আমেরিকা পরমাণু আলোচনায় ইরানের সঙ্গে এগিয়ে থাকতে চায়
আমেরিকা পরমাণু আলোচনায় ইরানের সঙ্গে এগিয়ে থাকতে চায়
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেছেন, ইরানের সঙ্গে পরমাণু আলোচনায় অন্য দেশের চেয়ে আমেরিকার এগিয়ে থাকা জরুরী।
তিনি গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন, এ ক্ষেত্রে আমরা আগে উদ্যোগ নিয়েছি এবং যুদ্ধের আগে রাজনৈতিক উপায়ে পরমাণু সমস্যার সমাধান করা যায় কিনা সে বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হতে চাই। এ সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেছেন, ভিয়েতনাম যুদ্ধের কথা আমার পুরোপুরি মনে আছে এবং আমি মনে করি নতুন করে যে কোনো যুদ্ধে যাওয়ার আগে যাচাই করে দেখতে হবে যুদ্ধের চেয়ে আরো ভালো কোনো উপায় আছে কিনা। তিনি বলেন, যেহেতু এ ক্ষেত্রে আমাদের দায় দায়িত্ব অনেক বেশি তাই সব কিছুই আমাদের খতিয়ে দেখা উচিত।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন কর্মকর্তারা এটা ভালো করেই জানেন যে, কি ধরণের পদক্ষেপ তাদের নেয়া উচিত। কারণ তারা গত ২৪ নভেম্বর জেনেভায় ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি মেনে চলতে বাধ্য। তাদের মতে, পরমাণু আলোচনার ব্যাপারে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ ধরণের মন্তব্যের পেছনে দু’টি কারণ থাকতে পারে। একদিকে তিনি ইসরাইল-মার্কিন স্বার্থ রক্ষাকারী যৌথ কমিটি আইপ্যাকের বার্ষিক বৈঠকের প্রাক্কালে ইহুদিবাদী মহলকে খুশি করার চেষ্টা করছেন অন্যদিকে ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের পরমাণু চুক্তির ব্যাপারে মার্কিন দ্বিমুখী নীতির ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করছেন।
আমেরিকায় ইহুদিবাদী লবি আইপ্যাক সম্প্রতি ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ব্যাপারে চূড়ান্ত চুক্তিতে উপনীত হওয়ার জন্য সে দেশটিকে শক্ত শর্ত বেধে দিতে মার্কিন কংগ্রেসের প্রতি আহবান জানিয়েছে। চূড়ান্ত চুক্তির শর্ত হিসেবে তারা পরমাণু কর্মসূচি থেকে ইরানকে পুরোপুরি বিরত রাখার দাবি জানিয়েছে। অথচ ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের প্রাথমিক পরমাণু চুক্তির ধারাগুলো এতটাই স্বচ্ছ যে, মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েন্ডি শেরম্যান কিছুদিন আগে তেলআবিব সফরে গিয়ে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাতে বলেছেন, ইরান তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অধিকার রক্ষা করতে পারবে।
এদিকে, জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের ইসরাইল সফরের একই সময়ে পরমাণু আলোচনা বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির এ বক্তব্য নানা দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। মার্কেল ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাতে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি, ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মানবাধিকার বিষয়ে মিথ্যা দাবি তুলে দেশটির ভাবমর্যাদা ক্ষুন্ন করার চেষ্টা চালিয়েছেন। তিনি বলেন, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি শুধু ইসরাইলের জন্য হুমকি নয় সেইসঙ্গে এটি গোটা ইউরোপের নিরাপত্তার জন্যও হুমকি। মার্কেল তার বক্তব্যে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যেরই পুনরাবৃত্তি করেন মাত্র।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আলোচনার টেবিলে ইরানের ওপর চাপ সৃষ্টি করাই পাশ্চাত্যের প্রধান উদ্দেশ্য এবং এটা নতুন কিছু নয়। তবে মার্কিন কর্মকর্তা সম্প্রতি যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন তা থেকে তাদের বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ভিয়েতনাম যুদ্ধের পরিণতি থেকে শিক্ষা নেয়ার ওপর যে গুরুত্বারোপ করেছেন তা থেকে ইরানের ব্যাপারে তাদের মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায়। তবে শুধু ভিয়েতনাম নয় একই সঙ্গে ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধেও তদের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। এ যুদ্ধের কারণে মার্কিন কর্মকর্তারা ঘৃণিত ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছে।
ইরানে ইসলামী বিপ্লব বিজয়ের শুরু থেকেই আমেরিকা বিভিন্ন উপায়ে ইরানের ক্ষতি করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। এ লক্ষ্যে, সাদ্দামকে দিয়ে ইরানে হামলা চালানো, ইরানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ, দেশটির উন্নয়নের পথে বাধা দেয়া, সন্ত্রাসবাদের প্রতি সমর্থন দেয়ার অভিযোগ উত্থাপন প্রভৃতির কথা উল্লেখ করা যায়।
সূত্রঃ রেডিও তেহরান
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন