সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক হজরত মোহাম্মাদ (সা.) -১৯
সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক হজরত মোহাম্মাদ (সা.) -১৯
বিশ্বনবী (সা.)বলেছেন : যে ব্যক্তি হালাল পথে জীবিকা আয় করতে লজ্জা পায় না, সে নিজেকে লাভবান করে ও তার খরচ হালকা হয়ে যায়। তার অহংকারও থাকে না। যে আল্লাহর দেয়া কম রুজিতে তুষ্ট থাকে আল্লাহ্ তার থেকে কম আমলেই সন্তুষ্ট হন। আর আল্লাহ দুনিয়া-প্রেমিকের আশা প্রলম্বিত করেন ও দুনিয়া-প্রেমের অনুপাতে তার অন্তরকে অন্ধ করেন। আর যে দুনিয়ার প্রতি অনাসক্ত থাকে ও দুনিয়াবি আশাকে খাটো করে আল্লাহ্ তাকে তার অনর্জিত জ্ঞানগুলো শিক্ষা দান করেন এবং কোনো পথ নির্দেশক ছাড়াই তাকে সুপথ দেখান। আর তার অন্তরের অন্ধত্বকে দূর করেন ও তাকে দৃষ্টিবান করেন। জেনে রাখ, আমার পরে এমন লোকেরা থাকবে যারা শাসন-কর্তৃত্ব ও রাষ্ট্র চালাতে পারবে না হত্যাকাণ্ড ও স্বেচ্ছাচারিতা ছাড়া। তাদের ধন-সম্পদে প্রাচুর্য হবে না কৃপণতা ছাড়া; তারা মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় হবে না রিপু ও কামনার দাসত্ব এবং ধর্মে অবহেলা প্রদর্শন করা ছাড়া। তাই যে এমন যুগ দেখবে সে যেন অভাবে, অখ্যাতিতে ও মানুষের ঘৃণায় ধৈর্য ধারণ করে যদিও ধনী, খ্যাতিমান ও জনপ্রিয় হওয়ার সামর্থ্য সে রাখে। আর এ কাজে তার একমাত্র উদ্দেশ্য হতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। আল্লাহ্ তাকে পরকালে পঞ্চাশ জন সিদ্দিকের বা সত্যবাদীর পুরস্কার দান করবেন।
মহানবী (সা.) বলেছেন : তোমরা মুনাফিকের মত বিনয় প্রদর্শন করবে না; আর সেটা হলো যখন শরীর বিনয়ী হয় কিন্তু অন্তরে বিনয় নেই।
তিনি বলেছেন : নিন্দিত সৎকর্মশীল ব্যক্তি অনুগ্রহপ্রাপ্ত হয়।
তিনি আরো বলেন : অনুগ্রহকে গ্রহণ করো। আরো সর্বোৎকৃষ্ট অনুগ্রহ হলো সুগন্ধি যা সহজে বহনীয় এবং সুঘ্রাণযুক্ত।
বিশ্বনবী (সা.)বলেছেন : ধার্মিক অথবা সম্ভ্রান্তকে অবশ্যই সদাচার করতে হবে। আর অক্ষমদের জিহাদ হলো হজ্ব। আর স্ত্রীর জিহাদ হলো খুব ভালোভাবে স্বামীর সেবা করা। আর দয়াশীলতা হলো ধর্ম বা দীনের অর্ধেক। আর যে ব্যক্তি হিসাব মতো খরচ করে চলে সে কখনো নিঃস্ব হয় না। আর সাদাকাহ্ দেয়ার মাধ্যমে রিজিক নামিয়ে আনো।
মহান আল্লাহর শেষ রাসূল বলেছেন : কোনো বান্দাই মুত্তাকীনদের মর্যাদায় পৌঁছতে পারবে না যতক্ষণ না এমন সব হালালকেও পরিহার করবে যাতে দূষণীয় ও হারাম বিষয়ে পতিত হওয়া থেকে বাঁচতে পারে।
রাসূল (সা.)'র মুচকি হাসি
একদিন রাসূল (সা.) আকাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন। এক ব্যক্তি হযরতকে বললেন,“ ইয়া রাসূলাল্লাহ আপনার হাসির কারণ কি?” রাসূল (সা.) বললেন,“ আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম দুইজন ফেরেশতা প্রতিদিন আল্লাহর ইবাদতকারী এক ব্যক্তির পুরষ্কার দিতে পৃথিবীতে এসেছেন। কিন্তু তারা দেখল সেই ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। ফেরেশতারা আল্লাহকে বলল,“ আমরা প্রতিদিনের মত ঐ ঈমানদার ব্যক্তির ইবাদতের স্থানে আজও গিয়েছিলাম, কিন্তু তাকে আজ সেখানে পেলাম না কেননা সে অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছে।”
আল্লাহ ফেরেশতাদেরকে বললেন,“ সে যতদিন অসুস্থ থাকে তার সওয়াবকে আগের মতই লিখতে থাক। তার অসুস্থতা অব্যাহত থাকা পর্যন্ত তার নেক আমলের পুরষ্কার দেয়া আমার কর্তব্য।”
(পালাক্রম মেনে চলো)
একদিন রাসূল (সা.) যখন বিশ্রাম করছিলেন এ অবস্থায় শিশু ইমাম হাসান (আ.) তাঁর কাছে পানি চাইলেন। রাসূল (সাঃ) এক পেয়ালা দুধ নিয়ে ইমাম হাসানের দিকে বাড়িয়ে দিলেন, তখন শিশু ইমাম হুসাইনও পেয়ালাটি নেয়ার জন্য এগিয়ে এলেন কিন্তু রাসূল (সাঃ) দুধের পেয়ালাটি হুসাইনকে না দিয়ে হাসানকেই দিলেন।
হযরত ফাতিমাতুয যাহরা (আ.) বিষয়টি দেখে রাসূল (সা.)এর কাছে প্রশ্ন করলেন,“ইয়া রাসূলাল্লাহ(সা.) আপনি কি হাসানকে বেশী ভালবাসেন?” রাসূল (সা.) বললেন, “এমনটি নয় আমি তাদের দুজনকেই সমান ভালবাসি; তবে হাসান যেহেতু আগে চেয়েছে তাই তাকে আগে দেওয়াটাই কর্তব্য।”
রাসূল (সা.)'র ক্রন্দন
এক রাত্রে রাসূল (সা.) নিজের স্ত্রী উম্মে সালামা(সালামুল্লাহি আলাইহা)'র ঘরে ছিলেন। বিশ্বনবী মধ্য রাতে উঠে ঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে দোয়া করছিলেন এবং কাঁদছিলেন।
উম্মে সালামা শব্দ শুনে এগিয়ে গিয়ে দেখলেন রাসূল (সা.) ঘরের এক কোণে দাড়িয়ে আকাশের দিকে হাত তুলে কাঁদছেন এবং বলছেন,“ হে আল্লাহ, যেসব নেয়ামত আমাকে দিয়েছেন তা আমার থেকে উঠিয়ে নিবেন না!”
হে আল্লাহ, আমাকে দুশমনদের তিরষ্কার থেকে রক্ষা করুন এবং যারা আমাকে হিংসা করে তাদেরকে আমার উপর আধিপত্য দিবেন না !
হে আল্লাহ, যেসব গোনাহ থেকে আমাকে মুক্ত রেখেছেন কখনোই আমাকে সে গোনাহে পতিত করবেন না !
হে আল্লাহ কখনোই আমাকে আমার উপর ছেড়ে দিবেন না এবং আপনিই আমাকে সকল দুর্বিপাক হতে রক্ষা করুন !
উম্মে সালামা রাসূল (সা.) এর এ দোয়া শুনে কাঁদতে কাঁদতে বিছানায় ফিরে গেলেন। রাসূল (সা.)বললেন,“ কাঁদছ কেন উম্মে সালামা?” উম্মে সালামা বললেন,
“ইয়া রাসূলাল্লাহ, কিভাবে না কেঁদে পারি ! আপনি এত বেশী মর্যাদার অধিকারী হওয়া সত্তেও যেভাবে আল্লাহর দরবারে রোনাজারী করছেন এবং তাঁর কাছে চাইছেন যে যেন তিনি আপনাকে এক মুহূর্তের জন্যেও আপনার নিজের উপর ছেড়ে না দেন। তাহলে আমাদের অবস্থাতো খুবই শোচনীয়!”
রাসূল (সা.) বললেন,“ কেন ভয় করব না, কেন কাঁদব না, কেনইবা আমার শেষ পরিণতি সম্পর্কে চিন্তিত থাকব না আর কিভাবেই বা আমার মর্যাদা ও সম্মানের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত থাকব?! আল্লাহপাক হযরত ইউনুসকে এক মুহূর্তের জন্যে এই নবীর নিজের ওপর ছেড়ে দেয়ায় কি কঠিন বিপদই না তার উপর নেমে এসেছিল!”
সূত্রঃ তেহরান রেডিও
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন