চক্রান্তের ফলেই বিশ্বনবী (সা.) ও হাসান (আ.)'র শাহাদত
চক্রান্তের ফলেই বিশ্বনবী (সা.) ও হাসান (আ.)'র শাহাদত
ইরানসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে আজ পালিত হয়েছে শোকাবহ ২৮ শে সফর তথা বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)'র ও তাঁর বড় নাতি ইমাম হাসান মুজতবা (আ.)'র শাহাদতের বার্ষিকী।
এ উপলক্ষে ইরানে (সোমবার) ও (মঙ্গলবার) শোক-মিছিল, শোক এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে পবিত্র মাশহাদ, কোম ও রাজধানী তেহরানসহ প্রায় সব ক'টি শহরে। মসজিদসহ ধর্মীয় কেন্দ্রগুলোতে জিয়ারতনামা পাঠসহ বুক চাপড়ে ও শোকের কবিতা পাঠ করে শোক প্রকাশ করেন সারা দেশের সর্বস্তরের কোটি কোটি শোকার্ত মুসলমান।
এই উপলক্ষে ইরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত পবিত্র মাশহাদ শহরে বিশ্বনবী (সা.)'র পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য ইমাম রেজা (আ.)'র পবিত্র মাজার ও কোমে তাঁরই বোন হযরত ফাতিমা মাসুমা (সা. আ.)'র পবিত্র মাজারে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মানুষের শোকার্ত উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যনীয়। এই দিনটি ইরানে সরকারি ছুটির দিন।
মুসলিম বিশ্বের অনেক ইমাম বা ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের বক্তব্য অনুযায়ী আজ থেকে ১৪২৪ চন্দ্র-বছর আগে এই দিনে (২৮ সফর) মানবতার মুক্তির দূত, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল ও শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) শাহাদত বরণ করেন ৬৩ বছর বয়সে। বলা হয়, খাবারের দাওয়াত দিয়ে ইসলাম ও রাসূল-বিদ্বেষী এক ইহুদি নারী খাদ্যে বিষ-প্রয়োগ করায় তার প্রভাবেই বিশ্বনবী (সা.) অসুস্থ হয়ে শাহাদত বরণ করেন। (ইন্না... রাজিউন)।
মৃত্যুর সময় তিনি আমিরুল মু'মিনিন আলী (আ)'র কোলে শায়িত ছিলেন এবং তিনিই রাসূল (সা.)-কে গোসল দিয়ে কাফন পরানোসহ তাঁর দাফন সম্পন্ন করেন।
বিশ্বনবী (সা.) ২৩ বছর ধরে ইসলাম ধর্ম প্রচার করে গেছেন। তিনি শান্তি, ঐক্য, সৌভাগ্যময় জীবন এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে মাথা নত না করার শিক্ষাসহ মানব জাতির জন্য বহু অমূল্য ও জরুরি শিক্ষা রেখে গেছেন।
(উল্লেখ্য, বিশ্বনবী-সা.'র আধ্যাত্মিক নানা মর্যাদার মধ্যে শাহাদতও অন্যতম বলে মনে করেন অনেক বরেণ্য ইমাম ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ। তাই তাঁর ওফাত নিছক সাধারণ ওফাত বা ইন্তিকালই ছিল না বলে তারা মনে করেন। রাসূল-সা. ইহুদি নারীর দেয়া বিষ-মাখানো গোশত খেয়েও আল্লাহর ইচ্ছায় সঙ্গে সঙ্গে শাহাদত বরণ করেননি, তবে তিনি এক ধরণের যন্ত্রণা অনুভব করেছিলেন এবং মৃত্যুর আগে সেই একই ধরণের যন্ত্রণাটি ফিরে এসেছে বলে উল্লেখ করেছিলেন। হয়তো মহান আল্লাহ এভাবেই তাঁকে শাহাদতের উচ্চতর মর্যাদা দান করতে চেয়েছিলেন।)
ইসলাম বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বিকাশমান ধর্ম এবং বিশ্বের মুসলমানের বর্তমান সংখ্যা প্রায় ১৭০ কোটি।
এদিকে আজ থেকে ১৩৮৫ চন্দ্র বছর আগে একই দিনে (২৮ শে সফর) শাহাদত বরণ করেন বিশ্বনবী (সা.)'র পবিত্র আহলে বাইতের অন্যতম সদস্য ও তাঁর বড় নাতি হযরত ইমাম হাসান মুজতবা (আ.)। উমাইয়া শাসক মুয়াবিয়ার নির্দেশে এই মহান ইমামকে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে হত্যা করা হয়।
বিশ্বনবী (সা.) তাঁর দুই নাতি ইমাম হাসান ও হুসাইন (আ.)-কে বেহেশতী যুবকদের সর্দার বলে উল্লেখ করে গেছেন।
পিতা আমিরুল মুমিনিন আলী (আ.) শাহাদত বরণ করলে ৩৭ বছর বয়সে ইমামতের দায়িত্ব ইমাম হাসান (আ.)'র কাঁধে অর্পিত হয়। কিন্তু মুয়াবিয়া নানা কূটচাল চালতে থাকায়, বিশেষ করে সে ইমামের সঙ্গীদের সিংহভাগ অংশকে ঘুষ দিয়ে কিনে ফেলায় এবং তাদের অন্য অনেকের নানা বিচ্যুতি আর অসহযোগিতার কারণে মাত্র ৭ মাস পর ইসলামী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী মুয়াবিয়ার সঙ্গে একান্ত অনিচ্ছায় যুদ্ধ-বিরতি চুক্তি স্বাক্ষর ও রাজনৈতিক খিলাফত ত্যাগ করতে বাধ্য হন ইমাম হাসান (আ.)।
এ অবস্থায় মুয়াবিয়া খিলাফত পুরোপুরি দখল করে। সে ইমামের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তির নানা শর্ত লঙ্ঘন করে ও এমনকি অত্যন্ত কূট-কৌশলে ইমামের (আ.) এক স্ত্রীকে বিভ্রান্ত করে তাঁকে দিয়ে বিষ-প্রয়োগের মাধ্যমে ইমামকে শহীদ করতে সক্ষম হয়। এ সময় ইমামের বয়স হয়েছিল ৪৭। বলা হয় ইমাম হাসান (আ.)-কে তাঁর প্রিয় নানার কবরের পাশে দাফন করার উদ্যোগ নিয়েছিল নবী-পরিবার। কিন্তু বিশ্বনবী (সা.)'র আহলে বাইতের এই উদ্যোগকে বাধা দেয় বিশ্বনবী (সা.)'র পবিত্র আহলে বাইতের বিদ্বেষী প্রভাবশালী মহলগুলো। ফলে রাসূল (সা.)'র রওজা থেকে বেশ কিছু দূরে জান্নাতুল বাকি গোরস্তানে দাফন করা হয় এই মহান ইমামকে।
আজকের এই মহাশোকের বার্ষিকী উপলক্ষে রেডিও তেহরানের বাংলা বিভাগের পক্ষ থেকে সবাইকে জানাচ্ছি গভীর শোক ও সমবেদনা।
সূত্রঃ রেডিও তেহরান
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন