দায়েশ- ৫
দায়েশ- ৫
প্রশ্নঃ দায়েশ দলটি কেন ইরাকে লক্ষ্যবস্তু করেছে? তাদের ইরাকে আসার উদ্দেশ্যে কি?
আমরা যদি ইরাকের ভৌগলিক এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে অবগত থাকি তাহলে আমাদের কাছে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, কেন দায়েশ দলটি ইরাকে আসে। তাদের উদ্দেশ্যে সমূহের মধ্যে অন্যতম উদ্দেশ্যে হচ্ছে ইমাম হুসাইন (আ.) এর চেহেলুম বা চল্লিশা। হয়তো বিষয় আমাদের সবার কাছে অবিশ্বাস্য হতে পারে যে শুধুমাত্র ইমাম হুসাইন (আ.) এর চল্লিশাকে বন্ধ করার জন্য তারা একটি দল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
যত মুসলমান এই ইমাম হুসাইন (আ.) এর আরবাইনে অংশগ্রহণ করে সারা বিশ্বে কোন ইসলামী অনুষ্ঠানে এত মুসলমান একত্রিত হয় না। এই আরবাইন অনুষ্ঠানের জরিপে বলা হয়েছে যে, প্রায় ২ কোটি মুসলমান ঐ দিনে কারবালাতে অবস্থান করে। যা মুসলমানদের শত্রুদের জন্য একটি হুমকি স্বরূপ। যতদিন যাচ্ছে উক্ত চল্লিশার অনুষ্ঠানে মুসলমানদের সমাগম বৃদ্ধি পাচ্ছে। পূর্বে দেখা যেত যে, ৭ই মহরমে মুসলমানেরা পায়ে হেটে নাজাফ থেকে কারবালার উদ্দেশ্যে রওনা হতো। কিন্তু এখন সারা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে মুসলমানেরা ইমাম হুসাইন (আ.) এর যিয়ারতের জন্য কারবালাতে উপস্থিত হয়। হয়তো এমন এক সময় আসবে যে মুসলমানেরা পৃথিবীর বিভিন্ন কোণা থেকে ইমাম হুসাইন (আ.)’র চল্লিশার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য একত্রিত হবে এবং হজ্জের পরে কারবালা হয়ে দাড়াবে মুসলমানদের আরেকটি বৃহৎ মিলনস্থল।
উস্তাদ তাবারসী বলেনঃ কারবালাকে বিকৃত করার জন্য শত্রুরা অনেক ভুল তথ্য এবং মনগড়া কাব্য কাহিনী রচনা করেছে এবং কারবালার প্রকৃত ঘটনাকে লুকিয়ে রেখেছে। আর তাই মুসলমানরা এখনও সঠিকভাবে কারবালাকে চিনতে এবং বুঝতে পারেনি। যখন বুঝতে পারবে তখন আর কোন বাঁধন তাদেরকে আটকিয়ে রাখতে পারবে না।
কতজন জানে যে কারবালাতে হজরত ফাতেমা (সা.আ.) এর তন্বয় ইমাম হুসাইন (আ.) এর উপরে কিরূপ অত্যাচার করা হয়েছিল, শিশু হজরত আলী আসগারের কচি গলায় হুরমুলা কিভাবে মেরেছিল এবং তাকে শহীদ করেছিল, নবীপূরীকে কিভাবে কারবালা, কুফা এবং শামের বাজারে বেপর্দায় ঘুরানো হচ্ছিল। কিন্তু তারপরেও ইমাম হুসাইন (আ.) এর সেই বন্দি কাফেলা ইসলামকে এজিদ নামক ক্যান্সারের হাত থেকে বাচিয়ে ছিল। কিন্তু আবার ইসলামের শত্রুরা ইমাম হুসাইন (আ.) এর চল্লিশাকে বন্ধ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। কেননা তারা জানে যে, যতদিন হুসাইনী চিন্তা চেতনা মুসলমানদের অন্তরে থাকবে তারা ইসলামের কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
- ইমাম হুসাইন (আ.) এর চল্লিশার মূখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে অত্যাচারের বিরোধিতা করা।
- চল্লিশা হচ্ছে আম্বিয়াদের তাবলিগি ক্ষেত্র।
- চল্লিশা হচ্ছে ইমাম মাহদী (আ.) এর আবির্ভাব তরান্বিত হওয়ার ক্ষেত্র স্বরূপ। কেননা আশূরার দিন ইমাম মাহদী (আ.) আবির্ভূত হবেন।
আর তাই ইসলামের শত্রুরা ইমাম হুসাইন (আ.) এর চল্লিশার অনুষ্ঠানকে বন্ধ করতে চায়। কেননা তারা জানে যে, উক্ত অনুষ্ঠানটি বন্ধ করতে না পারলে সারা বছর এর জন্য ক্ষতির সম্মুখিন হতে হবে।
ইসলামের শত্রুরা প্রত্যেক বছর হজ্জের মৌসুমে মুসলমানদের একত্রিত হওয়া থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেছে। তারপরে আবার ইমাম হুসাইন (আ.) এর চল্লিশার অনুষ্ঠিত যোগ হওয়ার কারণে তারা আরো বিচলিত হয়ে পড়ে। কেননা যদি কোন মুসলমান একবার হজ্জে অংশগ্রহণ করে তাহলে প্রত্যেক বছর খোদার ঘরের যিয়ারতের ইচ্ছা পোষণ করবে। অনুরূপভাবে যদি কেউ একবার ইমাম হুসাইন (আ.) এর চল্লিশার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে সেও প্রত্যেক বছর উক্ত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের চেষ্টা করবে। কেননা ইমাম হুসাইন (আ.)ইসলাম ধর্ম যখন এজিদ নামক পাপীর অধিনে আসে তখন সে একের পর এক ইমলামী বিধি বিধানকে বিকৃত করার চেষ্টা করে আর ইমাম হুসাইন (আ.)ইসলাম ধর্ম কে রক্ষা করার জন্য নিজের স্বপরিবারে কারবালার ময়দানে তৃষ্ঞার্ত এবং ক্ষুদার্ত অবস্থায় শাহাদত বরণ করেন।
ইরাকে শত্রুরা (দায়েশ দল) এক চার বছরের বাচ্চার গলা কাটে কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে বলা হয় যে, তার বাবা হচ্ছে শিয়া। অথচ ইসলামে কোথাও বিনা দোষে কাউকে হত্যা করতে নিষেধ করা হয়েছে এমনিকি যদি তারা বেধর্মীও হয়।
প্রত্যেক বছর মুসলমানরা লক্ষ হজ্ব করতে সৌদি আরবে যায়। কিন্তু সেখানে তাদেরকে কোথাও একত্রিত হতে বা ইসলামী আলোচনা করতে দেয়া হয় না। দোয়ার আয়োজন করতে দেয়া হয়না। জলিলুল কদর সাহাবীদের কবর যিয়ারত করতে এবং তাদের রূহের মাগফেরাতের জন্য দোয়া করতে দেয়া হয়না এমনকি রাসুল (সা.)এর মাজারেও দোয়া চাইতে বাধা দান করা হয় এবং শুধু বলা হয় শিরক, শিরক। কেননা সৌদির ওহাবীরা জানে যে, যদি মুসলমানরা একত্রিত হতে পারে বা তারা দ্বীনি সমস্যাবলি নিয়ে আলোচনা করতে পারে তাহলে তা ওহাবী মতবাদের জন্য হুমকি স্বরূপ, আর এজন্যই তারা জান্নাতুল বাক্বি যেখানে জলিলুল কদর সাহাবীদের কবর রয়েছে তা ভেঙ্গে দিয়েছে এবং সেখানে তাদের ইচ্ছা মতো হাজীদেরকে প্রবেশ করতে দেয়া হয় এবং অনেক সময় আবেগ আপ্লুত মুসলমান হাজীদের উপরে অত্যাচার বা তাদেরকে মারপিটও করা হয়।
ইয়াহুদীদের পরিকল্পনা অনুযায়ি তারা মাত্র দুটি দেশের উপরে কতৃত্ব ফলাতে পারে ইসরাইল ও সৌদি আরব। বাকি রইল দুটি দেশে সিরিয়া এবং ইরাক। যদি ইসরাইল এই চারটি দেশকে নিজেদের আয়ত্বে আনতে পারে তাহলে পৃথিবীর সবচেয়ে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান মক্কা এবং বাইতুল মোকাদ্দাস এ দুটাই তাদের দখলে চলে আসবে। কিন্তু সিরিয়া এবং ইরাক তাদের মাঝে পড়ে যাওয়ার কারণে তাদের এ স্বার্থ উদ্ধার হচ্ছে না এ কারণে তারা এ দুটি দেশে বিভিন্ন জঙ্গি বাহিনী প্রেরণ করে দেশ দুটির স্বাভাবিক ভাবমূর্তি নষ্ট করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে।
যদি প্রত্যেক বছর ইমাম হুসাইন (আ.) এর চল্লিশার অনুষ্ঠানটি সফল হয় তাহলে শুধুমাত্র ইরাক না বরং সারা বিশ্বের মুসলমানরা এ চল্লিশাকে কেন্দ্র করে এক স্থানে একত্রিত হতে পারবে এবং সেখানে নিজেদের সমস্যাবলি নিয়ে আলোচনা করতে পারবে।
তাই ইয়াহুদী চক্র ওহাবীদের সাহায্যে ইসলামী দেশগুলোকে নিজের অধিনে নেয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। কেননা তারা মুসলিম দেশগুলোতে যে খোদায়ি নেয়ামতগুলো যেমনঃ তেল, গ্যাস, খুরমা ইত্যাদি রয়েছে তা ভক্ষণ করার জন্য সদা সক্রিয় রয়েছে। তাই মুসলমানদের মুমিনদের সজাগ থাকতে হবে যেন কোনভাবেই ইয়াহুদী চক্র যেন ওহাবীদের মাধ্যমে মুসলিম দেশগুলোর উপরে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে না পারে, মুসলমানদের ঐক্যকে নষ্ট করতে না পারে এবং মুসলমানদের ঐতিহাসিক স্থাপত্যগুলোকে ধ্বংস করতে না পারে।
চলবে...
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন