হেগে রাসায়নিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন: আন্তর্জাতিক সমাজের প্রত্যাশা

হেগে রাসায়নিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন: আন্তর্জাতিক সমাজের প্রত্যাশা


রাসায়নিক অস্ত্র নির্মূল সংক্রান্ত ১৮তম আন্তর্জাতিক সম্মেলন গতকাল সোমবার থেকে হেগে শুরু হয়েছে। একটানা পাঁচদিন পর্যন্ত এ বৈঠক চলবে। সম্মেলন শুরুর প্রথম দিনে চীন ও জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন বা ন্যাম এক যৌথ বিবৃতিতে রাসায়নিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ বিষয়ক কনভেনশনের ব্যাপারে তাদের অভিন্ন অবস্থানের কথা তুলে ধরেছে। ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি এ বিবৃতি পড়ে শোনান।

বিবৃতিতে বিশ্ব থেকে সব রাসায়নিক অস্ত্র পুরোপুরি ধ্বংসের আহবান জানিয়ে কোনো বৈষম্য ছাড়াই রাসায়নিক অস্ত্র নির্মূল বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনভেনশন বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া, সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ দলের তদন্ত প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে-যেই এ অস্ত্র ব্যবহার করুক না কেন তার নিন্দা জানানো হয়েছে এই বিবৃতিতে। চীন ও ন্যামের যৌথ বিবৃতিতে রাসায়নিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থায় সিরিয়ার অন্তর্ভুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে এটাকে এ সংস্থার একধাপ অগ্রগতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে, হেগে রাসায়নিক অস্ত্র নির্মূল সংক্রান্ত ১৮তম আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরুর একই সময়ে ইরানে রাসায়নিক অস্ত্রের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। এ প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য হচ্ছে, রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারকারীদের মানবতা বিরোধী চরিত্রের বিষয়টি সবার কাছে স্পষ্ট করা। ইরানের বিরুদ্ধে ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দামের চাপিয়ে দেয়া আট বছরের যুদ্ধ চলাকালে রাসায়নিক অস্ত্রের আঘাতে ইরানের এক লাখের বেশি মানুষ হতাহত হয়েছে এবং দুই দশকের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও আহতরা আজও মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে। এ কারণে ন্যামের সভাপতি হিসেবে ইরান সবসময়ই রাসায়নিক অস্ত্র নির্মূল বিষয়ে আইন প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়ে আসছে এবং এ ব্যাপারে দেশটি ব্যাপক কূটনৈতিক ততপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

উল্লেখ করা যায়, ২০ বছর ধরে আলোচনার পর ১৯৯২ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর রাসায়নিক অস্ত্র কনভেনশন (সিডাব্লিউসি) অনুমোদন লাভ করে। এরপর ১৯৯৭ সালে হেগে রাসায়নিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা (ওপিসিডাব্লিউ) গঠিত হয়। কিন্তু আমেরিকা ও রাশিয়াসহ কোনো কোনো দেশ এ সংক্রান্ত আইন বাস্তবায়ন করা থেকে বিরত রয়েছে। এ দেশগুলো ২০১২ সালের ২৯ এপ্রিলের মধ্যে তাদের রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংসের প্রতিশ্রুতি দিলেও সে প্রতিশ্রুতি তারা আজো বাস্তবায়ন করেনি।

রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংসের পথে দু’টি বড় বাধা রয়েছে। প্রথম বাধা হচ্ছে কোনো কোনো দেশ গণবিধ্বংসি এ অস্ত্র তৈরি করে এটাকে অর্থ আয়ের মাধ্যমে পরিণত করেছে এবং এ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইন বাস্তবায়নের কোনো ইচ্ছাই তাদের নেই। দ্বিতীয় বাধাটি হচ্ছে, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর দুর্বল ভূমিকা। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এ অস্ত্র নির্মূলে এখন পর্যন্ত বলিষ্ঠ কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। এ অবস্থায় রাসায়নিক অস্ত্র নির্মূলের জন্য সারা বিশ্বকে এ সংক্রান্ত কনভেনশনের আওতায় আনার জন্য প্রয়োজন সব দেশের আন্তরিক ইচ্ছা। এ অবস্থায় হেগে শুরু হওয়া রাসায়নিক অস্ত্র নির্মূল সংক্রান্ত ১৮তম আন্তর্জাতিক সম্মেলন এ প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে বলে সকলে আশা করছে।
সূত্রঃ রেডিও তেহরান

 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন