ইরানের জনগণ অধিকার রক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ: প্রেসিডেন্ট রুহানি
ইরানের জনগণ অধিকার রক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ: প্রেসিডেন্ট রুহানি
ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি বলেছেন, তার দেশের জনগণ যেমন সংলাপে বিশ্বাসী তেমনি ন্যায়সঙ্গত অধিকার রক্ষায়ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি রোববার তেহরানে এক সংবাদ সম্মেলনে ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের পরমাণু আলোচনার প্রতি সমর্থন জানানোয় ইরানের সর্বোচ্চ নেতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, তার সরকার সব দেশকে সঙ্গে নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভূমিকা পালনের চেষ্টা করছে। কারণ কোণঠাসা অবস্থায় নয় বরং সংলাপ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই বিজয় অর্জন সম্ভব।
প্রেসিডেন্ট রুহানি ছয় জাতিগোষ্ঠীকে ইরানের সঙ্গে পরমাণু আলোচনায় আন্তরিক হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, তেহরানের বিরুদ্ধে বিদ্বেষী নীতি অতীতে উদ্বেগের কারণ ছিল এবং ইরানের জনগণ সবসময়ই এর নিন্দা জানায়।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফও রোববার তেহরানে অষ্ট্রিয়ার পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে আলোচনায় আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা বা আই.এ.ই.এ এবং ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের আলোচনার কথা উল্লেখ করে বলেন, ইরানের সরকার ও জনগণ আশা করে পাশ্চাত্য তাদের আচরণে পরিবর্তন আনবে। তিনি বলেন, ইরানের ব্যাপারে মার্কিন নীতিতে অবশ্যই পরিবর্তন আনতে হবে এবং তাদের এটা মনে রাখতে হবে, ইরান একটি প্রাচীন সভ্যতার দেশ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের ব্যাপারে মার্কিন নীতি কেমন হবে তা নিয়ে ঘোর সংশয় রয়েছে এবং মার্কিন কর্মকর্তাদের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য এ সন্দেহকে আরো জোরদার করেছে। ছয় জাতিগোষ্ঠীতে আমেরিকার পরমাণু আলোচক উইন্ডি শেরম্যান একটি ইসরাইলি টিভি চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেছেন, ইরানের সঙ্গে আলোচনায় নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার কোনো প্রতিশ্রুতি আমেরিকা দেয়নি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিও গতকাল কায়রোয় দাবি করেছেন, ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে সব দেশকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য আমেরিকা চেষ্টা চালিয়ে যাবে। অথচ আইএইএ’র মহাপরিচালক ইউকিয়া আমানো ওয়াশিংটনে একটি গবেষণা কেন্দ্রে দেয়া ভাষণে বলেছেন, আইএইএ’র মানদণ্ডের ভিত্তিতে ইরান পরমাণু স্থাপনা ও সরঞ্জামাদি গড়ে তুলেছে। তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুযায়ী ইরানের পরমাণু কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে।
এর আগে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা মার্কিন দূতাবাস দখলের বার্ষিকীর প্রাক্কালে দেয়া ভাষণে বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেছেন, আমেরিকার অতীত কর্মকাণ্ড ও আচরণে প্রমাণিত হয়েছে, বিদ্বেষী নীতি চরিতার্থ করার জন্য তারা ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে কেবল অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে। তিনি ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের পরমাণু আলোচক দল ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি সমর্থন জানান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের সব সমস্যার মূলে রয়েছে মার্কিন কর্মকর্তাদের কথা ও কাজে মিল না থাকার বিষয়টি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা ইউরোপকে সঙ্গে নিয়ে ইরানের ওপর একতরফা নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দিয়ে দেশটির শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছেন। বর্তমানে তিনি ইরান বিদ্বেষী নীতি বজায় রাখার পাশাপাশি আলোচনার কথাও বলেছেন। এ অবস্থায় আমেরিকাকে আন্তরিকতা প্রমাণের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ইরানের অধিকারের প্রতি সম্মান দেখানোর পাশাপাশি দেশটির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে। ইরানের প্রেসিডেন্টও তার বক্তব্যে ঠিক এ বিষয়টির ওপরই গুরুত্বারোপ করেছেন।
সূত্রঃ রেডিও তেহরান
নতুন কমেন্ট যুক্ত করুন