হযরত আদম (আ.) ও কিছু অজানা কথা

শাইস (আ.) এর জন্মের পর, হযরত আদম (আ.) এর বিদায়ের সময় ঘনিয়ে এল এবং যে শিক্ষা তিনি পেয়েছিলেন তা তাঁর পুত্রকে ওসিয়ত করার জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশিত হলেন। হযরত আদম (আ.)ও নিজের সকল সন্তানকে একত্রিত করে বললেন : আমার পরে তোমাদের মাঝে আমার স্থলাভি

হযরত আদম (আ.) ও কিছু অজানা কথা

শাইস (আ.) এর জন্মের পর, হযরত আদম (আ.) এর বিদায়ের সময় ঘনিয়ে এল এবং যে শিক্ষা তিনি পেয়েছিলেন তা তাঁর পুত্রকে ওসিয়ত করার জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশিত হলেন। হযরত আদম (আ.)ও নিজের সকল সন্তানকে একত্রিত করে বললেন : আমার পরে তোমাদের মাঝে আমার স্থলাভিষিক্ত হবে হেবাতুল্লাহ (শাইস) এবং তারা সকলে পিতার এ নির্দেশ মান্য করেছিল।
মৃত্যুর পূর্বে হযরত আদম (আ.) এর ওসিয়ত
বিশ্বস্ত সূত্রে ইমাম মুহাম্মাদ বাকির (আ.) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত আদম (আ.) একটি সিন্দুক তৈরীর নির্দেশ দিলেন এবং নিজের জ্ঞান, পবিত্র নামসমূহ এবং ওসিয়তকে তার ভিতরে রেখে হযরত শাইসকে তা দান করে বললেন : আমার মৃত্যুর পর আমাকে গোসল দেবে, কাফন পরাবে এবং আমার উপর নামায আদায় করবে। অতঃপর আমাকে কবরে শুইয়ে দেবে। যখন তোমার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসবে এবং তুমি মৃত্যুর আলামত অনুভব করবে তখন তোমার সন্তানদের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সন্তানকে নির্বাচন করো এবং আমি যা কিছু তোমাকে ওসিয়ত করছি তুমিও তাকে সে ওসিয়ত করো, যাতে সে তা সম্পাদন করতে পারে। আর পৃথিবীকে খলিফা ও স্থলাভিষিক্ত ব্যতীত ত্যাগ করো না।
কেন হযরত জীবরাইল (আ.) ইমামতি করেননি?
হযরত ইমাম সাদিক (আ.) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত আদম (আ.) এর ওফাতের পর তার উপর নামায আদায়ের সময়ে হযরত হেবাতুল্লাহ (শাইস) হযরত জীবরাইলকে (আলাইহিমাস সালাম) বললেন : হে আল্লাহর দূত, এগিয়ে যাও এবং আল্লাহর নবী’র উপর নামায পড়। অতঃপর জীবরাইল (আ.) বললেন : তোমার পিতার প্রতি সিজদা করার জন্য মহান আল্লাহ্ আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। অতএব, আমরা তার (বংশের) সত্কর্মকারী ও সন্তানদের চেয়ে অগ্রগামী হব না, আর তুমি তাদের মাঝে সর্বাধিক সত্কর্মকারী।
অতঃপর হযরত শাইস (আ.) অগ্রসর হয়ে পাঁচটি তাকবীর বললেন –যে সংখ্যার উপর মহান আল্লাহ্ তার বান্দাদের উপর নামায ওয়াজিব করেছেন-। এরপর হতে ঐ সুন্নত আদমের সন্তানদের মাঝে কেয়ামত অবধি চালু হয়ে যায়।
মৃত্যু ব্যক্তির কাফনে দু’টি কাঠের টুকরো রাখা
হযরত মুহাম্মাদ (স.) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত আদম (আ.) শুক্রবার দিন ইন্তেকাল করেন। মুসলিম মনীষীগণ বর্ণনা করেছেন যে, যখন হযরত আদম (আ.)কে জান্নাত হতে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয় তখন তিনি বেহেশত হতে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে অত্যন্ত সন্ত্রস্ত ছিলেন। আর তাই মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করলেন যাতে তিনি বেহেশতের কোন বৃক্ষের সাথে তার সখ্যতা করে দেন। অতঃপর মহান আল্লাহ্ তাঁর উদ্দেশ্যে খোরমা বৃক্ষ প্রেরণ করেন, যা বেহেশতে অবস্থানকালীন সময়ে তার খুব প্রিয় ছিল।
হযরত আদম (আ.) এর মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসলে তিনি স্বীয় সন্তানদের উদ্দেশ্যে বললেন : জীবদ্দশায় ঐ বৃক্ষের সাথে আমি অত্যন্ত ঘনিষ্ট ছিলাম এবং আমি চাই আমার মৃত্যুর পরও যেন সেটা আমার সাথে ঘনিষ্ঠ থাকে। তাই আমার মৃত্যুর পর ঐ বৃক্ষ হতে একটি শাখা ভেঙ্গে দু’ভাগ করো এবং দু’টি ভাগকেই আমার কাফনের সাথে রেখে দাও। অতঃপর হযরত আদম (আ.) এর সন্তানরাও তাঁর ওসিয়ত মোতাবেক আমল করলেন এবং পরবর্তী নবীগণ (আ.)ও এ কাজের অনুসরণ করেছেন। কিন্তু এ সুন্নতটি জাহিলিয়্যাতের যুগে মানুষ ভুলে গিয়েছিল। হযরত মুহাম্মাদ (স.) এর আবির্ভাবের পর তিনি পূনরায় জনগণের মাঝে এ সুন্নতের প্রচলণ ঘটান।
হযরত আদম (আ.) এর দাফনের স্থান
হযরত আদম (আ.) এর দাফনের স্থানের বিষয়ে সাইয়্যেদ ইবনে তাউস বর্ণনা করেছেন : সুহুফে ইদ্রিসে পড়েছি করেছি যে, হযরত আদম (আ.) দশদিন জ্বরাক্রান্ত থাকার পর ইন্তেকাল করেন। আর তার ওফাতের দিনটি ছিল শুক্রবার ১১ই মহররম। আবু কুবাইস পাহাড়ে মক্কার দিকে মুখ করে অবস্থিত একটি গুহায় তাকে দাফন করা হয়। এছাড়া শিয়া ও সুন্নি সকলেই ওয়াহাব বিন মাম্বাহ হতে বর্ণনা করেছেন : হযরত শাইস (আ.), হযরত আদম (আ.) কে আবু কুবাইস পাহাড়ের ‘আকনায’ নামক একটি গুহায় দাফন করেছিলেন।
১ বছর পর হযরত হাওয়া (আ.) এর ইন্তেকাল
হযরত আদম (আ.) এর দীর্ঘায়ূর বিষয়ে বিদ্যমান রেওয়ায়েতসমূহের সংখ্যা প্রায় কাছাকাছি। বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে হযরত ইমাম সাদিক (আ.) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, মহানবী (স.) বলেছেন : হযরত আদম (আ.) ৯৩০ বছর বেঁচে ছিলেন। সাইয়্যেদ ইবনে তাউসও বলেছেন : তাওরাতে পড়েছি, হযরত আদম (আ.) এর আয়ূ ছিল ৯৩০ বছর। এছাড়া মুহাম্মাদ বিন খালেদ বারকী তার বাদা’ গ্রন্থে ইমাম সাদিক (আ.) হতে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত আদম (আ.) ৯৩০ বছর বেঁচে ছিলেন।
সাইয়্যেদ ইবনে তাউস অপর একটি বর্ণনায় বলেছেন : সুহুফে ইদ্রিস-এ পড়েছি রুহ ফুঁকে দেওয়ার দিন হতে ওফাতের দিন পর্যন্ত হযরত আদম (আ.) এর আয়ূ ছিল ১ হাজার ৩০ বছর। হযরত হাওয়া (আ.) তাঁর ওফাতের পর একবছর ১৫ দিন অসুস্থ ছিলেন, অতঃপর ইন্তেকাল করেন এবং হযরত আদম (আ.) এর পাশেই তাকে দাফন করা হয়।
সূত্রাবলি :
(১) মাজলিসী, মুহাম্মাদ বাকের, তারিখে পায়াম্বারান প্রকাশনী (কোম)।
(২) মাজলিসী মুহাম্মাদ বাকের, বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ১১, দারু এহইয়াতিত তুরাসিল আরাবী প্রকাশনী (বৈরুত)।
(৩) মুহাম্মাদ বিন তাউস, সায়াদ আস-সাউদ, আর-রাযী প্রকাশনী (কোম)।
(৪) রাভান্দি, কুতবুদ্দীন, কাসাসুল আম্বিয়া, মাজমাউল বুহুসুল ইসলামিয়্যাহ প্রকাশণী (মাশহাদ)।
(৫) শেইখ তুসী, তাহযীবুল আহকাম, খণ্ড ১, দারুল কুতুবুল ইসলামিয়্যাহ প্রকাশণী (তেহরান)।
(৬) মুহাম্মাদ মাসউদ বিন আইয়াশ, তাফসিরে আইয়াশী, খণ্ড ১, ইন্তিশারাতু ইলমিয়্যাতিল ইসলামিয়্যাহ প্রকাশণী (তেহরান)
সূত্রঃ বার্তা সংস্থা আবনা

 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন