জাতিসংঘের রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে নাগরিকত্ব দেয়ার আবেদন
জাতিসংঘের রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে নাগরিকত্ব দেয়ার আবেদন
মিয়ানমার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত বিজয় নাম্বিয়ার রোহিঙ্গা মুসলমানদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
১লা মে নিউইয়র্কের পিস ইনস্টিটিউটে জাতিসংঘের বিশেষ দূত বিজয় নাম্বিয়ার এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে মিয়ানমারের নাগরিকত্ব দিতে অস্বীকার করার মধ্য দিয়ে আশিয়ান এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সেদেশের সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। নাম্বিয়ার হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন যতদিন রোহিঙ্গা মুসলমানদের নাগরিক সুযোগ সুবিধা দেওয়া না হবে ততদিন তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না। জাতিসংঘ এবং তাদের অধীনে যেসব সংগঠন মানবাধিকার বিষয়ে কাজ করছে তারা প্রায় এক বছর ধরে রোহিঙ্গা মুসলমানদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে এসেছে।
মিয়ানমার সরকার যে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছে না এবং তারা যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর ব্যাপক বৈষম্যমূলক আচরণ করছে, সেজন্য তারা মিয়ানমার সরকারের ব্যাপক সমালোচনাও করে আসছে।
এখন পর্যন্ত মিয়ানমারের কোনো মুসলমান সাময়িক পরিচয়পত্র পর্যন্ত পায় নি। তারা তাদের নবজাতকদের নাম নিবন্ধন করতে পারছে না। এমনকি স্বাধীনভাবে চলাফেরা করা, এদিক-ওদিক যাওয়া আসা করার অনুমতিও পাচ্ছে না। অবশ্য জাতিসংঘও এক বছর আগ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদেরকে একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিসেবে স্বীকৃতি দেয় নি।
মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে আদমশুমারি থেকে বাদ দিয়েছে এবং তাদেরকে তাদের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। মিয়ানমারের উগ্র বৌদ্ধরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যে বর্ণনাতীত নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে এমনকি তারা যে রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করতে বিচিত্রভাবে অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার সরকার তা না দেখার ভান করছে। এমনকি প্রতিবেশী বহু দেশ, বিভিন্ন সংস্থা, আশিয়ানভুক্ত দেশগুলোর পক্ষ থেকে মিয়ানমারের মুসলমানদের ওপর সদয় আচরণ করার পরামর্শ দেওয়ার পরও কোনো লাভ হয় নি। মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সেসব পরামর্শে কান দেয় নি।
মজার ব্যাপার হলো মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় বলেছিলেন মিয়ানমারের মুসলমানদেরও বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। কিন্তু মিয়ানমার সরকার ওবামার সেই অধিকারের বুলিকেও পাত্তা দেয় নি। শুধু তাই নয়, গত ত্রিশ বছরের মধ্যে এবারই প্রথমবারের মতো মিয়ানমারের আদমশুমারি অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই আদমশুমারিতে রোহিঙ্গা মুসলমানদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে নাম অন্তর্ভুক্ত করতে দেওয়া হয় নি।
মিয়ানমারের কর্মকর্তারা বলছেন, রোহিঙ্গারা যদি নিজেদেরকে বাঙালি অভিবাসী হিসেবে নাম অন্তর্ভুক্ত করতে রাজি হয় তাহলেই তাদের নাম নিবন্ধন করা হবে। এর অর্থ হলো রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিজস্ব পরিচয় ও অধিকার হরণ করা। এভাবে তাদের নাম নিবন্ধন করা হলে মিয়ানমারের মুসলমানরা সেদেশের অবৈধ অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত হবে এবং ভবিষ্যতে তাদেরকে মিয়ানমার থেকে উচ্ছেদ করার পথ সুগম হবে।
নিঃসন্দেহে মিয়ানমার সরকার রাজনৈতিক সংস্কার করার আড়ালে বর্ণবাদী নীতি অব্যাহত রাখবে। যেমনটি বলেছেন মিয়ানমারে মার্কিন প্রচার সমন্বয়কারী মিরাদাগি পাও। তিনি বলেছেন রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর উগ্র বৌদ্ধরা যে পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে তার প্রতি মিয়ানমার সরকারের গোপন সহায়তা ও সমর্থন রয়েছে।
মিয়ানমারের মুসলমান জনগোষ্ঠির ওপর যে অকথ্য নির্যাতন নিপীড়ন চলছে বিশ্বব্যাপী সে ব্যাপারে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। সেজন্য জাতিসংঘের দায়িত্ব হচ্ছে এ বিষয়টি তদারকি করে যথার্থ ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া। কিন্তু বিশেষজ্ঞ মহলের অনেকেরই প্রশ্ন হচ্ছে জাতিসংঘ কি আদৌ তার দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করতে পারবে?
সূত্রঃ রেডিও তেহরান
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন