মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিরিয়া যুদ্ধে পরাজয়ের কথা স্বীকার করলেন
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিরিয়া যুদ্ধে পরাজয়ের কথা স্বীকার করলেন
আমেরিকা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতন ঘটানোর জন্য গত তিন বছর ধরে সেদেশের বিদ্রোহীদের সর্বাত্মক সমর্থন দিয়ে এলেও মার্কিন কর্মকর্তারা এখন সিরিয়া যুদ্ধে তাদের পরাজয়ের কথা স্বীকার করেছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি জার্মানির মিউনিখে অনুষ্ঠিত নিরাপত্তা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের অবকাশে এক সমাবেশে বলেছেন, সিরিয়ার ব্যাপারে আমেরিকার সব পরিকল্পনা কার্যত ব্যর্থ হয়েছে এবং এটা এখন আর গোপন কিছু নয়। তিনি আরো বলেছেন, সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্রের মাত্র কিছু অংশ সেদেশ থেকে সরানো হয়েছে এবং রাশিয়া সিরিয়াকে অস্ত্র দেয়া অব্যাহত রেখেছে। এ অবস্থায় সিরিয়ার ব্যাপারে আমেরিকার নীতিতে পরিবর্তন আনা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আরব বিশ্বে স্বৈরাচার বিরোধী গণজাগরণ শুরু হওয়ার পর থেকে আমেরিকা সিরিয়ায় রাজনৈতিক গোলযোগ বাধানো এবং আসাদ সরকারের পতন ঘটিয়ে সেখানে পাশ্চাত্যের অনুগত একটি সরকার বসানোর চেষ্টা চালিয়ে আসছে। সিরিয়ায় কয়েকটি শহরে গোলযোগ দেখা দেয়ার সাথে সাথে মার্কিন কর্মকর্তারা সিরিয়ায় গোলযোগ সৃষ্টিকারী বিদ্রোহীদের প্রতি সামরিক ও রাজনৈতিক সমর্থন দেয়া শুরু করে। তারা ভেবেছিলেন, এভাবে মিশর ও তিউনিশিয়ার মত সিরিয়ায়ও তাদের অনুগত সরকার বসানো যাবে।
কিন্তু সিরিয়ার সরকারের প্রতি সেদেশের জনগণের ব্যাপক সমর্থনের কারণে এবং সরকারও বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়ায় সিরিয়ার ব্যাপারে আমেরিকার সব ষড়যন্ত্র শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে। অবশ্য সিরিয়া যুদ্ধে আমেরিকা একা জড়িত নয়। মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার মিত্র যেমন তুরস্ক, সৌদি আরব ও কাতারের মত আরব দেশগুলো এবং ইউরোপের অনেক দেশ ও ইসরাইলও সিরিয়া যুদ্ধে আমেরিকাকে সহযোগিতা দিয়ে আসছে। সারা বিশ্বের সন্ত্রাসী ও উগ্র গোষ্ঠীগুলোকে নিয়ে সিরিয়ায় তাকফিরি গোষ্ঠী আত্মপ্রকাশ করার পর পাশ্চাত্য তাদের কৌশলে পরিবর্তন আনে। পাশ্চাত্যের সরকারগুলো প্রথমে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলে সিরিয়া সংকটে জড়িয়ে পড়লেও পরে নীতি পরিবর্তন করে সরাসরি সন্ত্রাসীদের পক্ষে অবস্থান নেয়।
বর্তমানে সিরিয়ায় বিদেশি মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সরকারি সেনাদের ধ্বংসাত্মক ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলছে। একদিকে রয়েছে সিরিয়ার জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে সেদেশের সেনাবাহিনী আর অন্যদিকে রয়েছে পাশ্চাত্যের অর্থ ও অস্ত্র সহায়তায় গড়ে ওঠো আল-কায়দাপন্থী উগ্র তাকফিরি গোষ্ঠী। এরই মধ্যে সিরিয়ার চারটি ঘটনা সেনাবাহিনীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ চারটি ঘটনা হচ্ছে, বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর একের পর এক বিজয়, রাসায়নিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তিতে সই করতে দামেস্কের সম্মতি, বিদ্রোহীদের মধ্যে ভাঙ্গন ও তীব্র মতবিরোধ এবং পাশ্চাত্যের অর্জন ছাড়াই জেনেভা-দুই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সমাপ্তি। এসব কারণে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি সিরিয়ার ব্যাপারে পাশ্চাত্যের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। অবশ্য কেরি দ্রুত সিরিয়া থেকে রাসায়নিক অস্ত্র সরিয়ে নেয়ার মাধ্যমে ওই অঞ্চলে শক্তির ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
এখন এ আশঙ্কা দেখা দিয়েছে যে, সিরিয়ার মধ্যপন্থী ও পাশ্চাত্য ঘেঁষা গ্রুপকে নতুন করে অস্ত্রে সজ্জিত করার যে কথা বলছে পাশ্চাত্য তাতে আল কায়দার মত উগ্র গোষ্ঠীগুলোর হাত আরো শক্তিশালী হতে পারে। এরই মধ্যে আমেরিকা ও ইউরোপীয় দেশগুলো সিরিয়া থেকে ফেরত আসা সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সামগ্রিক এ পরিস্থিতিতে আমেরিকাসহ পাশ্চাত্যের অন্যান্য দেশ সিরিয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণে দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে পড়েছে।
সূত্রঃ রেডিও তেহরান
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন