সোনিয়া থেকে সুষমা: সম্পত্তির হিসাব দিয়েছেন; প্রকৃত মূল্য জানাননি কেউ
সোনিয়া থেকে সুষমা: সম্পত্তির হিসাব দিয়েছেন; প্রকৃত মূল্য জানাননি কেউ
ভারতের ক্ষমতাসীন কংগ্রেস দলসহ জাতীয় পর্যায়ের ছয়টি রাজনৈতিক দলের প্রধান এবং দেশটির সংসদের উভয় কক্ষের বেশিরভাগ সংসদ সদস্য সম্পত্তির ঘোষণা দিলেও প্রকৃত মূল্য প্রকাশ করেননি। তারা গত এক দশক ধরে এ তথ্য দেয়া থেকে বিরত রয়েছেন। এসব রাজনীতিবিদ দেশটির সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে শুধু সম্পত্তির তথ্য প্রকাশ করেছেন।
ভারতীয় একটি ইংরেজি দৈনিকের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এ চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্পত্তির প্রকৃত মূল্য প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকার এ তালিকায় দেশটির ৪৮টি আঞ্চলিক দলের প্রধান এবং পাঁচ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন। এ পাঁচটি রাজ্যে বর্তমানে বিধানসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ২০০৩ সালে দেয়া রায়ে দেশটির সংসদীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের সম্পত্তির ঘোষণা দেয়া বাধ্যতামূলক করেছিল। রায়ে বলা হয়েছিল, সংসদ সদস্য ও বিধায়করা জনগণের সেবক এবং জনগণের আস্থার উতস। সে কারণে তাদেরকে সম্পত্তি এবং দায়-দেনার ঘোষণা দিতে হবে।
অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঐতিহাসিক এ রায়ের এক দশক পরে দেখা যাচ্ছে- ভারতের জাতীয় বা আঞ্চলিক নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীরা তা কেবলমাত্র কাগজে কলমে মেনে চলেছেন। কিন্তু বাস্তবে তারা সম্পত্তির প্রকৃত বা বাজার মূল্য প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকছেন। এছাড়া, কেউ কেউ সম্পত্তির মূল্য ব্যাপকভাবে কম দেখাচ্ছেন বা ঘোষণার সঙ্গে সম্পত্তির প্রকৃত মূল্য তালিকা দিচ্ছেন না।
আরো অবিশ্বাস্য ব্যাপার হলো- প্রতিবছর দ্রব্যমূল্য বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও কারো কারো ক্ষেত্রে পাঁচ বছর পরও ঘোষিত সম্পত্তির মূল্যের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। আগে সম্পত্তির যে মূল্য ঘোষণা করা হয়েছে পাঁচ বছর পর আবার নির্বাচনে অংশ নেয়ার সময় একই মূল্য ঘোষণা করছেন তারা।
এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের কংগ্রেস পার্টির সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী ২০০৪ এবং ২০০৯ সালে সম্পত্তির ঘোষণায় বলেছেন, দিল্লির মেহরাউলির ডেরা মান্ডিতে তিন বিঘা এবং একই এলাকার সুলতানপুর গ্রামে ১২ বিঘা ১৫ কাঠা জমি রয়েছে। বিঘা প্রতি এ সম্পত্তির মূল্য ২.১৯ লাখ রুপি বলে সোনিয়ার ঘোষণায় বলা হয়েছিল। সোনিয়ার ওই এলাকা থেকে ২০০৮ সালের দিল্লি বিধান সভা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন এসপি প্রার্থী কানওয়ার সিং তানওয়ার। তিনি ওই এলাকায় তার ১২ বিঘা ৫ কাঠার জমির বিঘা প্রতি মূল্য ১৮.৩৭ কোটি রুপি বলে ঘোষণা করেছিলেন। অর্থাত সোনিয়া গান্ধী তার জমির মূল্য অনেক কম ঘোষণা করেছিলেন। অথচ ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের শর্ত অনুসারে সম্পত্তির বর্তমান বাজার মূল্য ঘোষণা করার কথা ছিল।
২০০৯ সালে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি’র সভাপতি রাজনাথ সিং সম্পত্তির ঘোষণায় উল্লেখ করেছিলেন, লাখনৌর গোমিত নগর এলাকার বিপুল খণ্ডে তার একটি বাড়ি আছে এবং তার মূল্য ৫৫ লাখ রুপি। কিন্তু রাজনাথ সিং তার সম্পত্তির ঘোষণায় বাড়ির আকৃতি সম্পর্কে কোনো তথ্য দেননি।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেস নেত্রী শিলা দীক্ষিত সম্পত্তির ঘোষণায় বলেছেন- তার একটি মাত্র বাড়িই আছে। দিল্লির নিজামউদ্দিন এলাকায় ১৫৭০ বর্গফুটের এ বাড়ির মূল্য ৯৮.৩৯ লাখ রুপি দেখানো হয়েছে। কিন্তু আবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে এই এলাকার বাড়ির প্রকৃত মূল্য প্রতি বর্গফুট ৩২ হাজার রুপি হবে। এ হিসাব মোতাবেক শিলা দীক্ষিতের বাড়ির প্রকৃত মূল্য ৫ কোটি রুপির একটু বেশি হবে।
কম্যুনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া বা সিপিআই’র সাধারণ সম্পাদক এস সুধাকর রেড্ডি ভারতের সংসদের উভয় কক্ষের কোনোটিরই সদস্য নন। ২০০৯ সালে অন্ধ্র প্রদেশের নলগোদা থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। অন্ধ্র প্রদেশের মেহবুবনগরে তার একটি বাড়ি আছে এবং তার মূল্য এক লাখ রুপি বলে সম্পত্তির ঘোষণায় উল্লেখ করেছিলেন। তার বাড়ির আকার সম্পর্কেও এ ঘোষণায় কিছু বলা হয়নি।
এ ধরনের সম্পত্তির প্রকৃত মূল্য জানাননি বিজেপি নেত্রী ও ভারতের সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী সুষমা স্বরাজ, রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গিলোত, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার সিন্ধে, সমাজবাদী পার্টির নেত্রী মায়াবতী এবং একই দলের নেতা সতিশ চন্দ্র মিশ্র।
সূত্রঃ রেডিও তেহরান
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন