ইমাম মূসা কাযিম (আ.) এর হাদীস- ৭
ইমাম মূসা কাযিম (আ.) এর হাদীস- ৭
لَيْسَ حُسْنُ الْجِوَارِ كَفَّ الْأَذَى وَ لَكِنَّ حُسْنَ الْجِوَارِ الصَّبْرُ عَلَى الْأَذَى
ইমাম মূসা কাযিম (আ.) বলেছেনঃ ভাল প্রতিবেশী গুণ এটা নয় যে অপরকে কষ্ট না দেয়া, বরং ভাল প্রতিবেশীর গুণ হচ্ছে অপরের খারাপ ব্যাবহার এবং হয়রানি ক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণ করা । (উসুলে কাফি, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৬৬৭, হাদীস নং ৯)
কিছু কিছু বিষয় রয়েছে যে, প্রতিবেশীদের অসাদাচরণ সহ্য করার মধ্যে একটি ভাল গুণ রয়েছে। কেননা ভাল প্রতিবেশীর গুণ হচ্ছে সহ্য করা এবং ক্ষমা করা। যদিও ইসলামে অত্যাচারির অত্যাচারকে সহ্য করতে বলা হয়নি বরং তার প্রতিরোধও করতে বলা হয়েছে।
একদা এক ব্যাক্তি রাসুল (সা.) এর খেদমতে উপস্থিত হয় এবং প্রতিবেশীর অত্যাচার সম্পর্কে অবগত করে রাসুল (সা.) তাকে বলেনঃ যাও ধৈর্য ধারণ কর। সে আবার আবার আসে এবং অভিযোগ করার সময় ক্রন্দও করে তখন রাসুল (সা.) বলেনঃ ধৈর্য ধারণ কর। কিন্তু যতদিন যাচ্ছিল প্রতিবেশীর অত্যাচার ততই বেড়ে যাচ্ছিল। যখন তৃতীয়বার সে রাসুল (সা.) এর কাছে আসে তখন রাসুল (সা.)বলেনঃ জুমআর দিন যখন মানুষেরা নামাজ পড়ার জন্য যাবে তখন তুমি রাস্তার উপরে নিজের জিনীস এবং আসবাবপত্রকে রাস্তাতে ফেলে রাখবে যেন নামাজে যাওয়ার সময় তারা উক্ত বিষয়টি দেখে। যদি তারা বিষয়টি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে তাহলে তাদেরকে উক্ত বিষয়টি সম্পর্কে অবগত কর। সেই ব্যাক্তিটিও অনুরুপভাবে আমল করে। যখন অত্যাচারি যখন বুঝতে পারে যে তার সম্মানের হানী হবে তখন সে দ্রুত তার কাছে ছুটে আসে এবং তার জিনীসগুলোকে তুলে নিতে বলে যে আমি আর তোমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করবো না। (উসুলে কাফি, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৪৮৬)
অনুরুপভাবে আমরা মাসুমিন (আ.)দের জীবনির প্রতি দৃষ্টিপাত করলেও দেখতে পাইযে তারাও তাদের প্রতিবেশীদের মঙ্গলকামনা করেছেন এবং বিভিন্ন সময়ে তাদের দেয়া কষ্টকেও সহ্য করেছেন।
ইমাম (আ.) খুবই দয়াশীল ও মহানুভব ব্যক্তি ছিলেন আর অন্যের অত্যাচার ও নিপীড়নকে উপেক্ষা করে চলতেন। প্রায় ঘটেছে যে, অন্যের অশোভন আচরণে ইমামের প্রতিক্রিয়া অপরাধী লোকটির আচরণে পরিবর্তন এনেছে। লিপিবদ্ধ আছে যে, ইমামের (আ.) প্রতিবেশীত্বে এক ইয়াহুদী পরিবার জীবন ধারণ করতো। ইয়াহুদীর বাড়ীর প্রাচীরে ফাটল ধরে ছিল এবং অপবিত্র ও নাপাক পানি তার ঘর থেকে ইমামের (আ.) বাসাতে প্রবেশ করছিল। ইয়াহুদী লোকটি অবশ্য এ সম্পর্কে কিছুই জানতোনা। একদিন ইয়াহুদী লোকের স্ত্রী সাহায্যের জন্য ইমামের (আ.) বাড়ীতে এল এবং দেখতে পেল যে, দেয়ালের ফাটলের কারণে ইমামের (আ.) ঘরের প্রাচীর অপবিত্র হয়ে গেছে।
বিলম্ব না করে স্বামীর কাছে গেল এবং তাকে অবহিত করলো। ইয়াহুদী লোকটি ইমামের (আ.) খেদমতে হাজির হল এবং নিজের অসতর্কতার জন্য ক্ষমা চাইলো এবং ইমাম (আ.) যে এতদিন চুপচাপ ছিলেন আর কিছু বলেননি তার জন্য খুব লজ্জিত হল। লোকটি যাতে আর বেশী লজ্জিত না হয় তাই ইমাম (আ.) বললেন: “আমার নানা আল্লাহর রাসুলের (সা.) কাছে শুনেছি যে, প্রতিবেশীদের সাথে মেহেরবানী কর”। ইয়াহুদী ব্যক্তি ইমামের (আ.) মহানুভবতা আর দেখেও না দেখার ভান করাতে এবং তাঁর পছন্দনীয় আচরণ দেখে তার বাড়ী ফিরে এলো। স্ত্রী ও বাচ্চার হাত ধরে ইমামের (আ.) কাছে এলো এবং তাঁর কাছে চাইলো যে,তাদেরকে দ্বীন ইসলামের প্রতি দিক্ষীত করে তুলুক।
অনুরুপভাবে আমরা দেখতে পাই যে হজরত ফাতেমা (সা.আ.) যখন সারা রাত ধরে নামাজ পড়তেন এবং নামাজান্তে সকল প্রতিবেশীদের জন্য দোয়া করছিলেন ইমাম হাসান (আ.) তাঁকে বলেনঃ হে মা আপনি সারা রাত ধরে নামাজ পড়লেন কিন্তু নিজের দোয়া করলেন না। তখন তিনি তার জবাবে বলেনঃ
يا بني الجار ثم الدار
প্রথমে প্রতিবেশী তারপর নিজের বাড়ি। (এলালুশ শারায়ে, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ২১৬)
সুতরাং একজন ভাল প্রতিবেশীর গুণ হচ্ছে অপর প্রতিবেশীর খোয়াল রাখা যেন তার কোন আচরণের কারণে অপর প্রতিবেশী যেন মনক্ষু্ন্ন না হয় বা তার আচরণ তার কষ্টের কারণ না হয়। কারণ একজন ভাল প্রতিবেশী হচ্ছে খোদার নেয়ামত স্বরূপ।
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন