সিরিয়ার বিদ্রোহীদের মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য: অনিশ্চিত তাদের ভবিষ্যত
সিরিয়ার বিদ্রোহীদের মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য: অনিশ্চিত তাদের ভবিষ্যত
সিরিয়ার সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে তীব্র মতবিরোধের কারণে আল কায়দা নেতা আইমান আল জাওয়াহেরি ‘ইরাক ও সিরিয়ার ইসলামী সরকার’ নামে গঠিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছ থেকে আলাদা হওয়ার জন্য আন নুসরা ফ্রন্টকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি এক অডিও বার্তায় আন নুসরাকে আল কায়দার অংশ বলে ঘোষণা করেন। তার এ ঘোষণা থেকে সিরিয়ার সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর ওপর আল কায়দার উপস্থিতি ও প্রভাবের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
আল কায়দা নেতা আইমান আল জাওয়াহেরি ইরাক ও সিরিয়ার ইসলামী সরকার নামক গোষ্ঠীর কার্যক্রম বন্ধের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, এর পর থেকে এ গোষ্ঠীটি কোনো ততপরতা চালাবে না এবং সিরিয়ায়ও তারা কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। আল কায়দা নেতা আরো বলেছেন, এ গোষ্ঠীর নেতারা কারো সঙ্গে পরামর্শ না করে নিজেরাই গ্রুপ তৈরি করেছে এবং এটি একটি ভুল পদক্ষেপ ছিল। ওই সংক্ষিপ্ত অডিও বার্তায় তিনি আন নুসরা ফ্রন্টের নেতা আবু মোহাম্মদ আল জুলানিকে সিরিয়ায় আল কায়দা ও তার নিজের প্রতিনিধি হিসেবে অভিহিত করেন। একই সঙ্গে তিনি আবু বকর আল বাগদাদিকে ইরাক ও সিরিয়ার ইসলামী সরকার নামক গ্রুপটিকে ভেঙ্গে দেয়ার আহবান জানিয়েছেন।
এর আগে ইরাক ও সিরিয়ার ইসলামী সরকার নামক গোষ্ঠীর নেতা আবু বকর আল বাগদাদি আন নুসরা ফ্রন্টের সঙ্গে যোগ দিয়ে বলেছিলেন, আন নুসরা ইরাক ও সিরিয়ার ইসলামী সরকার নাম গ্রুপেরই অংশ মাত্র। তার ঘোষণার ফলে সিরিয়ায় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য দেখা দেয়। আইমান আল জাওয়াহেরি ইরাক ও সিরিয়ার ইসলামী সরকার গ্রুপকে ভেঙ্গে দেয়ার নির্দেশ দেয়ার পর প্রথম প্রতিক্রিয়ায় এ গ্রুপের নেতা আবু বকর আল বাগদাদি আল কায়দা নেতা আইমান আল জাওয়াহেরির তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ইরাক ও সিরিয়ার ইসলামী সরকার নাম গ্রুপটি কোনো অবস্থাতেই তাদের ততপরতা স্থগিত করবে না।
উল্লেখ করা যায়, ২০১৩ সালের এপ্রিলে ইরাক ও সিরিয়ার ইসলামী সরকার নামক এ সশস্ত্র গ্রুপ গঠন করা হয় এবং ইরাক ও সিরিয়ায় সন্ত্রাসী ততপরতায় লিপ্ত। আবু বকর আল বাগদাদির নেতৃত্বে ইরাক ও সিরিয়ার ইসলামী সরকার গ্রুপ এবং আবু মোহাম্মদ আল জুলানির নেতৃত্বে আন নুসরা ফ্রন্ট গঠিত হয়। সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় আদলিব প্রদেশে ততপর আন নুসরার ৭০ জন সদস্য দল ত্যাগ করে ইরাক ও সিরিয়ার ইসলামী সরকার গ্রুপে দেয়। আন নুসরা ফ্রন্টের নেতা আবু মোহাম্মদ আল জুলানি দল ত্যাগের এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, আল বাগদাদি তার সঙ্গে কোনো পরামর্শ না করেই ইরাক ও সিরিয়ার ইসলামী সরকার নাম গ্রুপ গঠন করেছিল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আল কায়দার অনুগত এ দু’টি গ্রুপের মধ্যকার মতবিরোধের জের ধরে তাদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। একদিকে অভ্যন্তরীণ গোলযোগ অন্যদিকে সিরিয়ার সেনাবাহিনীর কাছে পরাজিত হওয়ায় এ দু’টি গ্রুপের বহু সদস্য সিরিয়া যুদ্ধ থেকে নিজেদেরকে গুটিয়ে নিয়েছে। অর্থাত তারা আর যুদ্ধ করতে প্রস্তুত নয়।
যাহোক, সিরিয়ায় আন নুসরা ফ্রন্টকে আলাদা হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আল কায়দা নেতা আইমান আল জাওয়াহেরির নির্দেশের পর আল বাগদাদি এ নির্দেশ মানবেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ আল বাগদাদির সঙ্গে সৌদি আরব সরকার ও দেশটির গোয়েন্দা বিভাগের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। যুদ্ধের ময়দানে সিরিয়ার সেনাবাহিনী একের পর এক বিজয়ী হওয়ায় এবং সন্ত্রাসীদের মধ্যে মতবিরোধ তীব্রতর হওয়ায় সিরিয়া যুদ্ধে তারা এখন পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে। পাশ্চাত্যসহ কয়েকটি আরব দেশ সিরিয়ার সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করায় গত তিন বছর ধরে সিরিয়ার জনগণকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এদিকে, সৌদি আরব সিরিয়ার বিদ্রোহীদেরকে আরো সহযোগিতার জন্য তাদেরকে নতুন করে অস্ত্র দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সৌদি আরব সিরিয়ার সন্ত্রাসীদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেয়াসহ তাদেরকে সজ্জিত করে তোলার পেছনে এ পর্যন্ত বহু অর্থ ব্যয় করেছে। এ ভাবে দেশটি সিরিয়ার সরকার উতখাতের চেষ্টা চালিয়ে আসছে।
সূত্রঃ রেডিও তেহরান
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন