'অন্য দেশগুলোর সঙ্গে আস্থার পরিবেশ তৈরি করা ইরানের লক্ষ্য'
'অন্য দেশগুলোর সঙ্গে আস্থার পরিবেশ তৈরি করা ইরানের লক্ষ্য'
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা বা আইএইএতে নিযুক্ত ইরানের প্রতিনিধি রেজা নাজাফি এ সংস্থার নির্বাহী বোর্ডের নিয়মিত বৈঠকে বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অন্য দেশগুলোর সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা ও পারস্পরিক আস্থা সৃষ্টি করাই ইরানের প্রধান লক্ষ্য।
রেজা নাজাফি তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ইরানের এ নীতির দু’টি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্যের কথা তুলে ধরেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি প্রথম সাফল্য হিসেবে গত ১১ নভেম্বর তেহরানে সাক্ষরিত আইএইএ’র সঙ্গে ইরানের চুক্তির কথা তুলে ধরেন। এরপর তিনি গত ২৪ নভেম্বর জেনেভায় ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তিকে দ্বিতীয় সাফল্য হিসেবে বর্ণনা করে।
২৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত পরমাণু আলোচনা এবং এরপর ২৮ ও ২৯ অক্টোবর কয়েক দফা অত্যন্ত কঠিন ও শ্বাসরুদ্ধকর আলোচনার আলোচনার পর শেষ পর্যন্ত ১১ নভেম্বর আইএইএ’র সঙ্গে ইরানের পরমাণু চুক্তি সই হয়। এ চুক্তিতে ইরানের পরমাণু বিষয়ে অবশিষ্ট সব সমস্যা ও সন্দেহ দূর করা এবং দেশটির পরমাণু কর্মসূচি যে শান্তিপূর্ণ সে বিষয়ে নিশ্চয়তা লাভের জন্য আলোচনা অব্যাহত রাখা ও সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। বর্তমানে আইএইএ’র সঙ্গে ইরানের সহযোগিতা নতুন পর্যায়ে উপনীত হয়েছে এবং গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। আগামী ১১ ডিসেম্বর ভিয়েনায় আইএইএ’র সঙ্গে ইরানের ফের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
ইরান সম্প্রতি হেভি ওয়াটার উতপাদনকারী আরাক পরমাণু স্থাপনা পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানিয়ে আইএইএকে চিঠি দিয়েছে। তবে গোপনীয়তা রক্ষার ব্যাপারে ইরানের উদ্বেগ নিরসনে আইএইএ পদক্ষেপ নেবে বলে তেহরান আশা করছে। কারণ এর আগে আইএইএ ইরানের পরমাণু বিষয়ে বেশ কিছু গোপন তথ্য ফাঁস করে দিয়েছিল। ওই তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ায় ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে নাশকতার ঘটনা ঘটে এবং কয়েক জন পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করা হয়েছে। তবে আইএইএ এবার ইরানের পরমাণু বিষয়ে প্রাপ্ত তথ্য গোপন রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
যাহোক, ইরান ও আইএইএ’র মধ্যে গঠনমূলক আলোচনার পরিবেশ তৈরি হয়েছে এবং সব পক্ষ ধাপে ধাপে সমস্যা সমাধানের জন্য পরস্পরকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে ইরান ছয় ধারা বিশিষ্ট প্রস্তাব বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং এ সময়ে মধ্যে ইরান ও আইএইএ আলোচনা চালিয়ে যাবে। স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে ইরান এ পর্যন্ত বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ায় গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছার জন্য সব পক্ষেরই সুযোগ তেরি হয়েছে। ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনায় ইরান আন্তরিকতা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রমাণ দিয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে পরমাণু চুক্তি সই হয়েছে। এ চুক্তি সব পক্ষের মধ্যে সহযোগিতার ঐতিহাসিক সুযোগ এনে দিয়েছে। বৃহত্তর সমঝোতায় পৌঁছার ক্ষেত্রে এটাকে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইরান আইএইএ'র সঙ্গে আলোচনা ও সহযোগিতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে এবং ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে আস্থা সৃষ্টির লক্ষ্যে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে ইরান আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই পরিপূর্ণ আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হয় কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।
সূত্রঃ রেডিও তেহরান
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন