আলী (আ.)’র প্রশংসাসূচক হাদিস বলায় প্রাণ হারান সুন্নি ইমাম নাসায়ি
আলী (আ.)’র প্রশংসাসূচক হাদিস বলায় প্রাণ হারান সুন্নি ইমাম নাসায়ি
আমিরুল মু’মিনিন হযরত আলী (আ.)’র প্রশংসাসূচক হাদিস বর্ণনার কারণে দামেস্কের প্রধান মসজিদের মিম্বরে মুয়াবিয়াপন্থীদের হামলায় আহত হয়ে আজ থেকে ১১৩২ বছর আগে ৩০৩ হিজরির এই দিনে (১৩ ই সফর) ৮৯ বছর বয়সে মারা যান বিখ্যাত সুন্নি হাদিস বিশারদ ইমাম নাসায়ি।
সুন্নি মাজহাবের সবচেয়ে বিখ্যাত ৬ টি হাদিস গ্রন্থের মধ্যে অন্যতম গ্রন্থ ‘সুনান আন নাসায়ি’র লেখক ছিলেন তিনি। ( সিয়াহ সিত্তাহর মধ্যে বুখারি ও মুসলিমের পর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় এই হাদিস গ্রন্থকে)
ইমাম নাসায়ি জীবনের শেষের দিকে রচনা করেছিলেন ‘খাসায়েসে আমিরুল মু’মিনিন’ শীর্ষক হাদিস গ্রন্থ। এ বইয়ে তিনি হযরত আলী (আ.)’র অনন্য ফজিলত সংক্রান্ত হাদিসগুলো তুলে ধরেছিলেন। সিরিয়ায় হযরত আলী (আ.) সম্পর্কে বিভ্রান্ত ব্যক্তিদের ভুল ধারণা ও মিথ্যা প্রচারণা সম্পর্কে সেখানকার জনগণকে সতর্ক করাই ছিল তার এই বই রচনার উদ্দেশ্য। যখন তিনি দামেস্কের প্রধান মসজিদের মিম্বরে হাদিস বর্ণনার আসরে এই বই থেকে ইমাম আলী (আ.)’র ফজিলতের বর্ণনা দিচ্ছিলেন তখন বিশ্বনবী (সা.)’র পবিত্র আহলে বাইতের বিদ্বেষীরা তাকে নির্দয়ভাবে পিটিয়ে আহত করে। আহত অবস্থায় তিনি সিরিয়া ত্যাগ করেন এবং মিশর যাওয়ার পথে ফিলিস্তিনের রামাল্লায় (কোনো কোনো বর্ণনামতে পবিত্র মক্কায়) ইন্তেকাল করেন।
ঐতিহাসিক বর্ণনায় এসেছে, আহলে-বাইত বিদ্বেষীরা ইমাম নাসায়িকে মুয়াবিয়ার প্রশংসাসূচক বই লিখতে বলে। ইমাম নাসায়ি জানান, হযরত আলী (আ.)’র প্রশংসাসূচক হাদিসের তুলনায় মুয়াবিয়ার প্রশংসাসূচক হাদিসের সংখ্যা এত কম যে তা দিয়ে বই লেখা সম্ভব নয়। ভিন্ন বর্ণনামতে, তিনি বলেছিলেন, মুয়াবিয়ার প্রশংসাসূচক কোনো হাদিস নেই, বরং নিন্দাসূচক হাদিস আছে বলেই তিনি জানেন (যেমন, রাসূল-সা. বলেছেন: মুয়াবিয়ার কোনোদিন পেট ভরবে না । কারণ, রাসূল-সা. মুয়াবিয়াকে তাঁর কাছে আসতে বলার পরও অন্য একজনের মাধ্যমে সে এই বার্তা পাঠায় যে, তাঁকে বলুন, আমি খাওয়া-দাওয়া করছি। বলা হয় মুয়াবিয়া বেশিরভাগ সময় খাওয়া-দাওয়াতে ব্যস্ত থাকলেও তার পেট ভরতো না।)। যাই হোক্, মুয়াবিয়াপন্থীরা ইমাম নাসায়ির এইসব কথা শুনে তার ওপর নৃশংস হামলা চালায় এবং এ হামলায় আহত হয়ে তিনি শেষ পর্যন্ত মারা যান।
ইমাম নাসায়ির জন্ম হয়েছিল প্রাচীন খোরাসানের নাসা শহরে (বর্তমানে তুর্কমেনিস্তানের অংশ। এই শহর ছিল ইরানের পার্থিয়ান রাজবংশের ততকালীন সাম্রাজ্যের রাজধানী)।
২০ বছর বয়সে জ্ঞান অর্জনের জন্য ভ্রমণ শুরু করেন নাসায়ি। তিনি সফর করেছেন মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য-এশিয়া অঞ্চলের বহু দেশ। সবশেষে স্থায়ী আবাসস্থল হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন মিশরকে।
সূত্রঃ রেডিও তেহরান
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন