ইরাকে সহিংসতার পেছনে প্রশাসনের বিভিন্ন মহলের হাত রয়েছে
ইরাকে সহিংসতার পেছনে প্রশাসনের বিভিন্ন মহলের হাত রয়েছে
ইরাকে বিভিন্ন সাক্ষ্য-প্রমাণে দেখা গেছে, সম্প্রতি ব্যাপক সন্ত্রাসী হামলায় যে হাজার হাজার নিরীহ মানুষ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে তার পেছনে প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা কিছু ব্যক্তির হাত রয়েছে।
ইরাকের নিরাপত্তা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে দেশটির ইসলামী উচ্চ পরিষদের দফতর থেকে বলা হয়েছে, গত তিন দিনে ব্যাপক অভিযান চালিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ৩৫ কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে যাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী নুরি আল-মালিকি সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান পরিকল্পনার অভিযোগ রয়েছে। যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে গোপন সম্পর্ক, জাল পরিচয়পত্র ব্যবহার এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত দলের সঙ্গে তাদের যোগাযোগের অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
গত প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে ইরাকের জনগণ চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। প্রথমে মার্কিন সামরিক হামলায় ইরাকে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি ও বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এরপর বাইরের মদদপুষ্ট কয়েকটি নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ও উগ্র গোষ্ঠীগুলো ইরাকের জনগণকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে এবং প্রায় প্রতিদিনই সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে নিরীহ মানুষ হত্যা করছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, ইরাকে মার্কিন সামরিক হামলার পর এবং কয়েকটি আরব দেশ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে পৃষ্ঠপোষকতা করায় ইরাক সন্ত্রাসীদের জন্য অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।
২০১১ সালের শেষের দিকে ইরাকের একটি আদালত সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট তারেক আল হাশেমির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার পর সেদেশে নিরাপত্তাহীনতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টিতে অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন মহলের হাত থাকার বিষয়টি ফাঁশ হতে থাকে। ভাইস প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির দুই বছর পর এটা সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ইরাকের ভেতরে কয়েকটি দল ও কোনো কোনো ব্যক্তি সৌদি আরব, কাতারসহ আরো কয়েকটি দেশের সহযোগিতায় ইরাক জুড়ে ব্যাপক নৈরাজ্য সৃষ্টি করে চলেছে এবং এখন তারা ইরাক সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্র করছে।
প্রধানমন্ত্রী নুরি আল-মালিকি সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান চেষ্টার দায়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের যে ৩৫জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তা সরকারের জন্য নতুন কিছু নয় এবং এতে অবাক হওয়ারও কিছু নেই। এসব ব্যক্তি ও গোষ্ঠী জাতীয় স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থকে প্রাধান্য দিচ্ছে। তারা নিজ দেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর ধর্ম বিশ্বাস ও নীতি আদর্শের সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতা করছে এমনকি জনগণের জান-মাল নিয়েও তারা ছিনিমিনি খেলছে। এসব বিশ্বাসঘাতক ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইরাকের বিভিন্ন এলাকায় নিরাপত্তাহীনতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য সৌদি আরব ও কাতার থেকে অর্থসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। ইরাকে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী এসব মহল শুধুমাত্র ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার এবং ইরাকের নতুন শাসন ব্যবস্থা ও সাদ্দামের পতনকে মেনে নিতে না পারার কারণে বিশ্বাস ঘাতকতায় লিপ্ত। ইরাকের কয়েকটি রাজনৈতিক দল বিশেষ করে সুন্নি সংগঠন ও সাবেক শাসক সাদ্দামের সমর্থক নিষিদ্ধ ঘোষিত বাথ পার্টির সমর্থকরা দেশটির রাজনৈতিক কাঠামোয় পরিবর্তনের বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি।
অবশ্য ইরাকের সুন্নি মুসলমানরা গত কয়েক বছর ধরে ইরাকের বর্তমান রাজনৈতিক কাঠামোয় অংশ নিয়েছে এবং তারা কেউই সাম্প্রদায়িক নয়। ইরাকের সুন্নি মুসলমানরা সাম্প্রদায়িক স্বার্থের চেয়ে জাতীয় স্বার্থকেই প্রধান্য দেয়। বাস্তবতা হচ্ছে, ইরাকের প্রশাসনে এখনো সাবেক সাদ্দামের অনুগত কর্মকর্তারা বহাল থাকায় নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হওয়া ছাড়াও সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার মত ঘটনাও ঘটছে।
সূত্রঃ রেডিও তেহরান
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন