মার্কিন ড্রোন হামলা অব্যাহত: জাতিসংঘে অভিযোগ তুলবে পাকিস্তান

মার্কিন ড্রোন হামলা অব্যাহত: জাতিসংঘে অভিযোগ তুলবে পাকিস্তান

মার্কিন ড্রোন হামলা অব্যাহত: জাতিসংঘে অভিযোগ তুলবে পাকিস্তান


পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় মার্কিন ড্রোন হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ইসলামাবাদ অব্যাহত মার্কিন ড্রোন হামলার বিষয়টি জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনে উত্থাপন করবে।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ গত ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর একটি প্রস্তাব পাশ করে। ওই প্রস্তাবে ড্রোন হামলার ব্যাপারে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে চলার জন্য সব দেশের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে। সম্প্রতি পাকিস্তানের উত্তর ওয়াজিরিস্তানে উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় মার্কিন পাইলটবিহীন বিমান বা ড্রোন হামলায় তিনজন নিহত হয়েছে। পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মার্কিন ড্রোন হামলাকে সেদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করেছে।

এদিকে পাকিস্তানের তেহরিকে ইনসাফ দলের প্রধান ইমরান খান আবারো মার্কিন ড্রোন হামলা বন্ধের আহবান জানিয়েছেন। তিনি গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেছেন, ড্রোন হামলা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তার দলের প্রতিবাদ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। কারণ এ হামলা অব্যাহত থাকলে সেদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।

কিছুদিন আগে তেহরিকে ইনসাফ ও জামায়াত ইসলামি পাকিস্তানের সমর্থকরা ড্রোন হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে, আফগানিস্তান অভিমুখে ন্যাটোর রসদ সরবরাহের জন্য ব্যবহৃত পেশোয়ারের প্রধান সড়ক অবরোধ করে রাখে। পাকিস্তান সরকার মনে করে উত্তর ও দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে মার্কিন ড্রোন হামলা অব্যাহত থাকায় সরকারের সন্ত্রাসবিরোধী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কার্যত ব্যর্থ হয়ে গেছে। সরকারের মতে, মার্কিন ড্রোন হামলার ফলে সশস্ত্র মিলিশিয়া বাহিনীর কোনো ক্ষতি তো হয়নি বরং তারা আরো বেশি শক্তিশালী হয়েছে। কারণ তালেবানের মত সশস্ত্র মিলিশিয়া বাহিনী মার্কিন বিরোধী শ্লোগান দিয়ে সবার সমর্থন লাভের চেষ্টা করছে। এ কারণে পাকিস্তান সরকার বলেছে, মার্কিন সেনাদের যদি উপজাতি অধ্যুষিত এলাকার তালেবানদের ব্যাপারে কোনো তথ্য জানা থাকে তাহলে তাদের উচিত হবে সেসব তথ্য পাক সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয়া যাতে সেনাবাহিনী তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু আমেরিকা পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনীর এসব আহবানের তোয়াক্কা না করে উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় ড্রোন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

এ অবস্থায় পাকিস্তানের জনগণ সবসময়ই ড্রোন হামলার ব্যাপারে কেবল মৌখিক নিন্দা না জানিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিষয়টি উত্থাপনের জন্য সরকারের ওপর বহুদিন ধরে চাপ দিয়ে আসছিল। কিন্তু পাকিস্তান সরকার আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি মাথায় রেখে এখন পর্যন্ত জাতিসংঘে এ ব্যাপারে অভিযোগ উত্থাপন করা থেকে বিরত ছিল। তবে সরকারের এ অবস্থান সেদেশের অভ্যন্তরে ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হয়।

ড্রোন হামলা বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য নওয়াজ শরীফ সরকারের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির অংশ হিসেবে তেহরিকে ইনসাফ ও জামায়াত ইসলামী দলের সমর্থকরা ন্যাটো বহর যাতায়াতকারী প্রধান সড়ক আটকে দেয়। কারণ পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ব্যাপক প্রতিবাদ সত্ত্বেও উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় মার্কিন ড্রোন হামলা অব্যাহত রয়েছে। এদিকে, ড্রোন হামলার বিরুদ্ধে পাকিস্তানে বিক্ষোভ সত্ত্বেও মার্কিনীরা এ বিষয়টিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে চলেছে এবং দেশটির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান জানানোর কোনো ইচ্ছে তাদের নেই। এ কারণে নওয়াজ শরীফ সরকার এটা বুঝতে পেরেছে যে, ড্রোন হামলা চলতে থাকলে জনগণের কাছে তাদের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়বে এবং তারা গ্রহণযোগ্যতা হারাবে।
সূত্রঃ রেডিও তেহরান

 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন