বাংলাদেশের চলমান ঘটনাপ্রবাহে এইচআরডব্লিউ’র উদ্বেগ
বাংলাদেশের চলমান ঘটনাপ্রবাহে এইচআরডব্লিউ’র উদ্বেগ
বাংলাদেশে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তারে উদ্বেগ প্রকাশ করে এর তীব্র সমালোচনা করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। একইসঙ্গে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে চাপ বৃদ্ধি করতে করার আহ্বান জানায় নিউইয়র্কভিত্তিক এ সংগঠনটি।
বুধবার এক হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, “৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হওয়ার পর থেকে নতুন করে এই গণগ্রেফতার শুরু হয়েছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট এই নির্বাচন বর্জন করায় নির্বাচনের আগেই শত শত বিরোধী নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিরোধী নেতা খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দি করা হয়। খালেদার সঙ্গে যোগাযোগে বাধা দিতে এবং কাউকে তার বাসার ভেতরে প্রবেশে কিংবা বাড়ি থেকে বের হতে না দিতে নিরাপত্তাবাহিনী বাড়ির চারিদিকে ব্যারিকেড তৈরি করে। কঠোর করা হয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা। গ্রেফতার আতঙ্কে আত্মগোপনে চলে যায় দলটির নেতা-কর্মীরা।“
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এশিয়ার পরিচালক ব্রাড অ্যাডামস বলেন, “ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা বন্ধ, মতবিরোধ কমাতে, ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে বিরোধীদের সহিংসতাকে কঠোরভাবে দমন করতে সরকার এই গ্রেফতার অভিযান চালাচ্ছে। ক্ষমতাসীন আ.লীগ নিজেকে বাংলাদেশের প্রধান গণতান্ত্রিক দল হিসেবে দাবি করে, কিন্তু নিজের দলের সমালোচনা কঠোরভাবে দমন করতে গণতান্ত্রিকভাবে কিছুই করছে না।“
বিবৃতিতে বলা হয়, নির্বাচনী সহিংসতায় বাংলাদেশে কমপক্ষে ১৫০ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে বিরোধী দলেরই বেশি। গণমাধ্যম সূত্র জানায়, ভোটের দিন সহিংসতায় কমপক্ষে ১৮ জন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে অনেকে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন।
গত ২৯ ডিসেম্বর বিএনপি ঘোষিত ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দলটির বহু নেতা-কর্মীকে পুলিশের গ্রেপ্তারের বিষয়টিও বিবৃতিতে উঠে আসে। একজন বিএনপি সংসদ সদস্যের সহযোগির বরাত দিয়ে জানানো হয়, তিনি ওই প্রোগ্রামের জন্য ২০০ সমর্থকসহ পরিবহণের ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু তাদের সবাইকে পুলিশ গ্রেফতার করে। পরে ঘুষ দেয়ার পর বিকেলে পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর নেতারা গ্রেপ্তারের ভয়ে আছেন বলে জানানো হয়। এরইমধ্যে তাদের অসংখ্য কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং বাকিরা আত্মগোপনে রয়েছে। এরআগে গঠনতন্ত্রের সঙ্গে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের মিল না থাকায় জামায়াতকে নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট ও নির্বাচন কমিশন।
বিবৃতিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশে চলমান সহিংসতা বন্ধে দুই দলের মধ্যে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টিতে দুই দল ব্যর্থ হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। একতরফা নির্বাচনের জন্য অনেক দেশের সরকারও সমালোচনা করেছে। বাংলাদেশে চলমান সহিংসতা বন্ধ করতে আমেরিকা, কানাডা, জার্মানি এবং অন্যান্য দেশ সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছিল। বিতর্কিত এই নির্বাচনে আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অন্যান্য দেশ পর্যবেক্ষক পাঠাতে অস্বীকৃতির বিষয়টি তুলে ধরা হয় ওই বিবৃতিতে।
নির্বিচারে গ্রেফতার বন্ধ, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার, মতপ্রকাশ, সভা-সমাবেশের অধিকার এবং স্বাধীনভাবে নাগরিকদের চলাচলের অধিকারের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে চাপ প্রয়োগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অনুরোধ জানিয়েছে হিউমান রাইটস ওয়াচ। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এশিয়ার পরিচালক ব্রাড অ্যাডামস বলেন, চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা দূর করতে সব দলকে রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধ করতে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। একই সঙ্গে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে চাপ বৃদ্ধি করতে হবে।
সূত্রঃ রেডিও তেহরান
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন