জেনেভায় পরমাণু আলোচনা: ততপর হয়ে উঠেছে ইসরাইল
জেনেভায় পরমাণু আলোচনা: ততপর হয়ে উঠেছে ইসরাইল
আগামীকাল জেনেভায় ইরানের সঙ্গে ছয় জাতিগোষ্ঠীর পরমাণু আলোচনা শুরু হতে যাচ্ছে। এমন সময় এ আলোচনা শুরু হতে যাচ্ছে যখন এর আগে গত ৭, ৮ ও ৯ তারিখে জেনেভায় ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের পরমাণু আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। দু’পক্ষই চূড়ান্ত চুক্তি সইয়ের কাছাকাছি চলে গেলেও ফ্রান্সের বাধার কারণে শেষ পর্যন্ত চুক্তি সই হতে পারেনি। এ অবস্থায় আগামীকালের আলোচনার ব্যাপারে নানা রকম সন্দেহ ও প্রত্যাশার কথা শোনা যাচ্ছে।
এদিকে জেনেভা বৈঠককে ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য ইহুদিবাদী লবি ব্যাপক ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। জেনেভা বৈঠকের প্রাক্কালে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ ইসরাইল সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের সাক্ষাত করেছেন। এ সাক্ষাতে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী জেনেভা বৈঠকে ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার জন্য ফরাসি প্রেসিডেন্টের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টও ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ব্যাপারে চারটি প্রস্তাব তুলে ধরেছেন। প্রথম প্রস্তাবে ইরানের সমস্ত পরমাণু স্থাপনা আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে ছেড়ে দিতে হবে, দ্বিতীয় প্রস্তাবে ২০ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করতে হবে, তৃতীয় প্রস্তাবে ইরানে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদের পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে এবং সর্বশেষ প্রস্তাবে আরাকের হেভি ওয়াটার পরমাণু প্রকল্প বন্ধ করে দেয়ার দাবি তোলা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ব্যাপারে এ ধরনের দাবি নতুন কিছু নয়। কিন্তু ইসরাইলের মুখপাত্র হয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্ট একই দাবির যে পুনরাবৃত্তি করেছেন তা তার মর্যাদার সঙ্গে মোটেই মানানসই নয়। এসব অযৌক্তিক দাবি তুলে এমনভাবে মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে যাতে পরমাণু অধিকার ত্যাগ করতে ইরান বাধ্য হয়। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ওলাঁদের এ বক্তব্যের আগে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ বলেছিলেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ইরানের ন্যায্য অধিকার এবং এ অধিকার প্রশ্নে কোনো আলোচনা হবে না।
এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান ক্যাথেরিন অ্যাশ্টোন ব্রাসেলসে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে ইরানের সঙ্গে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করা। তিনি বলেন, গত তিন বছর ধরে আমি ইরানের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছার জন্য ব্যাপক চেষ্টা চালিয়েছি। এদিকে, ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে টেলিফোন সংলাপের পর ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পুতিন বলেছেন, ইরানের পরমাণু ইস্যু নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনের ক্ষেত্রে এখন সত্যিকারের সুযোগ এসেছে।
ইরান ও ছয় জাতিগোষ্ঠীর আলোচক দল এমন সময় জেনেভা বৈঠকে মিলিত হতে যাচ্ছে যখন মার্কিন কংগ্রেসের দু’টি দলেরই কট্টরপন্থীরা ইরানের ওপর আরো কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের চিন্তাভাবনা করছে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি আপাতত পিছিয়ে দেয়ার জন্য সবার প্রতি আহবান জানিয়েছেন যাতে পরমাণু আলোচনায় সমঝোতায় পৌঁছানো যায়।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে টেলিফোন আলাপ শেষে ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, এর আগে জেনেভা বৈঠকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এ অবস্থায় ইরানের কাছে অযৌক্তিক কিংবা বাড়তি কিছু আশা করা সমঝোতার পরিবেশকে আরো জটিল করে তুলবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সূত্রঃ রেডিও তেহরান
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন