নওয়াজ শরীফের করাচি সফর: সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার হুমকি

নওয়াজ শরীফের করাচি সফর: সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার হুমকি


পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ সন্ত্রাসবাদ দমন ও দেশে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও এখন তিনি দুই ধরনের বিপদের সম্মুখীন। একদিকে তিনি অভ্যন্তরীণ সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদের মুখোমুখি এবং অন্যদিকে অব্যাহত মার্কিন ড্রোন হামলায় রয়েছেন বেশ বেকায়দা অবস্থায়।

পাক প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার সিন্ধু প্রদেশের রাজধানী করাচির নিরাপত্তা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার জন্য ওই শহর সফর করেছেন। এ সফরকালে তিনি বলেছেন, পহেলা নভেম্বর উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় মার্কিন ড্রোন হামলায় তেহরিকে তালেবান পাকিস্তান বা টিটিপি নেতা হাকিমুল্লাহ মেহসুদ নিহত হওয়ায় তিনি তালেবানের সঙ্গে শান্তি আলোচনার যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন তার ক্ষতি হয়েছে।

টিটিপি’র নয়া প্রধান মোল্লা ফজলুল্লাহ ঘোষণা করেছেন, তারা সরকারের সঙ্গে আলোচনায় তো বসবেনই না উল্টো হাকিমুল্লাহ মেহসুদকে হত্যার প্রতিশোধ নেবেন। তার এ ঘোষণা পাকিস্তান সরকারকে ভাবিয়ে তুলেছে। পাক প্রধানমন্ত্রী তালেবানের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরুর যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন মার্কিন ড্রোন হামলার ফলে তা ভেস্তে যাওয়ায় বোঝা যায়, আমেরিকা চায় না পাকিস্তানে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হোক।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আমেরিকা পাকিস্তানের তেহরিকে তালেবান নেতাকে হত্যা করে এবং সরকারের সঙ্গে তালেবানের শান্তি আলোচনা বানচাল করে দিয়ে কার্যত আফগানিস্তানের শান্তি প্রক্রিয়াকেও হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। আফগানিস্তানের শান্তি পরিষদের মুখপাত্র বলেছেন,তেহরিকে তালেবান পাকিস্তান আলোচনা থেকে সরে গেলে আফগানিস্তানে তালেবানদের কার্যক্রমের ওপরও এর প্রভাব পড়বে। তালেবানদেরকে আলোচনার টেবিলে বসতে উতসাহিত করার জন্য আফগান শান্তি পরিষদ ও পাকিস্তান সরকার সম্প্রতি ব্যাপক চেষ্টা চালিয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত তারা সফলও হয়েছিল। কিন্তু মার্কিন ড্রোন হামলায় হাকিমুল্লাহ মেহসুদ নিহত হওয়ায় সরকারের সব চেষ্টা আপাতত ব্যর্থ হয়ে গেছে। এ ব্যর্থতার অর্থ হচ্ছে, পাকিস্তানে উগ্র ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর হামলা আরো জোরদার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ধারনা করা হচ্ছে, পাকিস্তানের করাচি, পেশোয়ার ও লাহোর শহরে উগ্র গোষ্ঠীগুলো আবার সন্ত্রাসী হামলা শুরু করতে পারে।

এদিকে, শোকাবহ মহররম উপলক্ষে সন্ত্রাসী হামলার ব্যাপারে পাকিস্তানের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল সরকারকে সতর্ক করে দেয়া সত্ত্বেও আজ শনিবার পাঞ্জাব প্রদেশের দু’টি ইমামবাড়িতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে চারজন নিহত হয়েছে। সন্ত্রাসীরা আজ খুব ভোরে ফজরের আজানের পরপরই এ হামলা চালায়। প্রথম হামলাটি হয়েছে মুমেন পুরা এলাকায় অবস্থিত ‘কাসর্‌ আবু তালেব’ ইমামবাড়িতে। ওই হামলায় একজন ইমামসহ অপর দুই জন নিহত হয়েছে। এ ছাড়া, শাহরুখ এলাকার আরেকটি ইমামবাড়িতে অপর এক সন্ত্রাসী হামলায় সেখানকার মুয়াজ্জিন নিহত হয়েছেন। ওই সন্ত্রাসী হামলার পর পাঞ্জাব প্রদেশের জনগণ বিক্ষোভ প্রদর্শন করে শোকাবহ আশুরা উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা এবং দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

এদিকে, মার্কিন ড্রোন হামলায় নিরীহ মানুষ হত্যার প্রতিবাদে ইসলামাবাদ পেশোয়ার, করাচি ও লাহোরসহ অন্যান্য শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা মার্কিন বিরোধী শ্লোগান দিয়ে আমেরিকার পতাকায় আগুন দিয়েছেন।

যাই হোক, পাকিস্তানের করাচি শহরে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের সফর এবং নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় তার ব্যাপক গুরুত্বারোপ করা থেকে বোঝা যায়, অর্থনৈতিক দিক দিয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই শহরের নিরাপত্তা নিয়ে তিনি খুবই চিন্তিত। কিন্তু পাকিস্তানের জনগণ মনে করে, সেদেশে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করতে হলে সরকার, সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বিভাগকে আমেরিকা ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। এক্ষেত্রে দুর্বল অবস্থান নিলে কোনো সুফল পাওয়া যাবে না।
সূত্রঃ রেডিও তেহরান

 


 

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন