন্য যথাক্রমে দান করেছে এক বিলিয়ন পাউন্ড স্টারলিং তথা এক দশমিক ছয় বিলিয়ন (১৬০ কোটি) ডলার এবং (অন্য ক্লাবটির জন্য) প্রায় দুই বিলিয়ন (২০০ কোটি) ইউরো!
এইসব অর্থ দিয়ে যদি গাজার ফিলিস্তিনিদের জন্য ভূগর্ভস্থ আশ্রয়-কেন্দ্র গড়ে তোলা হত তাহলে ইসরাইলি হামলায় এতো বেশি সংখ্যক ফিলিস্তিনি নিহত হতো না।
বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে যখন এক শ্রেণীর মানুষ ব্যস্ত এবং ইরাক ও সিরিয়ার সরকার পশ্চিমাদের মদদপুষ্ট এক স্বঘোষিত খলিফার সন্ত্রাসী বাহিনীসহ নানা সন্ত্রাসী গ্রুপকে সামাল দিতে ব্যস্ত তখনই ইসরাইল গাজার ওপর হামলা চালানোর পদক্ষেপ নিয়েছে। ইরাকে সন্ত্রাসীরা মসুল দখল করে নেয়ার পর কুর্দিরা দখল করে নেয় তেল-সমৃদ্ধ কারকুক শহর। এ ছাড়াও কুর্দি নেতারা স্বায়ত্তশাসিত কুর্দিস্তানকে স্বাধীন করার জন্য গণভোট আয়োজনের কথাও বলছেন ঠিক এ সময়টিতেই! এর আগে কুর্দিস্তান থেকে জ্বালানী তেল পেয়ে সন্তুষ্ট ইসরাইল কুর্দিদের স্বাধীনতার প্রতি আগাম সমর্থনের কথা জানিয়ে দেয়। মুসলিম দেশগুলোকে যত বেশি টুকরো টুকরো ও বিচ্ছিন্ন করা যায় ইসরাইলের জন্য তা ততই লাভজনক। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে বিদ্রোহ ও অর্ন্তদ্বন্দ্ব যতই বাড়ানো যায় ততই সাম্রাজ্যবাদীদের শোষণ ও অস্ত্র বিক্রিরও সুবিধা হয়।
কথায় কথায় কাফির আখ্যা দিয়ে নির্বিচারে মুসলিম নারী ও শিশুদের গলা কেটে হত্যা করতে এবং সাহাবি ও নবীদের মাজার ধ্বংস করতে অভ্যস্ত আইএসআইএল-এর সেনারা এখন কেন সিরিয়া থেকে ইসরাইলে ঢুকে পড়ে সেখানে জিহাদ করছেন না? (আরব রাজা-বাদশাহদের অর্থের বিনিময়ে পশ্চিমাদের কাছ থেকে পাওয়া) তাদের উন্নতমানের অস্ত্র ও রকেট কেন ইসরাইলের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে না? কেন এইসব অস্ত্র ইরাক আর সিরিয়ার মুসলমানদের বিরুদ্ধেই ব্যবহৃত হচ্ছে? মৃত সেনার লাশের কলিজা-ভক্ষণকারী এই 'জিহাদিরা' কেন ইসরাইলের দিকে কখনও একটি গুলিও নিক্ষেপ করেনি? কেনা ভুয়া নাম ব্যবহারকারী 'খলিফা' আবুবকর ও তালেবান নেতা মোল্লা ওমর তার সেনাদের একটা অংশকে ইসরাইলে জিহাদ করতে পাঠাচ্ছে না? লাদেন-জাওয়াহেরি, মোল্লা ওমর ও ভুয়া আবুবকররা মনে করে তারাই হল মুসলিম বিশ্বের একমাত্র বৈধ খলিফা বা নেতা, তাই যারাই তাদের বিরোধী তারা শিয়া বা সুন্নি যা-ই হোন না কেন তাদের হত্যা করা বৈধ! কথিত খলিফা আবুবকর তো সারা বিশ্বে খেলাফত ছড়িয়ে দেয়ার মহাপরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছে! তাহলে প্রথমেই তার সেনারা কেন ফিলিস্তিন ও মুসলমানদের প্রথম কিবলাকে ইহুদিবাদী দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধারের জন্য জিহাদ করছে না?
এইসব প্রশ্নে উত্তর কি হতে পারে তা সচেতন পাঠক ও জনগণের জানা রয়েছে। আরব রাজা-বাদশাহরা যে তলে তলে ইসরাইল এবং আমেরিকারই সেবাদাস আর আইএসআইএল বা আলকায়দা মার্কা গ্রুপগুলোও যে তাদেরই হাতের পুতুল সেটা বহু আগেই জনগণ ও বিশ্ব-জনমতের কাছে স্পষ্ট। কাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য আলকায়দা, আননুসরা ও আইএসআইএল-এর মত দলগুলো গড়ে তোলা হয় তা দিনকে দিন জনগণের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
জর্জ গ্যালাওয়ে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে এ সত্য বা বাস্তবতাও উল্লেখ করেছেন যে গোটা মুসলিম বিশ্বে মজলুম ফিলিস্তিনিদের জন্য সবচেয়ে বেশি দরদ দিয়ে কথা বলছেন মাত্র দু'জন নেতা এবং তাঁরা এই মজলুম জাতিকে নানাভাবে সহায়তাও দিচ্ছেন নিজ নিজ জাতির পক্ষ থেকে। এই দুই নেতা হলেন লেবাননের হিজবুল্লাহর মহাসচিব সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ এবং ইরানের বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সাম্রাজ্যবাদীদের নিয়ন্ত্রিত আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো তাদের এই অবস্থানকে তুলে ধরছে না, বরং তাঁদেরকে শিয়া মুসলিম নেতা হিসেবে মুসলিম বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার জন্য তাদের বিরুদ্ধে নানা অপবাদ ও মিথ্যা তথ্য প্রচার করছে।
জর্জ গ্যালাওয়ে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে এ সত্য বা বাস্তবতাও উল্লেখ করেছেন যে ফিলিস্তিনি জাতির বিজয় অত্যাসন্ন এবং অব্যাহত আগ্রাসন ও গণহত্যার মুখেও তারা কখনও ফিলিস্তিনে ইসরাইলি দখলদারিত্ব মেনে নেবে না। আর বিশ্বজনমতও দিনকে দিন মুসলমানদের প্রথম কিবলা দখলদার ইসরাইলের বিপক্ষে ও ফিলিস্তিনিদের পক্ষে চলে আসছে।
সূত্রঃ রেডিও তেহরান
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন