‘জেনেভা চুক্তি ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে কোন প্রভাব ফেলবে না’

জেনেভা চুক্তি সত্ত্বেও ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ হবে না। চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণসহ বিভিন্ন মডেলের হাজার হাজার সেন্ট্রিফিউজের কার্যক্রম চলতে পারে।

‘জেনেভা চুক্তি ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে কোন প্রভাব ফেলবে না’
জেনেভা চুক্তি সত্ত্বেও ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ হবে না। চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণসহ বিভিন্ন মডেলের হাজার হাজার সেন্ট্রিফিউজের কার্যক্রম চলতে পারে।

আমেরিকায় ইহুদিবাদী কেন্দ্রের একজন গবেষক রবার্ট স্যাটলফ তার এক নিবন্ধে এ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে লিখেছেন, সমঝোতা অনুযায়ী ইরানের শুধুমাত্র ২০ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থগিত রাখা হবে এবং আরাকের হেভি ওয়াটার প্রকল্পেরও আর উন্নয়ন ঘটানো হবে না। তিনি আরো লিখেছেন, এ দুটি ক্ষেত্রে ইরান ছাড় দিলেও দেশটির বাদবাকি পরমাণু কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং এটাই জেনেভা চুক্তির অর্জন বা ফলাফল। অবশ্য বিশ্লেষকরা এ ব্যাপারে একমত যে এ চুক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অধিকারকে মেনে নেয়া হয়েছে।

পরমাণু চুক্তির দুটি উল্লেখযোগ্য দিক রয়েছে। প্রথমত, ওয়াশিংটন ও তার মিত্ররা এ চুক্তির মাধ্যমে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির অধিকারকে শিকার করে নিয়েছে। দ্বিতীয়ত, ইরানের পরমাণু অধিকারকে শিকার করে নেয়ার এখন যত দ্রুত সম্ভব ইরানের ওপর চাপিয়ে দেয়া অযৌক্তিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া তাদের কর্তব্য হয়ে হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ যেসব দেশ ওয়াশিংটনের কথামত ইরান বিরোধী নিষেধাজ্ঞায় শামিল হয়েছে এখন আর তারা এ নিষেধাজ্ঞা মেনে চলতে প্রস্তুত নয়। কেননা এ নিষেধাজ্ঞার ফলে তারাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

জেনেভায় সাক্ষরিত পরমাণু চুক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হচ্ছে, পাশ্চাত্যের চাপিয়ে দেয়া অযৌক্তিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়াসহ অন্যান্য সমঝোতাগুলোর পুরোপুরি বাস্তবায়ন। তবে চূড়ান্ত সমঝোতা কেবল তখনই অর্জন করা যাবে যদি বর্তমানে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যায়। ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পরমাণু আলোচক দলের সদস্য সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি ইরানের একটি টিভি চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাতকারে ঠিক এ বিষয়টির প্রতিই ইঙ্গিত করেছেন। তিনি এ চুক্তিকে একটি রাজনৈতিক বিবৃতি হিসেবে উল্লেখ করেন যেখানে দু’পক্ষই মোটামুটি একটা সমঝোতায় এসে পৌঁছেছে। তিনি আরো বলেছেন, জেনেভা চুক্তি পরমাণু বিষয়ে সব পক্ষের মধ্যে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি এবং অভিন্ন লক্ষ্যে পৌঁছার সুযোগ এনে দিয়েছে। তিনি জেনেভা চুক্তিকে পরমাণু ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছার জন্য প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, চূড়ান্ত সমাধানই আমাদের লক্ষ্য এবং ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণসহ শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রাথমিক পদক্ষেপ বাস্তবায়নের পর চূড়ান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনা শুরু হওয়া উচিত। জেনেভা চুক্তি বৃহত ও ঐতিহাসিক হলেও অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে প্রতিপক্ষের প্রতি ইরানের আস্থার পরিবেশ খুব একটা সুখকর বা সন্তোষজনক নয়। যেমনটি ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আমরা যখনই বুঝবো প্রতিপক্ষরা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করছে না তখনই আমরাও আমাদের প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসব এবং এমনকি পরমাণু বিষয়ে আমরা পূর্বের অবস্থানেও ফিরে যেতে পারি।
 

 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন