পাশ্চাত্যের অন্যায্য দাবি পরমাণু আলোচনার পরিবেশকে বিঘ্নিত করবে
পাশ্চাত্যের অন্যায্য দাবি পরমাণু আলোচনার পরিবেশকে বিঘ্নিত করবে
ইরানের সঙ্গে ছয় জাতিগোষ্ঠীর তৃতীয় দফা পরমাণু আলোচনা আজ থেকে জেনেভায় শুরু হতে যাচ্ছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ বৈঠকে যোগ দেয়ার জন্য এরই মধ্যে জেনেভায় পৌঁছেছেন। জেনেভায় যাওয়ার পথে তিনি ইতালিতে যাত্রাবিরতি করেন এবং দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেনিনোর সঙ্গে সাক্ষাত শেষে জেনেভার উদ্দেশ্যে রোম ত্যাগ করেন।
এদিকে, জেনেভায় ইরানের সঙ্গে ছয় জাতিগোষ্ঠীর পরমাণু আলোচনা শুরুর প্রাক্কালে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোন সংলাপে পরমাণু আলোচনার সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় করেছেন। প্রেসিডেন্ট রুহানি জেনেভায় প্রাথমিক পর্যায়ে পরমাণু আলোচনার ইতিবাচক ফলাফলের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, সব পক্ষের বিজয়ের মধ্যদিয়ে সমঝোতায় পৌঁছার যে চেষ্টা চলছে তাকে নস্যাত করার সুযোগ দেয়া উচিত হবে না। প্রতিপক্ষরা ইরানের সঙ্গে আলোচনায় আন্তরিক হবে এমনটি প্রত্যাশা করে তিনি বলেছেন, পরমাণু ক্ষেত্রে তেহরান কোনো বৈষম্য মানবে না এবং পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে আমরা এমন এক আলোচনা চাই যেখানে দু’পক্ষেরই উদ্বেগের অবসান ঘটবে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি গতকাল চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও টেলিফোনে কথা বলেন। টেলিফোন সংলাপে তিনি বলেছেন, পরমাণু বিষয়ে আমরা এমন এক সমঝোতা চাই যেখানে ইরানের ন্যায্য অধিকার সংরক্ষিত থাকবে এবং এটাও প্রমাণিত হয় ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ।
চলমান আলোচনা প্রক্রিয়ায় পারস্পরিক আস্থা অর্জনের চেষ্টা চলছে। আস্থা অর্জনের চেষ্টা দু’পক্ষ থেকেই হতে হবে এবং তা হতে হবে পরমাণু বিষয়ে ইরানের ন্যায্য অধিকারের প্রতি সম্মান দেখিয়ে। কিন্তু পাশ্চাত্য যদি ইরানের পরমাণু অধিকারকে উপেক্ষা করে আস্থা অর্জনের কথা বলে তাহলে আস্থার পরিবেশ বিঘ্নিত হবে। এ অবস্থায় পরমাণু আলোচনায় প্রাথমিক সমঝোতা হলে পাশ্চাত্য আস্থা অর্জনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়। এ পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ইরানের ওপর আরোপিত অন্যায় নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া এবং বিভিন্ন ব্যাংকে আটক ইরানের অর্থ ফেরত দেয়ার পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রতিপক্ষ যদি সত্যিই পারস্পরিক আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায় তাহলে তাদেরকে অবশ্যই আন্তরিক হতে হবে।
বিভিন্ন সাক্ষ্য-প্রমাণে দেখা গেছে, জেনেভা আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এ অবস্থায় ইরানের প্রতিপক্ষরা যদি বিদ্বেষী নীতি অব্যাহত রাখে এবং নানা অজুহাতে অতিরিক্ত দাবি করে তাহলে সমঝোতার পথে বাধা সৃষ্টি হবে এবং পরিস্থিতিকে জটিল কোরে তোলা হবে। ইরান মনে করে, পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে আলোচনা হতে হবে এবং কোনো কিছু চাপিয়ে দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না । এর আগে জেনেভায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ইরান বেশ কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেছে এবং প্রতিপক্ষরাও ইরানের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে একে গঠনমূলক হিসেবে অভিহিত করেছে।
এ ছাড়া, ইরান ও আইএইএ সম্প্রতি পরমাণু বিষয়ে সন্দেহ দূর করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতায় পৌঁছেছে। পরমাণু আলোচনায় অগ্রগতি ও আইএইএ’র সঙ্গে সমঝোতা থেকে বোঝা যায়, ইরান শান্তিপূর্ণ উপায়ে সব সমস্যার সমাধান করতে প্রস্তুত এবং দেশটি আন্তরিকতার নিদর্শন স্বরূপ এ পর্যন্ত বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে চূড়ান্ত সমাধানে পৌঁছার জন্য প্রতিপক্ষকেও সদিচ্ছার প্রমাণ দিতে হবে।
সূত্রঃ রেডিও তেহরান
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন