রাসূলুল্লাহ (সা.)’এর ব্যাবসার ক্ষেত্রে সততা
রাসূলুল্লাহ (সা.)’এর ব্যাবসার ক্ষেত্রে সততা
রাসূলুল্লাহ (সা.) সব ক্ষেত্রেই তাঁর উম্মতের জন্য আদর্শ বা নমুনা। দৈনন্দিন জীবনে সব কাজে তাঁকে অনুসরণ করা উম্মতের জন্য অপরিহার্য।
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনে ব্যবসায়িক কার্যক্রম ব্যাপকভাবে পরিদৃষ্ট হয় তাঁর নবুয়াতপূর্ব জীবনে। যার প্রথমটি ছিল চাচা আবু তালিবের সঙ্গে সিরিয়া সফরের মাধ্যমে। চাচা যখন ব্যবসায়িক কাফেলা নিয়ে সিরিয়া গমন করেন তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তার সফরসঙ্গী হয়েছিলেন। হাদিস ও ইসলামী ইতিহাসের বিখ্যাত সব গ্রন্থে এ সম্পর্কিত বর্ণনা রয়েছে। এরপর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ব্যবসায়িক বিখ্যাত কার্যক্রমটি ছিল হজরত খাদিজা (রা.)-এর ব্যবসা পরিচালনার দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে। চাচা আবু তালেবের ব্যবসায়ে সাহায্যকারী হিসেবে তাঁর ব্যবসা নৈপুণ্য, সততা ও বিশ্বস্ততার কথা দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। তিনি প্রখর বিচারবুদ্ধি, ন্যায়পরায়ণতা, ব্যবসা নৈপুণ্য ও সাংগঠনিক কর্মকৌশলতার জন্য সর্বত্র প্রশংসিত হতে লাগলেন। তিনি ‘আল আমিন’ উপাধিতে ভূষিত হলেন। তিনি ছিলেন ব্যবসা-বাণিজ্যে অভিজ্ঞ, বিশ্বস্ততায় অদ্বিতীয়, নির্মল চরিত্র-মাধুর্যে অপ্রতিদ্বন্দ্বী আল আমিন।
হজরত খাদিজা (রা.) তার এ খ্যাতি শোনার পর আল আমিনকে স্বীয় ব্যবসায়ের কর্ণধার নিয়োগ করতে চাইলেন। আবু তালেব এ প্রস্তাব সানন্দে কবুল করলেন। ফলে যুবক আল আমিন মুহাম্মদ (সা.) হজরত খাদিজা (রা.)-এর বিরাট ব্যবসা পরিচালনার দায়িত্ব স্বহস্তে গ্রহণ করলেন। এ দায়িত্ব পালনকালে তিনি যেমন সিরিয়া গমন করেছিলেন, তেমনি স্থানীয় মক্ক বাজার ও পার্শ্ববর্তী উকাজ, মাজান্নাহ ও জুল মাজায বাজারেও বাণিজ্যিক কার্য সম্পাদন করেছিলেন। আল আমিন (সা.) কার্যভার গ্রহণ করার পর হজরত খাদিজা (রা.)-এর ব্যবসায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। আগের চেয়ে লভ্যাংশ দ্বিগুণ, তিনগুণ ও চারগুণ বেড়ে গেল।
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নবুয়তি জীবনে প্রত্যক্ষভাবে ব্যবসায়িক কার্যক্রমের যে বিবরণ পাওয়া যায়, তার মধ্যে তিরমিজি, আবু দাউদ ও ইবনে প্রভৃতি গ্রন্থের সূত্রমতে উরওয়াহ ইবনে আবিল জা’দ বারেকি (রা.) নামক জনৈক সাহাবিকে একদা রাসূলুল্লাহ (সা.) ব্যবসায়িক দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন। তিনি তাকে এক দিনার প্রদান করেছিলেন একটি বকরি বা ছাগল ক্রয়ের জন্য। উরওয়া (রা.) তা দিয়ে দুটি বকরি ক্রয় করেছিলেন, যার একটি তিনি আবার এক দিনারে বিক্রি করে এক দিনার ও একটি বকরি নিয়ে ফিরে আসেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) তার এ ব্যবসায়ে বরকতের জন্য দোয়া করেছিলেন। ফলে এ ব্যক্তি যদি পরবর্তী সময় মাটিও ক্রয় করতেন তাতেও সে মুনাফা অর্জন করতেন।
এছাড়া রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নবুয়তি জীবনে প্রত্যক্ষভাবে ব্যবসায়িক কার্যক্রমের অন্যতম পদক্ষেপ হলো- তিনি নবুয়তি কার্যাবলি পরিপালনের জন্য যেমন মদিনাতে মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন, তেমনি বাণিজ্যিক কার্য পরিচালনার জন্য ইহুদিদের নিয়ন্ত্রিত বানু কায়নুকা বাজারের বিপরীতে মদিনাতে ইসলামী বাজার স্থাপন করেছিলেন। মদিনার ইসলামী বাজারের ক্ষেত্রগুলো রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজে বিন্যস্ত করেছিলেন। এটি পরিচালনার জন্য যেমন রাসূলুল্লাহ শিক্ষা দিতেন, তেমন দিতেন বিভিন্ন দিক নির্দেশনা। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রত্যক্ষ নির্দেশনার ফলে এ বাজারে ছিল না কোনোরূপ প্রতারণা, ভেজাল, ওজনে হেরফের বা মজুদদারি।
ব্যবসা পরিচালনার জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশনাগুলোর কিছু বর্ণনা ছিল এরূপ উপার্জন হিসেবে সর্বোত্তম হলো ওই সব লোকের উপার্জন, যারা কথা বললে মিথ্যা বলে না, আমানত রাখলে খেয়ানত করে না, ক্রয় করলে খারাপভাবে ক্রয় করে না, বিক্রি করলে একই জিনিস বারবার বিক্রি করে না, আর তারা দেনাদার হলে বিলম্ব করে না কিন্তু পাওনাদার হলে কঠোরতা অবলম্বন করে না। তিনি আরও বলেন, আমানতদার বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন শহীদদের সঙ্গে থাকবে। অপর একটি হাদিসে বলা হয়েছে, তারা নবী, সিদ্দিকিন ও শহীদদের সঙ্গে থাকবে। যেহেতু অতিরিক্ত মুনাফার লোভে ব্যবসায় সততা ও আমানত রক্ষা করা একটি অগ্নিপরীক্ষা, আর অধিকাংশ ব্যবসায়ী যেখানে ফেল করে বসেন, সেখানে এমন পরীক্ষায় যারা কৃতকার্য হওয়ার পরিচয় দিতে পারেন, তাদের পুরস্কারটাও সেরূপ মূল্যবান হওয়ার দাবি রাখে, যা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ঘোষণায় প্রকাশ পেয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশনার মধ্যে আরও রয়েছে যে, ব্যবসায় কোনোরূপ প্রতারণা, ওজনে হেরফের বা মজুদদারি করা যাবে না এবং ভেজাল ও মিথ্যার আশ্রয় নেয়া যাবে না। এসব কার্যাবলির কারণে পরকালে ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে।
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন