সূরা বনী ইসরাইল; আয়াত ৫৬-৫৯

সূরা বনী ইসরাইল; আয়াত ৫৬-৫৯


সূরা বনী ইসরাইলের ৫৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছৈন-
قُلِ ادْعُوا الَّذِينَ زَعَمْتُمْ مِنْ دُونِهِ فَلَا يَمْلِكُونَ كَشْفَ الضُّرِّ عَنْكُمْ وَلَا تَحْوِيلًا (56)
“হে রাসূল আপনি কাফের মুশরিকদেরকে বলুন: “আল্লাহকে ছাড়া তোমরা যাদের উপাস্য মনে কর, তাদের আহ্বান কর। অথচ তোমাদের দুঃখ-কষ্ট দূর করার অথবা তা পরিবর্তনের কোন ক্ষমতা তাদের নেই।” (১৭:৫৬)

প্রকৃত মুমিনদের লক্ষণ হল তারা দুঃখ-কষ্টের মধ্যে আল্লাহর ওপর নির্ভর করে। অন্যদিকে কাফির-মুশরিক ও এমনকি দুর্বল ঈমানের লোকরা অন্য মানুষ এবং যেসব প্রাণী বা জীব-জন্তু ও জড় বস্তুকে খোদা মনে তারা মানুষের দুঃখ-কষ্ট দূর করতে সক্ষম বলেও তারা বিশ্বাস করে। তাই তারা আল্লাহর পরিবর্তে এইসবের দ্বারস্থ হয়।
এই আয়াতে আল্লাহ তাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন: সব মানুষেরই এটা জেনে রাখা উচিৎ যে, আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয় এবং তিনি ছাড়া অন্য কারোই নিজস্ব কোন শক্তি নেই। আল্লাহর ইচ্ছা ও অনুমতি ছাড়া কেউই কারো ক্ষতি করতে বা ক্ষতি রোধ কিংবা ক্ষতিপূরণের ক্ষমতা রাখে না।

এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিক হচ্ছে:
এক. আল্লাহ ছাড়া কর ওপর ভরসা করা মরীচিকা বা কল্পনার মতই অবাস্তব বিষয়। মুশরিকরা এ ধরনের কল্পনা-বিলাসেই আক্রান্ত।
দুই. একমাত্র মহান আল্লাহই সংকট বা সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা রাখেন। অবশ্য আল্লাহর আউলিয়া বা প্রিয় ব্যক্তিরাও আল্লাহর ইচ্ছায় নানা সংকট বা সমস্যা সমাধান করতে পারেন।

সূরা বনী ইসরাইলের ৫৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
أُولَئِكَ الَّذِينَ يَدْعُونَ يَبْتَغُونَ إِلَى رَبِّهِمُ الْوَسِيلَةَ أَيُّهُمْ أَقْرَبُ وَيَرْجُونَ رَحْمَتَهُ وَيَخَافُونَ عَذَابَهُ إِنَّ عَذَابَ رَبِّكَ كَانَ مَحْذُورًا (57)
“তারা যাদের (খোদা মনে করে এবং আল্লাহর পরিবর্তে তাদের) আহ্বান করে, তারা নিজেরাই তো তাদের পালনকর্তার নৈকট্য লাভের জন্য মাধ্যম তালাশ করে যাতে তারা জানতে পারে যে তাদের মধ্যে কে আল্লাহর বেশি নৈকট্যশীল। তারা তাঁর রহমতের আশা করে এবং তাঁর শাস্তিকে ভয় করে। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তার শাস্তি সম্পর্কে তারা সতর্কিত হয়েছে।” (১৭:৫৭)

দৃশ্যত এই আয়াতে খ্রিস্টানদের দিকে ইশারা করা হয়েছে। কারণ, তারা হযরত ঈসা (আ.)কে আল্লাহর ছেলে বলে মনে করে ও তার উপসনা করে। আল্লাহ এ আয়াতে বলেছেন, আল্লাহর পরিবর্তে যে ঈসাকে তোমরা খোদা মনে কর সেই ঈসাই (নবী) আমার নৈকট্য লাভের পথ খোঁজার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন যাতে যত বেশি সম্ভব আল্লাহর নৈকট্য বা ঘনিষ্ঠতা অর্জন করা যায়। ঈসা (আ.) নিজেই তো আমার রহমত ও সাহায্যের জন্য আশাবাদী এবং আল্লাহর শাস্তির ব্যাপারে ভীত। তাই তোমরা কিভাবে তাকে খোদা মনে করছ?

এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিক হল :
এক. আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য অনেক পন্থা রয়েছে। এক্ষেত্রে অবশ্যই সবচেয়ে কাছের বা সহজ পথটি বেছে নেয়াই উত্তম।
দুই. আল্লাহর রহমত তার ক্রোধের চেয়েও বেশি বা আল্লাহর রহমত তার ক্রোধের চেয়েও প্রাধান্য পায়। তাই আল্লাহর শাস্তির চেয়েও তাঁর রহমতের প্রতি বেশি আশাবাদী হওয়া উচিৎ।

সূরা বনী ইসরাইলের ৫৮ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-
وَإِنْ مِنْ قَرْيَةٍ إِلَّا نَحْنُ مُهْلِكُوهَا قَبْلَ يَوْمِ الْقِيَامَةِ أَوْ مُعَذِّبُوهَا عَذَابًا شَدِيدًا كَانَ ذَلِكَ فِي الْكِتَابِ مَسْطُورًا (58)
“এমন কোন জনপদ নেই কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার আগে আমরা যার ধ্বংসকারী অথবা (পাপের কারণে) জনপদের (অধিবাসীরদের) ওপর কঠোর শাস্তি প্রদানকারী নই; এটা তো গ্রন্থে (আল্লাহর জ্ঞানে) লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে।” (১৭:৫৮)

পবিত্র কুরআনের আয়াত অনুযায়ী এই পৃথিবীতে মানুষের জীবন সীমিত এবং একদিন এই পৃথিবীটাই ধ্বংস করা হবে। তাই চূড়ান্ত বিচারের দিন তথা কিয়ামত বা পুনরুত্থানের আগেই আল্লাহ বিশ্ব জগত ধ্বংস করবেন এবং বিলুপ্ত হবে সব মানুষ। পৃথিবীর কোন স্থানই ধ্বংসলীলা থেকে রক্ষা পাবে না।
কিন্তু কোন কোন অঞ্চলে ব্যাপক পাপাচার ও জুলুম প্রচলিত থাকায় ওই চূড়ান্ত ধ্বংসলীলার আগেই আল্লাহর আজাব নাজিল হবে। ফলে সেইসব অঞ্চল বা জনপদ গোটা বিশ্ব ধ্বংস হওয়ার আগেই ধ্বংসের শিকার হবে। আর এসবই আল্লাহর জ্ঞানে সুনির্দিষ্ট হয়ে আছে।

এ আয়াত থেকে আমাদের মনে রাখা দরকার:
এক. ইহকালীন এই জীবন বিশ্বের কোন স্থানেই এবং কারো জন্যই স্থায়ী নয়।
দুই. পার্থিব এই জগতের অবসান ঘটনাক্রমেই ঘটবে না, বরং খোদায়ী ইচ্ছা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটবে।

সূরা বনী ইসরাইলের ৫৯ নম্বর আয়াত শুনব:
وَمَا مَنَعَنَا أَنْ نُرْسِلَ بِالْآَيَاتِ إِلَّا أَنْ كَذَّبَ بِهَا الْأَوَّلُونَ وَآَتَيْنَا ثَمُودَ النَّاقَةَ مُبْصِرَةً فَظَلَمُوا بِهَا وَمَا نُرْسِلُ بِالْآَيَاتِ إِلَّا تَخْوِيفًا (59)
“এবং নিদর্শন (মুজিযা) প্রেরণে আমাদের অন্য কোন কিছু বাধা দেয় না এটা ছাড়া যে, পূর্ববর্তীরা সেটাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল। আমরা সামূদ জাতিকে নিদর্শন স্বরূপ উট দান করেছিলাম যা ছিল দৃষ্টি উন্মোচনকারী, কিন্তু তারা তার ওপন জুলুম করেছিল। আমরা কেবল ভয় দেখানোর জন্যই নিদর্শন পাঠিয়ে থাকি।” (১৭:৫৯)

আগেও পবিত্র কুরআনের আয়াতে যেমনটি এসেছে, মক্কার কাফির ও মুশরিকরা নানা রকম মুজিযা বা খোদায়ী নিদর্শন দেখানোর জন্য রাসূল (স.)এর কাছে দাবি জানাত। যেমন, মক্কার পাহাড়গুলোকে সোনার পরিণত করা ছিল তাদের অন্যতম দাবি। আল্লাহ বলছেন, গোঁড়া লোকেরা এ রকম নিদর্শন দেখানোর পরও ঈমান আনবে না। আর মানুষের দাবির কারণে দেখানো মুজিযাগুলেকে যদি তারা মিথ্যা বলে তাহলে ইহকালেই আল্লাহর ক্রোধ ও শাস্তির শিকার হবে তারা। যেমন, সামুদ জাতির লোকেরা খোদায়ী নিদর্শন হিসেবে পাথর থেকে বের হয়ে আসা উট দেখার পরও হযরত সালেহ (আ.)এর প্রতি ঈমান আনেনি, বরং ওই উটকে হত্যা করে। ফলে আল্লাহ সামুদ জাতিকে ধ্বংস করে দেন।

এ আয়াত থেকে আমাদের মনে রাখা দরকার:
এক. আল্লাহ সবকাজই করতে সক্ষম। কিন্তু তিনি কাজ করেন প্রজ্ঞার আলোকে, মানুষের খেয়াল-খুশির আলোকে নয়।
দুই. খোদায়ী নিদর্শন ও পবিত্র বিষয়গুলোর অবমাননা করা হলে এই পৃথিবীতেও খোদায়ী শাস্তি পেতে হবে, আর পরকালের শাস্তি তো আছেই।
সূত্রঃ রেডিও তেহরান

 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন