সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক হজরত মোহাম্মাদ (সা.) -৫
সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক হজরত মোহাম্মাদ (সা.) -৫
ঈসা (আ.)-এর একজন হাওয়ারীর বংশধর শামউন (রা.) মহানবী (সা.)-কে অনেক জটিল বিষয়ে প্রশ্ন করে সেসবের জবাব পেয়ে সন্তুষ্টচিত্তে তাঁর প্রতি ঈমান এনেছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি রাসূল (সা.)-কে বলেন: আমাকে সংবাদ দিন সত্যবাদী, মুমিন, ধৈর্যশীল, তওবাকারী, কৃতজ্ঞ, বিনয়ী, সৎকর্মশীল, উপদেশদাতা, ইয়াকীন বা বদ্ধমূল বিশ্বাসের অধিকারী, নিষ্ঠাবান, দুনিয়াত্যাগী, পুণ্যবান, পরহিজগার, জাহিরকারী, অত্যাচারী, লোক দেখানো আমলকারী, মুনাফিক, হিংসুক, অপচয়কারী, গাফেল লোক, বিশ্বাসঘাতক, অলস, মিথ্যুক এবং ফাসিকের চিহ্নগুলো কী কী?
তখন রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেন : সত্যবাদীর চিহ্ন চারটি :
১. নিজে সত্য কথা বলে,
২. আল্লাহর পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি এবং শাস্তির অঙ্গীকারগুলোকে সত্য বলে জানে,
৩. নিজের করা ওয়াদা বা অঙ্গীকার রক্ষা করে
৪. প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা করে না
আর মুমিনের চিহ্ন হলো, সে দয়াশীল হয়, অনুধাবন করে এবং লজ্জাশীল হয়।
আর ধৈর্যশীলের চিহ্ন চারটি :
১. অপছন্দনীয় বিষয়ে ধৈর্যধারণ,
২. ভালো কাজের সংকল্প,
৩. বিনয়
৪. সহিষ্ণুতা।
বিশ্বনবী (সা.)শামউনের প্রশ্নের জবাবে আরো বলেন, আর তওবাকারীর চিহ্ন চারটি :
১. শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করা,
২. মিথ্যা বা বাতিলকে ত্যাগ করা,
৩. সত্যের ওপর অবিচল থাকা
৪. ভালো কাজের প্রতি লোভ বা গভীর আগ্রহ
আর কৃতজ্ঞের চিহ্ন চারটি :
১. নেয়ামতগুলোর জন্য কৃতজ্ঞতা,
২. বিপদের জন্যেও আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা,
৩. আল্লাহর বরাদ্দে তুষ্ট থাকা,
৪. আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের প্রশংসা ও মহিমা জ্ঞাপন না করা।
আর বিনয়ীর চিহ্ন চারটি :
১. প্রকাশ্যে এবং গোপনে আল্লাহকে ভয় করা,
২. ভালো ও সুন্দর ধারণা করা,
৩. পরকালের চিন্তা
৪. আল্লাহর কাছে মোনাজাত।
সৎকর্মশীলের চিহ্ন চারটি :
১. নিজ অন্তরকে পবিত্র করবে
২. তার কাজকে ভালো করবে,
৩. উপার্জনকে পরিশুদ্ধ করবে
৪. তার সকল বিষয়কে সঠিকভাবে সম্পাদন করবে।
উপদেশদাতার চিহ্ন চারটি :
১. ন্যায়-বিচার করবে,
২. নিজের পক্ষ থেকে অন্যদের অধিকার প্রদান করবে,
৩. মানুষের জন্য সেটাই পছন্দ করবে যা নিজের জন্য পছন্দ করবে,
৪. কারো প্রতি সীমা অতিক্রম করবে না।
বিশ্বনবী (সা.) আরো বলেন, বদ্ধমূল ধর্ম-বিশ্বাস বা ইয়াকীনের অধিকারীর চিহ্ন ছয়টি :
১. আল্লাহর অস্তিত্বের বিষয়ে নিশ্চিত বিশ্বাস অর্জন এবং এর ভিত্তিতেই তাঁর প্রতি ঈমান আনা
২. ইয়াকীন রাখা যে, মৃত্যু নিশ্চিত এবং এ বিষয়ে সতর্ক থাকা।
৩. ইয়াকীন রাখা যে, কিয়ামত সত্য এবং সেদিনের লাঞ্ছনাকে ভয় করা,
৪. ইয়াকীন রাখা যে, বেহেশত সত্য ও এতে আসক্ত থাকা,
৫. ইয়াকীন রাখা যে, জাহান্নাম সত্য এবং তা থেকে বাঁচার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা,
৬. ইয়াকীন রাখা যে, হিসাব-নিকাশ সত্য, কাজেই নিজেই নিজের হিসাব-নিকাশ করা।
নিষ্ঠাবানের নিদর্শন চারটি :
১. তার অন্তর বিশুদ্ধ,
২. তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পাপাচার থেকে বিরত থাকে,
৩. তার মঙ্গল বা সেবা অন্যরা লাভ করে,
৪. অন্যরা তার অনিষ্ট থেকে মুক্ত থাকে।
বিশ্বনবী (সা.) আরো বলেন, দুনিয়াত্যাগীর চিহ্ন দশটি :
১. হারামগুলোর প্রতি নিষ্পৃহ,
২. নিজ প্রবৃত্তিকে সংযত রাখে,
৩. তার প্রতিপালকের তথা আল্লাহর নির্ধারিত ফরজগুলো পালন করে,
৪. যদি ক্রীতদাস হয়, তা হলে সে মালিকের অনুগত থাকে, আর যদি মালিক হয়, তা হলে ভালো একজন মনিব,
৫. গোঁড়া ও বর্ণবাদী নয়,
৬. বিদ্বেষী নয়,
৭. খারাপ আচরণকারীর সঙ্গে ভালো বা সুন্দর আচরণ করে,
৮. যে তার ক্ষতি করে, তার সে কল্যাণ করে,
৯. তার ওপর যে অত্যাচার করে, তাকে ক্ষমা করে,
১০. আল্লাহর অধিকার পালনে বিনত থাকে।
পুণ্যবানের চিহ্ন দশটি :
১. আল্লাহর জন্য ভালোবাসে,
২. আল্লাহর জন্য শত্রুতা করে,
৩. আল্লাহর জন্য কারো সহযোগী হয়,
৪. আল্লাহর জন্য কারো থেকে বিচ্ছিন্ন হয়,
৫. আল্লাহর জন্য রাগান্বিত হয়,
৬. আল্লাহর জন্য খুশী হয়,
৭. আল্লাহর জন্য কাজ করে,
৮. আল্লাহর সন্ধান করে,
৯. আল্লাহর প্রতি বিনয়ী থাকে ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায়, পবিত্র, নিষ্ঠাবান, লজ্জিত ও সতর্ক
১০. আল্লাহর জন্য সদাচার করে।
বিশ্বনবী (সা.) আরো বলেন, পরহিজগারের চিহ্ন ছয়টি :
১. আল্লাহকে ভয় করে,
২. তাঁর ক্রোধ সম্পর্কে সতর্ক থাকে,
৩ ও ৪. সকাল-সন্ধ্যা এমনভাবে অতিবাহিত করে যেন আল্লাহকে স্বচক্ষে দেখছে,
৫. দুনিয়াকে গুরুত্ব দেয় না,
৬. দুনিয়ার কোনো কিছুই তার কাছে বড় নয়, যদিও ওইসব বিষয় বা বস্তুর বৈশিষ্ট্য অথবা আচরণ মোহনীয় বা চাকচিক্যময় হয়ে থাকে।
জাহিরকারীর চিহ্ন চারটি :
১. অনর্থক ঝগড়া বা তর্ক করে,
২. তার ঊর্ধ্বনতনদের সাথে ঝগড়া করে,
৩. যা কিছু লাভ করতে পারে না তার পেছনেই ছুটে,
৪. যা কিছু তাকে মুক্তি দেয় না তার পেছনেই সকল চেষ্টা চালায়।
অত্যাচারীর চিহ্ন চারটি :
১. তার ঊর্ধ্বতনের প্রতি অবাধ্যতাবশত অত্যাচার করে,
২. তার অধস্তন বা অধীনস্থদের ওপর চড়াও হয়,
৩. সত্য ও ন্যায়ের সঙ্গে শত্রুতা করে,
৪. প্রকাশ্যে অত্যাচার করে।
বিশ্বনবী (সা.) আরো বলেন, লোক দেখানো আমলকারীর চিহ্ন চারটি :
১. অন্যদের সামনে অত্যন্ত আগ্রহ সহকারে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হয়,
২. নির্জনে অলসতা করে,
৩. প্রত্যেক কাজেই প্রশংসার প্রত্যাশী,
৪. বাহ্যিকভাবে নিজেকে ভাল দেখাতে তৎপর।
মুনাফিকের চিহ্ন চারটি :
১. তার স্বভাব নষ্ট,
২. তার জিহ্বা তথা মুখের কথা তার অন্তরের বিপরীত,
৩. তার কথা এবং কাজ আলাদা,
৪. তার গোপন অবস্থা আর প্রকাশ্য অবস্থা ভিন্ন ভিন্ন। মুনাফিক! জাহান্নামের আগুন থেকে অসহায় বা হতভাগ্য।
আর হিংসুকের চিহ্ন চারটি :
১. পরনিন্দা,
২. তোষামোদি,
৩. বিপদে গালি-গালাজ (মূল সূত্রেই চতুর্থটি বাদ পড়েছে)।
সীমালঙ্ঘনকারীর চিহ্ন চারটি :
১. বাতিল বিষয়ে গর্ব করে,
২. তার উপযুক্ত নয় এমন খাদ্য আহার করে,
৩. ভালো কাজের প্রতি নিষ্পৃহ,
৪. যার থেকে সে কোন কল্যাণ লাভ করতে পারেনি তাকে অস্বীকার করে।
উদাসীন লোকের চিহ্ন চারটি :
১. অন্ধত্ব,
২. ভুল,
৩. অহেতুক কাজ,
৪. বিস্মৃতি।
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন