তালেবানের সঙ্গে পাকিস্তান সরকারের শান্তি প্রক্রিয়ার ভবিষ্যত

তালেবানের সঙ্গে পাকিস্তান সরকারের শান্তি প্রক্রিয়ার ভবিষ্যত


শান্তির পথে আপাতত প্রধান সমস্যা এই ড্রোন হামলা
পাকিস্তানের নয়া তালেবান নেতা মোল্লা ফজলুল্লাহ সেদেশের সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। গতকাল তেহরিকে তালেবান পাকিস্তান বা টিটিপি’র প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি এই অস্বীকৃতি জানান। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, উপজাতীয় এলাকাগুলোতে মার্কিন ড্রোন হামলা অব্যাহত থাকার একই সময়ে শান্তি আলোচনায় বসার কোনো অর্থ হয় না।

টিটিপি প্রধানের দায়িত্ব নেয়ার আগে ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত মোল্লা ফজলুল্লাহ সোয়াত উপত্যকার তালেবান প্রধান ছিলেন। তালেবান পরিষদের বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে তিনি নতুন এই দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

গত শুক্রবার টিটিপি’র সাবেক প্রধান হাকিমুল্লাহ মেহসুদ মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হবার পর তার স্থলাভিষিক্ত নির্বাচন করা হয়। ওই হামলার কারণে ইসলামাবাদ সরকারের সঙ্গে তালেবানদের শান্তি আলোচনাও বিঘ্নিত হবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত জুন মাসে নওয়াজ শরিফ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর তালেবানরা আশা করেছিল, হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে উপজাতীয় এলাকায় ড্রোন হামলা বন্ধ করার ব্যাপারে তিনি পদক্ষেপ নেবেন। শান্তি আলোচনার ব্যাপারে তালেবানদের পক্ষ থেকে পূর্বশর্ত হিসেবে ড্রোন হামলা বন্ধের কথা বলা হয়েছিল। সম্প্রতি নওয়াজ শরিফ যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাতে ড্রোন হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানান। কিন্তু পাক প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর উপজাতীয় এলাকায় আবারো ড্রোন হামলা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা ইসলামাবাদের আহ্বানে সাড়া দেয়নি।

এদিকে পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের দৃষ্টিতে তাদের উপজাতীয় এলাকাগুলোতে ড্রোন হামলার ঘটনা দেশটির সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন। তাছাড়া টিটিপি নেতা মেহসুদকে এমন সময়ে হত্যা করা হলো যখন নানা কারণে পাকিস্তানের সময় ভালো যাচ্ছে না। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, পাকিস্তান সরকার গত কয়েক মাস ধরে শান্তি আলোচনার একটা ক্ষেত্র তৈরি করেছিল। তালেবানের সাবেক নেতা মেহসুদের সঙ্গে আলোচনা একটা পর্যায়ে উন্নীত হয়েছিল। এমনকি তারা এই লক্ষ্যে তালেবান নেতা মোল্লা আব্দুল গনি বারাদারকেও মুক্তি দিয়েছিল। মেহসুদের সঙ্গে তালেবানদের বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল। সে কারণে শান্তি আলোচনা সফল হবার সম্ভাবনাই ছিল বেশি। ওই আলোচনার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল।

কিন্তু মেহসুদকে হত্যা করার ফলে স্বাভাবিকভাবেই তালেবানদের সঙ্গে এখন শান্তি আলোচনার পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন তালেবান নেতা দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। তাদের ভেতর ক্ষোভ বিরাজ করছে। যে ড্রোন হামলা বন্ধ করাকে তারা শান্তি আলোচনার পূর্বশর্ত দিয়েছিল সেই ড্রোন হামলাতেই তাদের নেতা মারা গেছেন। সব মিলিয়ে আলোচনা প্রক্রিয়াটি এখন জটিল হয়ে পড়েছে।

অবশ্য কেবল পাকিস্তান সরকারই ড্রোন হামলা চালিয়ে মেহসুদকে হত্যার বিরোধিতা করছে না বরং আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইও ওই ড্রোন হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন. মেহসুদের মৃত্যুর ঘটনা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার চলমান প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন সৃষ্টি করবে না। সেইসঙ্গে তিনি আফগানিস্তানে এই ঘটনার নেতিবাচক প্রভাবের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তালেবানরা এখন পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে আলোচনা প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার পাশাপাশি সেদেশের বিভিন্ন শহরে সহিংস ঘটনা বাড়িয়ে দেয় কি-না, সে ব্যাপারে বিশেষজ্ঞমহল এখন শঙ্কিত।
সূত্রঃ রেডিও তেহরান

 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন