হজরত ফাতিমা সুগরার চিঠি

ইমাম হুসাইন (আ.) এক কন্যার নাম ছিল ফাতিমা সুগরা। যখন ইমাম হুসাইন (আ.) মদীনা থেকে বিদায় নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন ফাতিমা সুগরা মদীনাতে একা থেকে যান।

হজরত ফাতিমা সুগরার চিঠি

ইমাম হুসাইন, ফাতিমা সুগরা, মদীনা, আলী, রোবাব, আলী আসগার, উম্মুল মুমিনিন, উম্মে সালামা, ফাতিমা যাহরা, কারবালা, সকিনা, রুকাইয়া
ইমাম হুসাইন (আ.) এক কন্যার নাম ছিল ফাতিমা সুগরা। যখন ইমাম হুসাইন (আ.) মদীনা থেকে বিদায় নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন ফাতিমা সুগরা মদীনাতে একা থেকে যান।
যখন ফাতিমা সুগরা দেখলেন যে তার বাবা হুসাইন (আ.) তাকে একা রেখে ঘোড়াতে সাওয়ার হচ্ছেন তখন তিনি বাবাকে বলেন হে বাবা! কেন আপনি আমাকে একা ছেড়ে যাচ্ছেন? তখন ইমাম হুসাইন (আ.) ঘোড়া থেকে নেমে এসে বলেনঃ হে ফাতিমা সুগরা! তুমি অসুস্থ আর আমি এক অজানা ঠিকানার দিকে রওনা হচ্ছি এ সফরের সহ্য ক্ষমতা তোমার মধ্যে নাই তাই তোমাকে এই মদীনাতে ছেড়ে যাচ্ছি। যদি কোন উপযুক্ত ঠিকানা পাই তাহলে তোমাকে চাচা আব্বাস এবং ভাই আলী আকবরের মাধ্যমে আমার কাছে ডেকে নিব। তখন ফাতিমা সুগরা বলেনঃ আমার মন বলছে যে, এর পরে হয়তো আপনার সাথে আমার আর দেখা হবে না তাই আামাকে অনুমতি দেন যে, আমি যেন আমার ফুফু এবং বোনদের সাথে বিদায় নিয়ে নেই।
ইমাম হুসাইন (আ.)তাকে অনুমতি দিলে তিনি তার ফুফু ও বোনদের কাছে যান এবং তাদের কাছ থেকে বিদায় নেন এবং যখন তিনি আলী আসগারের মা রোবাবের কাছে আসেন এবং তার কাছ থেকে বিদায় নেন এবং ছোট ভাই আলী আসগারকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরেনে এবং তাকে আদর করেন এবং অন্যান্য সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তিনি ঘরের দিকে ফিরে যান।
ইমাম হুসাইন (আ.) ফাতিমা সুগরাকে মদীনায় উম্মুল মুমিনিন উম্মে সালামার কাছে রেখে যান। তিনি প্রত্যেক দিন অশান্ত এবং অস্থির অবস্থায় বাড়ির উঠানে দৌড়ে আসতেন এবং দেখতেন যে তার বাবা তার জন্য কোন খবর পাঠিয়েছে কি না। বেশ অনেক দিন অতিবাহিত হওয়ার পরেও যখন তার বাবার কোন খবর তিনি পাননি, তখন তিনি তার দাদী ফাতিমা যাহরা (সা.আ.) এর ন্যায় ঘরের কোণায় বসে সারাক্ষণ ক্রন্দন করতেন। একবার তিনি তার বাবাকে তার অবস্থার কথা জানিয়ে চিঠি লিখার মনস্থির করলেন।
যখন তিনি চিঠি লিখছিলেন এবং ক্রন্দন করছিলেন তখন একজন আরবী বেদুঈন সেখান থেকে অতিক্রম করছিল। তখন সে ফাতিমা সুগরার ক্রন্দনের শব্দ শুনতে পায়, সে তার উদ্দেশ্যে সালাম জানিয়ে বলেঃ হে নবী পরিবার আপনাদের উপরে শান্তি বর্ষিত হোক, আমি একজন আরব বেদুঈন। আমি যাচ্ছি কারবালাতে যুদ্ধ করতে যদি আপনার কোন আরজী থাকে তাহলে আমাকে বলতে পারেন হয়তো আমি আপনার কোন উপকারে আসতে পারি।
তখন ফাতিমা সুগরা অসুস্থ অবস্থায় দরজায় আসে এবং তার সালামের উত্তর দেয় এবং বলেঃ আমার বাবা কারবালার দিকে গেছে এবং আমি আমার বাবার কাছ থেকে দূরে থাকার কারণে আরো বেশী অসুস্থ হয়ে গেছি এবং আমি একজন বার্তা বাহকের অপেক্ষায় আছি যদি কোন বার্তা বাহক কারবালার উদ্দেশ্যে যায় তাহলে আমি তার মাধ্যমে আমার বাবার কাছে আমার অবস্থার কথা লিখে পাঠাব। যদি তুমি আমার এই চিঠিটি নিয়ে যাও তাহলে আমি তোমার জন্য দোয়া করবো।
আরবের সেই বেদুঈন ফাতিমা সুগরার চিঠিটি নিয়ে কারবালার উদ্দেশ্যে রওনা হয় এবং ১০ই মহরম ইমাম হুসাইন (আ.) এর খেদমতে উপস্থিত হয় এবং ফাতিমা সুগরার সেই দুঃখভারাক্রান্ত চিঠিটি ইমাম হুসাইন (আ.) কে দেয়। ইমাম হুসাইন (আ.) কাসীদের কাছ থেকে তার আদরের দুলালী ফাতিমা সুগরার চিঠিটি নিয়ে খুলে পড়েন এবং অঝরে ক্রন্দন করতে থাকেন এবং তার আহলে বাইত কে ডেকে বলেনঃ হে জয়নাব! হে উম্মে কুলসুম! হে সকিনা! হে রুকাইয়া! আস দেখ মদীনা থেকে চিঠি এসেছে। তখন হজরত জয়নাব (সা.আ.) আসেন এবং বলেন হে ভাই দয়া করে আমাকে উক্ত চিঠির বিষয়বস্তু সম্পর্কে অবগত করুন। তখন ইমাম হুসাইন (আ.) বলেন উক্ত চিঠিটি হচ্ছে ফাতিমা সুগরার, সে তার চাচাকে সালাম জানিয়েছে কিন্তু সে জানে না যে, তার চাচা দুই হাত কাটা অবস্থায় ফুরাতের কিনারে শহীদ হয়ে গেছে, সে তার ভাই আলী আকবরকে সালাম জানিয়েছে কিন্তু সে জানেনা যে তার ভাই শত্রুদের তরবারির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে মারা গেছে, সে তার ছোট ভাইকে আদর বলেছে কিন্তু সে জানে না যে, তার ভাই আলী আসগার গলায় তীর মেরে তাকে শহীদ করা হয়েছে।
পরে উক্ত আরবী বেদুঈন সম্পর্কে আর কোন কোন কথা ইতিহাসে উল্লেখ করা হয়নি যে সে উক্ত যুদ্ধে ইমাম হুসাইন (আ.) এর পক্ষে অংশগ্রহণ করে শহীদ নাকি ফিরে যায়?
সূত্রঃ
- মাখযানুল বুকা, পৃষ্ঠা ২৪০।
- বুকাউল হুসাইন (আ.), পৃষ্ঠা ২৯২-২৯৪।

নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন