ওমর আব্দুল্লাহ: বিজেপি যত শক্তিশালীই হোক, কাশ্মির থেকে ৩৭০ ধারা তুলে দেয়া অসম্ভব
ওমর আব্দুল্লাহ: বিজেপি যত শক্তিশালীই হোক, কাশ্মির থেকে ৩৭০ ধারা তুলে দেয়া অসম্ভব
ওমর আব্দুল্লাহ
ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মিরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ বলেছেন, “রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) কথায় তিনি চলবেন না। সঙ্ঘ তার মা, বাপ নয়।” ওমর বলেন, “বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার যত শক্তিশালীই হোক না কেন, তাদের পক্ষে জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে দেয়া সম্ভব নয়। কারণ ৩৭০ ধারা তুলতে গেলে জম্মু-কাশ্মীরে সাংবিধানিক আইনসভা বসাতে হবে। সেই সাংবিধানিক আইনসভাই কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা পাস করেছিল। আবার সেই সাংবিধানিক আইনসভা বসানো মানেই কাশ্মীর আবার পূর্বাবস্থায় চলে যাবে।“
এর আগে আরএসএস নেতা রাম মাধব তার টুইটার বার্তায় বলেন, “ওমর বলেছেন- জম্মু-কাশ্মীর ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। জম্মু-কাশ্মীর কি ওমরের বাপের জমিদারি! ৩৭০ ধারা থাকুক বা না থাকুক কাশ্মীর ভারতের। কাশ্মীর সব সময় ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।”
রাম মাধবের এ হুঁশিয়ার প্রতিক্রিয়ায় বুধবার শ্রীনগরে সংবাদ সম্মেলনে পাল্টা হুঁশিয়ারি দেন ওমর আবদুল্লাহ। ওমর বলেন, “কাশ্মীরে তাদের জমিদারি হতে যাবে কেন! তারা কাশ্মীরের সম্তান। এ রাজ্যের নাগরিক। কাশ্মীর নিয়ে তারা তো কথা বলবেনই।“
কাশ্মিরকে বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত রাজ্যের মর্যাদা দেয়ার ৩৭০ ধারা নিয়ে সম্প্রতি বিতর্ক সৃষ্টি করেন প্রধানমন্ত্রীর দফতর বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং। মঙ্গলবার নরেন্দ্র মোদী দায়িত্ব গ্রহণের পরই জিতেন্দ্র বলেছিলেন, “৩৭০ ধারা বাতিলের বিষয়ে সরকার চিন্তা-ভাবনা শুরু করে দিয়েছে। এই বিষয়টি নিয়ে আমরা জম্মু-কাশ্মিরের মানুষের সঙ্গে কথা বলব। তা না হলে অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করার প্রয়োজনীয়তা বোঝাব কী ভাবে?”
তিনি জানান, “৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদের জন্য জম্মু-কাশ্মিরের মানুষ কী হারিয়েছেন তা তাদের বোঝাতে হবে। তা হলেই স্বাভাবিক নিয়মেই ওই অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত হবে।”
জিতেন্দ্র সিং-এর সংবাদ সম্মেলনের পরপরই কাশ্মিরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেন, বিজেপি সরকার রাজ্য থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয় তা রাজ্যের জন্য বিপজ্জনক হবে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “মোদী সরকার হয়তো ভুলে গেছে, ৩৭০ ধারা না থাকলে কাশ্মির আর ভারতের অংশ থাকবে না।“
ওমর আবদুল্লাহর সাংবিধানিক যুক্তিকে অকাট্য আখ্যা দিয়ে মোদী সরকারের এ জাতীয় উদ্যোগের বিরোধিতা করেছেন কংগ্রেস নেতা ও আইনমন্ত্রী কপিল সিবাল। তিনি বলেছেন, ৩৭০ (২), ৩৭০ (৩) অনুচ্ছেদগুলোতে ৩৭০ ধারা সম্পর্কে যে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, তা পড়লেই সহজে বোঝা যাবে ৩৭০ ধারা এভাবে প্রত্যাহার করা অসম্ভব৷ জম্মু-কাশ্মীরের ভারতভুক্তির ঠিক আগে যে সাংবিধানিক আইন পরিষদ গড়া হয়েছিল, তা আবার গড়া অসম্ভব৷
সিপিআই দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলী এক বিবৃতি দিয়ে মোদী সরকারকে উদ্দেশ করে বলেছে, সাংবিধানিক এই বিষয়টি নিয়ে নাড়াচাড়া না করতে এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত না নিতে।
এদিকে, জম্মু ও কাশ্মীরের বিরোধী দলের নেত্রী মেহবুবা মুফতি ৩৭০ ধারা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর দফতর বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর বিতর্কিত মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানান। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে পিডিপি নেত্রী বলেন, ‘জিতেন্দ্র সিংয়ের এই মন্তব্য সাম্প্রদায়িকতার জিগির তুলে রাজ্যকে ভাগ করে দিতে পারে। আমি আশা করি এবিষয়ে প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করবেন এবং ভবিষ্যতে জিতেন্দ্র সিং এ ধরনের মন্তব্য করবেন না।
প্রসঙ্গত, ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা অনুযায়ী জম্মু ও কাশ্মিরকে বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত রাজ্যের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। এই আইনের প্রতিবাদে প্রথম থেকেই সরব বিজেপি। যদিও কাশ্মিরের দলগুলোর পাশাপাশি কংগ্রেস, বামপন্থীরা ৩৭০ ধারা অব্যাহত রাখার পক্ষে।
সূত্রঃ রেডিও তেহরান
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন