আমেরিকার সঙ্গে সৌদি আরবের কোনো বিরোধ নেই: কেরি
আমেরিকার সঙ্গে সৌদি আরবের কোনো বিরোধ নেই: কেরি
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি মধ্যপ্রাচ্য সফরের অংশ হিসেবে এখন সৌদি আরব সফর করছেন। সৌদি আরবের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক উন্নয়ন করাই তার এ সফরের উদ্দেশ্য বলে জানানো হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেছেন, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ভিত্তিতে ওয়াশিংটন-রিয়াদ সম্পর্ক স্বাভাবিক গতিতে চলা উচিত। সিরিয়া ইস্যুতে রিয়াদ-ওয়াশিংটন সম্পর্কে উত্তেজনা কমিয়ে আনাই তার সৌদি আরব সফরের উদ্দেশ্য বলে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন। জন কেরি সিরিয়া বিষয়ে দু’দেশের সম্পর্কে উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ার কথা উল্লেখ করে দু’দেশের মধ্যেকার মতবিরোধকে কৌশলগত বিরোধ হিসেবে অভিহিত করেছেন। একই সঙ্গে তিনি এও বলেছেন, আমেরিকা ও সৌদি আরবের মধ্যে কোনো মতবিরোধ নেই। জন কেরি আরো বলেছেন, সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তন করাই আমেরিকার প্রধান উদ্দেশ্য। তিনি সৌদি রাজা আব্দুল্লাহর সঙ্গে দেখা করার আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৌদ আল ফয়সালের সঙ্গেও সাক্ষাত করেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেছেন, সৌদি আরবের সঙ্গে তার দেশের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ ও মিশরে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে জটিলতাসহ আরো বহু সমস্যায় জর্জরিত গোটা মধ্যপ্রাচ্য। এ অবস্থায় ওয়াশিংটন-রিয়াদ সম্পর্ক খুবই জরুরী বলে তিনি মন্তব্য করেন। সিরিয়াকে কেন্দ্র করে এমন সময় আমেরিকা ও সৌদি আরবের মধ্যে মতবিরোধের কথা শোনা যাচ্ছে যখন কিছুদিন আগে এ দু’টি দেশ সিরিয়া ইস্যুতে একই নীতি পোষণ করে আসছিল।
সিরিয়ায় সংকট শুরু ও গৃহযুদ্ধ বাধার প্রথম থেকেই পাশ্চাত্য ও তাদের আরব মিত্র দেশগুলো সিরিয়ার সশস্ত্র বিদ্রোহীদেরকে ব্যাপক সহযোগিতা দেয়। আমেরিকাসহ পাশ্চাত্যের দেশগুলো এবং সৌদি আরব, তুরস্ক ও কাতার সিরিয়ার সন্ত্রাসীদেরকে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করে। আমেরিকা ও সৌদি আরব যে কোনো মূল্যে সিরিয়া সরকারের পতন ঘটানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে সিরিয়া প্রসঙ্গে সৌদি আরব ও আমেরিকার নীতিতে পরিবর্তনের আভাস ও মতপার্থক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা গত আগস্টে সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অজুহাতে সেদেশে হামলা চালাতে উদ্যত হয়েছিল। সৌদি আরবও আমেরিকার এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানায়। এমন কি সৌদি কর্মকর্তারা সিরিয়া সরকারের পতন আসন্ন মনে করে যতদ্রুত সম্ভব হামলা চালানোর জন্য আমেরিকার ওপর চাপ দিতে থাকে। কিন্তু ব্রিটেনসহ আমেরিকার মিত্র দেশগুলো এবং আন্তর্জাতিক সমাজ এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরেও তীব্র বিরোধিতার কারণে প্রেসিডেন্ট ওবামা সিরিয়া হামলা চালানোর পরিকল্পনা থেকে শেষ পর্যন্ত সরে আসেন। এ ছাড়া, রাশিয়া সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংসের প্রস্তাব তুলে ধরায় এবং সিরিয়া সরকারও তা মেনে নেয়ায় যুদ্ধের আশঙ্কা একেবারেই স্তিমিত হয়ে পড়ে। প্রেসিডেন্ট ওবামা সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংসের ব্যাপারে রুশ প্রস্তাব মেনে নেয়া ছাড়াও রাজনৈতিক উপায়ে সিরিয়া সমস্যা সমাধানের জন্য জেনেভা-দুই সম্মেলনে অংশ নিতেও রাজি হয়ে যান।
কিন্তু রুশ-মার্কিন সমঝোতা সৌদি আরবকে বেকায়দায় ফেলে দেয়। বিশেষ করে সৌদি গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান বন্দর বিন সুলতান সিরিয়া বিষয়ে রুশ-মার্কিন সমঝোতায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ও অসন্তোষ ব্যক্ত করেন। এ কারণে সৌদি আরব আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক কমিয়ে আনার হুমকি দিয়েছিল। তাই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর রিয়াদ সফরের পর সৌদি আরব তাদের হুমকি বাস্তবায়ন করবে কিনা সেটাই এখন সবার প্রশ্ন। নিঃসন্দেহে এ প্রশ্নের উত্তর হবে নেতিবাচক। কারণ সৌদি আরব যত কথাই বলুক তাদের নিরাপত্তা বিদেশি বাহিনীর ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে মোতায়েন বিদেশি সেনাদের ওপর।
এ ছাড়া, বর্তমানে সৌদি আরবের অভ্যন্তরে জনগণ সরকারের ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ এবং প্রতিদিনই সেখানে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ হচ্ছে। গত দুই বছর ধরে চলে আসা অসন্তোষ সৌদি সরকারের জন্য বিরাট চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় সৌদি আরব মুখে যাই বলুক আমেরিকার মত গুরুত্বপূর্ণ মিত্রকে হাত ছাড়া করতে চাইবে না এটাই স্বাভাবিক।
সূত্রঃ রেডিও তেহরান
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন